কৃষি ঋণের আওতায় ছাগল পালনের জন্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের সুযোগ রয়েছে। একজন কৃষক বা খামারি সর্বোচ্চ ৫০টি ছাগল পালনে এই ঋণ নিতে পারবেন। সুদহার থাকবে ৪ শতাংশ। গতকাল মঙ্গলবার চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় বিভিন্ন গবাদি পশু পালনের পাশাপাশি ছাগল পালনের বিষয়েও পৃথকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ৫০টি ছাগল পালনের জন্য অনধিক ১০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া যেতে পারে। স্বল্প পরিসরে সর্বোচ্চ ৫০টি ছাগলের খামার তৈরিতে ঘর তৈরি বাবদ (এককালীন) প্রদত্ত ঋণ কৃষি ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে ৫০টির অধিক পরিমাণ ছাগলের খামার অর্থাৎ, বৃহৎ পরিসরে বা বাণিজ্যিকভাবে ছাগল উৎপাদনের অবকাঠামোগত ব্যয়ে প্রদত্ত ঋণ কৃষি ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
এ ছাড়া সুবিধাভোগী ঋণগ্রহীতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী ও প্রান্তিক খামারিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। ব্যাংক শাখাগুলো এই খাতে বিতরণকৃত ঋণের তথ্যাদি সংরক্ষণ করবে। প্রয়োজনবোধে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের চাহিদা মোতাবেক তা সরবরাহ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগের অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলাসহ কৃষি খাত নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষ ও কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের খাদ্যশস্য উৎপাদন গত পাঁচ দশকে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। বর্তমানে বিশ্বের শ্রমশক্তির প্রায় এক-চতুর্থাংশ কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান অনেক বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বৈশ্বিক মোট কৃষি উৎপাদন ও মোট শ্রমশক্তির সিংহভাগ এই অঞ্চল থেকে আসে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে কৃষি উৎপাদন এবং কৃষি ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সামনের সারিতে রয়েছে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে কৃষি ঋণ বিতরণ ও কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুসংহত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ কর্তৃক প্রণীত বার্ষিক কৃষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা এবং কর্মসূচি কৃষক, কৃষি উদ্যোক্তা এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে যথাসময়ে চাহিদা মোতাবেক ঋণ প্রবাহ পৌঁছাতে সহায়ক হবে। কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পল্লি অঞ্চলে গ্রামীণ অর্থায়নের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্যবিমোচনেও এই নীতিমালা ও কর্মসূচি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।