চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা, আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়, ১০২ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আর এই সময়ে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে লালমনিরহাটেÑ মাত্র ১৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে বরাবরের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। আর রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা বিভাগেÑ প্রায় ৫৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম (২৪.১৩ শতাংশ), সিলেট (৭.৮৬ শতাংশ), খুলনা (৩.৮৪ শতাংশ), রাজশাহী (৩.১১ শতাংশ) ও বরিশাল (৩.১১ শতাংশ) বিভাগ।
আর সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় আসা দুই বিভাগ হলোÑ ময়মনসিংহ (১.৭১ শতাংশ) ও রংপুর (১.২৮ শতাংশ)।
গত বছরের জুলাইয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেন। পরে রাজনৈতিক পরিবর্তনে ফের বাড়তে থাকে রেমিট্যান্স প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে পাঠানো এই অর্থ সরাসরি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের নানা উদ্যোগ, রেমিট্যান্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা এবং ব্যাংকিং সেবার উন্নয়নের কারণে এই ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অঙ্ক এক অর্থবছরে দেশে আসা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয়ের এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও ডলারের জোগানে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলোতে যে পরিমাণ আয় আসছে, তার চেয়ে বেশি আসার কথা। কিন্তু অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়ে গেছেন, সে কারণে তা হচ্ছে না। তারা বরং উলটো দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন এবং এতে অর্থ পাচার বাড়ছে। গত বছরের বেশির ভাগ সময়ে প্রবাসী আয় পরিস্থিতি খুব বেশি ভালো ছিল না।
আয়ে শীর্ষ পাঁচ জেলা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়। এরপর রয়েছে যথাক্রমেÑ চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ঢাকা জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে ১০২ কোটি ৭২ লাখ ডলার, চট্টগ্রামে ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, কুমিল্লা জেলায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার, সিলেটে ১০ কোটি ২৬ লাখ এবং নোয়াখালী জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
কম আয় যেসব জেলায়
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। এই জেলায় জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়ে একেবারে শেষ দিকে থাকা অপর চারটি জেলা হলোÑ রাঙামাটি, বান্দরবান, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। গত জুলাই মাসে রাঙামাটি জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে ১৭ লাখ ডলার, বান্দরবান জেলায় ১৭ লাখ ডলার, পঞ্চগড় জেলায় ১৮ লাখ ডলার এবং ঠাকুরগাঁও জেলায় লাখ ডলার।
সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কুমিল্লা জেলায়
দেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কুমিল্লা জেলায়। দীর্ঘকাল ধরে প্রবাসীর সংখ্যায় এগিয়ে থাকা কুমিল্লা জাতীয় অর্থনীতি ও স্থানীয় অর্থ সম্প্রসারণে অসামান্য অবদান রাখছে। কুমিল্লার অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা রয়েছে। কুমিল্লার প্রবাসীদের একটি বড় অংশ আছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, কুয়েত, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, অর্থবছরের ১১ মাসে কুমিল্লা জেলা থেকে বিদেশে গেছেন ৮৫ হাজার ১৮০ জন।