চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার রেকর্ড সর্বনি¤œ শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ। এই সময়ে মোট ১ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা অর্থ ছাড় হয়েছে। এর আগের অর্থবছরের জুলাই মাসে এডিপি বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছিল ২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা কম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইটে ২০০৪-২৫ অর্থবছর থেকে গত ২০ বছরের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য দেওয়া আছে। ওই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে গত অর্থবছরে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই এডিপি বাস্তবায়ন ১ শতাংশেরও কম। গতকাল সোমবার এডিপি বাস্তবায়নের এই তথ্য প্রকাশ করেছে আইএমইডি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ১৯৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়নি বললেই চলে। এ ছাড়া আন্দোলনের সময়ে বেশ কয়েক দিন কারফিউ ছিল। বছরজুড়ে একধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতাও ছিল। তারা আরও বলেন, গত বছর ক্ষমতার পট পরিবর্তনে কয়েকজন প্রকল্প পরিচালককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। এসব কারণে গত অর্থবছরে প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা পুরোটা খরচ হয়নি। ফলে চলতি অর্থবছরের শুরুতেও একই অবস্থা দেখা গেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নে সরকার কঠোর হবে জানিয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম গত জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়ন ১ শতাংশেরও কম। এখন থেকে প্রকল্পের কাজে ধীরগতির জন্য পেছনে কোনো অজুহাত মানবে না সরকার। সব মন্ত্রণালয়কে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারণে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেই চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) প্রস্তাব জমা দিতে হবে, যাতে নির্বাচিত সরকার আসার আগেই বাজেটের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা চূড়ান্ত করা যায়।
১ টাকাও খরচ করেনি ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে ১ টাকাও খরচ করতে পারেনি সরকারের ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এরমধ্যে রয়েছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কম খরচের হার চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়ার পরও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১ শতাংশ খরচ করতে পারেনি। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩৫ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা।
এর মধ্যে জুলাই মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যয় করেছে ৩৪৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ০.৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে মোট বরাদ্দের ০.৮৮ শতাংশ, সেতু বিভাগ ০.৭৪ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ০.৬৭, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ০.৫৮ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ০.৫৭ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ০.৫০ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ০.৩৮ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ০.৩৫ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয় ০.৩৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ০.১৪ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয় ০.১৩ শতাংশ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ০.০৮ শতাংশ।