ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বললেন অর্থ উপদেষ্টা

আমদানি-সরবরাহ বাড়ানোর  পরও বাজারে সমস্যা থাকছে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০১:১৭ এএম

আমদানি ও সরবরাহ বাড়ানো হলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে সমস্যা থেকে যাওয়ার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর বেকারত্ব নিয়ে যা বলা হচ্ছে, অর্থ উপদেষ্টা মনে করেন তা ‘দৃষ্টি আকর্ষণের’ বলা জন্য। তবে মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থান নিয়ে সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। মূল্যস্ফীতি না কমার প্রসঙ্গ তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘আমরা যতই আমদানি করছি, সরবরাহ বাড়াচ্ছি, পাইকারি ও খুচরা বাজারে একটা সমস্যা থেকে যাচ্ছে। তারা তো অর্থনীতির যৌক্তিকতার বাইরে। তবে আমাদের এখানে সম্প্রতি খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেশ কমেছে।’

বেকারত্ব সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি এক সেমিনারে অর্থনীতিবিদদের মন্তব্যে প্রসঙ্গ টানলে উপদেষ্টা বলেন, বেকারত্ব অবশ্যই একটা সমস্যা। তবে তারা যেসব বিশেষণ ব্যবহার করছেন, তা দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। বেসরকারি খাত মন্থর হয়ে গেলে তার একটা প্রভাব তো পড়ে। কিন্তু ওনারা যে ‘ভয়াবহ মহামারি’ এসব শব্দ ব্যবহার করছেন, তা কিন্তু দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এবং দৃষ্টি আকর্ষিত হচ্ছে, এটা কিন্তু ভালো। আমরাও এসব বিষয়ে কনসার্ন আছি।’

আশার কথা শুনিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, ব্যবসাটা এখন একটু ভালোর দিকে যাচ্ছে। মাঝখানে ব্যবসা না থাকার কারণে এনবিআরর কর-রাজস্ব কমে গিয়েছিল।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কর্মসংস্থান নিয়ে আমরা অবশ্যই উদ্যোগ নিচ্ছি, লোকাল যে প্রকল্পগুলো আছে যেগুলো তাড়াতাড়ি করতে। সে লক্ষ্যে আজকে হবিগঞ্জে একটা প্রজেক্ট নিয়েছি। সেখানে হাইটেক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে না। সেখানে রাস্তাকে প্রশস্ত করবে ওখানে তো কর্মসংস্থান হবে। আমরা এরকম কিছু চেষ্টা করছি। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি দরকার।’

বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর প্রচেষ্টায় রয়েছে সরকার। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কোন ধরনের পণ্য কতটুকু আমদানি বাড়ানো হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর প্রয়োগটা কীভাবে হবে, সেটা আমরা বসে ঠিক করব।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ট্যারিফ কিছুটা বেশি হলেও তার কোয়ালিটি ভালো হবে। যেমন গম আমদানির ক্ষেত্রে, দাম কিছুটা বেশি হলেও পণ্যের কোয়ালিটি অনেক ভালো। তা ছাড়া ট্যারিফ এড়ানোর জন্য আমাদের আমদানিও করা প্রয়োজন। তবে মোটামুটি আমরা কমফোর্টেবল পজিশনে আছি। আমাদের যেখানে ৭.৮ বিলিয়ন ছিল যেখানে ভিয়েতনামের ছিল ১২৫ বিলিয়ন। সেখান থেকে আমরা মোটামুটি ভালো অবস্থায় হয়েছি। এখন বাস্তবায়নটা কী হবে, সেটা দেখার বিষয়।’

এলএনজি আমদানিতে নাকি বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোম্পানিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না, আমরা তো আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে দেখি। সেটা আমেরিকা, সৌদি আরব, চায়না, সিঙ্গাপুর হোক আমরা সব বাজার কম্পেয়ার করে করছি। এত সহজ না, আমেরিকাকে দিয়ে দেব। পিটার হাসের কোম্পানি কোনটি আমরা ভালো করে জানিও না।’

ভোক্তাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না না, ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না। আমরা তো এমনিতেই ভোক্তাদের জন্য মূল্য নিয়ে অনেকটা কাজ করেছি। টিসিবিসহ অন্যান্য বিষয়ে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি।’

সার আমদানি নিয়ে সম্প্রতি একটা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে আপনারা কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টা দেখছি। চট করে আপনে বললেন আর আমরা ব্যবস্থা নেব, বিষয়টা সেরকম না।’

তদন্ত করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বিস্তারিত জানি না, সার আনে বেশির ভাগ কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়। এটা তাদের দায়িত্ব। আমরা বিষয়টা আরও খতিয়ে দেখব।’

রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্রয় কমিটিতে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। তবে অর্থনীতির কিছু বিষয় আলোচনা হয়। আমরা অর্থনীতির দিকটা মোটামুটি কনস্যুলেট করার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্যাক্সের ব্যাপারে আমরা যতটুকু পারি ব্যবহার করছি। এদিন ক্রয় কমিটির বৈঠকে খুলনা বিভাগের জন্য ৯টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন হয়। এতে মোট খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২৫৫ কোটি টাকা। বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামতের একটি বিলও পাস হয়। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৯০১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বৈঠকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ডিএপি সার আমদানি ও এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি ইউনিট ১১ দশমিক ৮৮ ডলারে আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর থেকে কেনা হচ্ছে এক কার্গো এলএনজি।