চব্বিশের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেওয়া আন্দোলনে বিরোধিতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষক এবং ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় একই অপরাধে জড়িত ৩৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
জানা যায়, জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানের বিপরীত ভূমিকায় থাকা ইবির ১৯ জন শিক্ষক এবং ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে তা নির্ধারণে একটি শাস্তি নির্ধারণ কমিটি করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। একই অপরাধে ৩৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে পড়াশোনা শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, এবছরের ১৫ মার্চ জুলাই–আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধ ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আক্তার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন। পরে প্রত্যক্ষদর্শী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবরের ভিত্তিতে এসব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই–আগস্ট বিপ্লববিরোধী কার্যকলাপে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্তের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা হলেন- ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম, অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাশিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লু, সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জয়শ্রী সেন, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল’ বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম এবং ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান।
অভিযুক্ত ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন- প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার আলমগীর হোসেন খান, আব্দুল হান্নান, ইব্রাহীম হোসেন সোনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দপ্তরের আব্দুস সালাম সেলিম, মাসুদুর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের উকিল উদ্দিন, ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের জে. এম. ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের তোফাজ্জেল হোসেন এবং জনসংযোগ দপ্তরের আবু সিদ্দিক রোকন।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা হলেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩–১৪ শিক্ষাবর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪–১৫ শিক্ষাবর্ষের ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪–১৫ শিক্ষাবর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫–১৬ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, মার্কেটিং বিভাগের হুসাইন মজুমদার, ইংরেজি বিভাগের ফজলে রাব্বী, বাংলা বিভাগের ২০১৬–১৭ শিক্ষাবর্ষের তরিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষের শিমুল খান, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের রাফিদ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের রতন রায়, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মৃদুল রাব্বী, ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শাকিল, আইন বিভাগের কামাল হোসেন, বাংলা বিভাগের আব্দুল আলিম, লোক প্রশাসন বিভাগের আদনান আলী পাটোয়ারি, ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের লিয়াফত ইসলাম রাকিব।
এছাড়াও ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মেজবাহুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ বিভাগের অনিক কুমার, ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওন, অর্থনীতি বিভাগের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের মাজহারুল ইসলাম ও মারুফ ইসলাম, বাংলা বিভাগের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল’ বিভাগের প্রাঞ্জল, সিএসই বিভাগের নাবিল আহমেদ ইমন, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ইমামুল মুক্তাকী শিমুল; ইংরেজি বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রানা, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মনিরুল ইসলাম আসিফ এবং চারুকলা বিভাগের পিয়াস।



