বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ০৯:০৬ এএম

সরকারি ব্যাংকে ১২৫০ আবেদন - ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুযোগ 

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ০৯:০৬ এএম

সরকারি ব্যাংকে ১২৫০ আবেদন - ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুযোগ 

ব্যাংক খাতে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ২০২৪ সালে ব্যাংক খাতে ৮৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিশেষ সুবিধা নিয়ে খেলাপিরা নবায়ন করেছেন। ঋণ পুনঃতপশিলের জন্য সরকারি ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ সুযোগ নিতে ১ হাজার ২৫৩টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ আবেদন প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। এই আবেদনগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতি মাসে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া সুদ মওকুফের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আড়াই হাজার আবেদন জমা পড়েছে। ব্যাংকগুলো নিজস্ব নীতি অনুযায়ী এসব আবেদন নিষ্পত্তি করবে। মূলত করোনা মহামারি, রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তৈরি পোশাক, ভোগ্যপণ্য আমদানি, চামড়াসহ বৃহৎ শিল্প খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ঋণ পুনঃতপশিলের এই বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। 

সূত্র জানায়, দেশের বৃহত্তম করপোরেট ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানকে মাত্র ১ শতাংশ এককালীন পরিশোধের মাধ্যমে ৩০০ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পুনঃতপশিলের সুবিধা দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সুবিধার আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ১ শতাংশ এককালীন (ডাউন পেমেন্ট) দিয়ে সর্বোচ্চ তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ডে ১৫ বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেতে পারে। সর্বনি¤œ ৫০ কোটি টাকার ঋণ হলে পুনর্গঠনের আবেদনযোগ্য। কিন্তু ইচ্ছাকৃত খেলাপি কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণ পুনর্গঠনের (পুনঃতপশিল) সুযোগ পাবে না। বিষয়টি এ-সংক্রান্ত বাছাই কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ পুনঃতপশিলের এমন সুযোগ ব্যাংক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বৃদ্ধির প্রবণতাকে উসকে দিতে পারে। এ সুবিধায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ পেলেও এতে এগুলোর ক্যাশ-ম্যানেজমেন্টে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ব্যবসায়ীদের ধারণা, মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, চড়া সুদহার, করোনা মহামারি এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এই সুবিধা পেলে প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে, যার প্রভাব দেশের জনজীবনে প্রতিফলিত হবে।

এ-সংক্রান্ত বাছাই কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১ হাজার ২৫০টি আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। পুনঃতপশিলের প্রতিটি আবেদনের বিষয় ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আবার এমন অনেকে আবেদন করেছেন, যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। কিছু আবেদন আছে, যেগুলো ব্যাংক নিজেই চাইলে পুনঃতপশিল করতে পারে। আবার কেউ কেউ সুদ মওকুফের আবেদন করেছেন, যা এই কমিটির এখতিয়ারের বাইরে। এ অবস্থায় যৌক্তিক কারণে খেলাপি গ্রাহকের আবেদন বাছাই করা চ্যালেঞ্জিং বিষয়।

ঋণ পুনঃতপশিলের আবেদন করা ক্ষতিগ্রস্ত একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শত শত ব্যবসায়ী নিজের আবেদন বাছাই করাতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। দৌড়ঝাঁপের পর কমিটির সভায় তার আবেদন বাছাই হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার ঋণ পুনর্গঠন হওয়ার কথা। দুটি ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠনে এগিয়ে এলেও ঋণদাতা অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনো সাড়া দেয়নি। এ কারণে কমিটির সভায় বাছাইয়ের পরও ঋণখেলাপি পরিচয় থেকে নিষ্কৃতি মিলছে না। যত দ্রুত খেলাপিমুক্ত হওয়া যায়, তত মঙ্গল। দিন যত যাচ্ছে, বন্ধ কারখানার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ঋণ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া হয়, তবে তা দ্রুততম সময়েই হওয়া দরকার।

অন্যথায় পুনর্গঠনের সুযোগ পেলেও সেটি কোনো কাজে লাগবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণ পুনঃতপশিলের ১ হাজার ২৫০ আবেদন জমা পড়েছে। সেখান থেকে ২৫০টি বাছাই করা হয়েছে। ব্যাংক আটকে যাওয়া ঋণ সুদসহ আদায়ের চেষ্টা করে। এই আলাপ-আলোচনায় প্রায় সব ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা সুদ মওকুফের শর্ত জুড়ে দেন। গ্রাহক মনে করেন, ব্যাংক সহযোগিতা করতে চাইলে সুদ মওকুফ হয়ে যায়। পরিচালনা পর্ষদ চাইলে সুদ মওকুফ করতে পারে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি সুদ মওকুফের আড়াই হাজার আবেদন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জমা পড়েছে, যা ব্যাংক নিজের মতো করে চূড়ান্ত করবে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নির্দেশনা লাগে না।

ব্যাংকিং কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ধারা-৪৯ (চ)তে বলা হয়েছে, ‘ঋণ শৃঙ্খলার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণভাবে সকল ব্যাংক-কোম্পানি বা কোনো বিশেষ ব্যাংক-কোম্পানি বা বিশেষ শ্রেণির ব্যাংক-কোম্পানির জন্য ঋণ শ্রেণীকরণ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণ, ঋণ মওকুফ, পুনঃতপশিলীকরণ কিংবা পুনর্গঠনসংক্রান্ত বিষয়সমূহে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।’ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, দেশের স্বার্থ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতপশিলে গঠিত কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গভর্নর নিজেই সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তবে ঋণ পুনঃতপশিলের বিষয়ে পুরো কাজ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। তাদের গ্রাহক তারা ভালো করে ডিল করতে পারবে। সুদ মওকুফের বিষয়টি ব্যাংকের নিজস্ব ইস্যু।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছর ব্যাংক খাতে মোট ৮৬ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এই ঋণসহ নবায়ন করা মোট ঋণের স্থিতি গত বছর শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছর পর্যন্ত পুনরায় খেলাপি হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ। যে কারণে বিশেষ ছাড়ে নবায়ন করেই খেলাপি ঋণ কমানো যাচ্ছে না। বাকি ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার নবায়ন করা ঋণ এখনো নিয়মিত হিসাবে রয়ে গেছে। অর্থাৎ, নবায়ন করা ঋণের মধ্যে পুনরায় খেলাপি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ঋণ। নিয়মিত হিসাবে রয়েছে ৬১ দশমিক ৫৮ শতাংশ ঋণ। নবায়ন করা ঋণের মধ্যে গত বছরই সবচেয়ে বেশি খেলাপি হয়েছে। ২০২৩ সালে এই ঋণের স্থিতি ছিল ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে অর্ধেকের বেশি নবায়ন করা ঋণ গত বছর খেলাপি হয়েছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!