ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

কৃষকদের ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে ব্যাংক

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ১১:২৮ পিএম

দেশে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৩৯ হাজার কোটি টাকার কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যা এ বছর ২.৬৩ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নতুন কৃষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় ডেপুটি গভর্নরবৃন্দ, বিএফআইইউ প্রধান, চিফ ইকোনমিস্ট, নির্বাহী পরিচালকসহ তপশিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগের অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকদের সহায়তা নিশ্চিত করতে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য।

নীতিমালায় নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেÑ প্রাণিসম্পদ খাতে বরাদ্দ ২০ শতাংশ করা; সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে ২ শতাংশ বরাদ্দ; ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের সিআইবি সার্ভিস চার্জ মওকুফ; কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতা বৃদ্ধি; খিরাই, কচুর লতি, বিটরুট, কালোজিরা, আদা, রসুন, হলুদ, খেজুরের গুড় ইত্যাদি নতুন ফসল ঋণনীতিতে অন্তর্ভুক্ত এবং অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদন সম্ভাবনা অনুযায়ী ঋণ বিতরণের নির্দেশনা।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, কৃষি ও পল্লি খাতে পর্যাপ্ত ঋণ সরবরাহের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই অর্থনীতি গঠনে এই নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে মোট ঋণের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করতে হয়। কোনো ব্যাংক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে ওই ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়। অন্যদিকে কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের কৃষি ঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষিকাজ করা একটি নতুন ধারণা। বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাক-সবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয়, তা ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহের গুরুত্ব বিবেচনা করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকদের সহায়তা নিশ্চিত করতে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য।’ একই অনুষ্ঠানে কৃষি ও পল্লি ঋণ কার্যক্রম মনিটরিং ও নীতি প্রণয়নে সহায়তার জন্য ওয়েব-ভিত্তিক অ্যাগ্রি-ক্রেডিট এমআইএস সফটওয়্যার উদ্বোধন করা হয়।

গভর্নর বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের জন্য কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য ২৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেকোনো পরিমাণ কৃষি ঋণ বা বিনিয়োগের জন্য সিআইবি রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করেছে এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ও গ্রামীণ ঋণের জন্য সিআইবি রিপোর্টিং-সংক্রান্ত সার্ভিস চার্জ মওকুফ করেছে। এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পশুপালন খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে এবং সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে ২ শতাংশ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা চালু করেছে। তিনি আরও বলেন, অবস্থান ও প্রকৃত চাহিদা অনুসারে ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণের জন্য নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি বা কম ঋণ অনুমোদন করতে পারে।

ব্যাংকগুলোকে কৃষি ঋণ বিতরণ ও আদায়সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মসূচির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধকারী কৃষকদের পুরস্কৃত করা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি এবং একটি টেকসই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষি ও গ্রামীণ খাতে সময়মতো পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ অপরিহার্য।’

এসব নীতিমালা ও কর্মসূচি দেশের কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি করে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন গভর্নর।