ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ‘এক দশকের মধ্যে’ সর্বনিম্ন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১২:১৬ এএম

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে এক দশকের মধ্যে তলানিতে ঠেকেছে। গত জুন মাস শেষে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ঠেকেছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির টানা নিম্নমুখী প্রবণতাকে ‘একটা দুশ্চিন্তা’ হিসেবে দেখছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, দেশের অর্থনীতি বিনিয়োগের স্থবিরতা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ, রাজনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও সংকোচনশীল মুদ্রানীতির কারণেই মূলত বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, মূলধন যন্ত্রপাতির আমদানিও কমেছে। তাতে কর্মসংস্থানের ওপর একধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আমি এটাকে একটা দুশ্চিন্তা হিসেবে মনে করি। সামষ্টিক অর্থনীতিতে ‘কিছুটা স্থিতিশীলতা’ ফিরতে শুরু করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তা, সেটা এখনো কাটেনি। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছেন এই গবেষক।

মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামলে নীতি সুদহার কমানো উচিত। কারণ অর্থনীতিতে উচ্চ ঋণের সুদহারের বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বছরের প্রথম ছয় মাসের মতো জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্তও বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার রেখেছে ১০ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আভাস দিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৫ সাল থেকে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির তথ্য দেওয়া আছে।

সেই সব তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, গেল জুন মাসেই প্রবৃদ্ধি ছিল সবচেয়ে কম। দ্বিতীয় সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি ছিল গত ফেব্রুয়ারিতে; ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলছেন, উচ্চ সুদ, গ্যাসের সংকট, কঠোর নীতির মতো কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে কম ঋণ নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা এত টাকা খরচ করে মাস শেষে তো লোকসান গুণবেন না। তাই নতুন বিনিয়োগ করতে কেউ সাহস পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে বেকারের হার আরও বাড়বে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক নয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে জুলাই মাসে অস্থিরতা শুরুর পর ৫ অগাস্ট সরকারের পতন ঘটে। ওই মাস থেকেই বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে।

আন্দোলন শুরুর মাস জুলাইয়ে এই খাতে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও পরের মাস অগাস্টে তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। সেই থেকে শুরু নি¤œমুখী প্রবণতায় সেপ্টেম্বরে কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। নি¤œমুখী এই হার পরের মাস অক্টোবরে কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে। পরের মাস নভেম্বরে ঠেকে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে। ডিসেম্বরে এই হারে আরও কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।