জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দক্ষিণ এশিয়ান গেমস সামনে রেখে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনে চলছে নিবিড় অনুশীলন। জাতীয় দলের ক্যাম্পের নিয়মিত মুখ তারকা খেলোয়াড় জাভেদ আহমেদ। গত জুলাইয়ে নেপালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ টেবিল টেনিসের দক্ষিণ এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইয়ে খেলতে যাওয়ার আগে জাতীয় দলের ট্রায়ালে র্যাঙ্কিংয়ে জাভেদ হয়েছিলেন শীর্ষ বাছাই।
১২-১৪ সেপ্টেম্বর ফেডারেশন আরেকটি ট্রায়ালের আয়োজন করে। যেখানে আবারও নিজের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন জাতীয় দলের সাবেক চ্যাম্পিয়ন। জাভেদ ছাড়াও এবারের বাছাইয়ে অংশ নিয়েছেন রামহিম লিয়ন বম, মোহতাসিন হৃদয়, আবুল হাসেম হাসিব, এম কে হামজা সজীব, ইমরুল কায়েস ইমন, অন্তু হোসেন জয়, মোহাম্মদ নাফিস ইকবাল, রিফাত মাহমুদ সাব্বির ও মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান।
বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির নিয়ম অনুসারে প্রতিটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আগে জাতীয় দলের বাছাইয়ে অংশ নিতে হবে খেলোয়াড়দের। এই বাছাইয়ের সেরাদের নিয়ে গড়া হবে চূড়ান্ত দল। আগামী ১১-১৫ অক্টোবর ভারতের ভূবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত হবে ২৮তম এশিয়ান টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানেও চূড়ান্ত দলে থাকার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী জাভেদ। ভূবনেশ্বরে খেলে আসার পরই বাংলাদেশ টেবিল টেনিস দল অংশ নেবে ষষ্ঠ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে। আগামী ৭-২১ নভেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিযোগিতা। সেখানে খেলতে যাওয়ার আগেও আরেক দফা বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে জাভেদকে। কিন্তু বারবার কেন সিনিয়র খেলোয়াড়দের ট্রায়ালে অংশ নিতে হবে? কেন বারবার সেরাদের প্রমাণ করতে হবে? বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত জাভেদ নিজেও। তিনি বলেন, ‘বারবার নিজেকে প্রমাণ করতে হচ্ছে আমি সেরা। ব্যক্তিগতভাবে প্রতি মাসে নিজেকে প্রমাণ করাটা চ্যালেঞ্জিং। মেসিরও নিজেকে প্রতি মাসে প্রমাণ করার কিছু নেই।’
এরপর তিনি যোগ করেন, ‘প্রতি দুই মাসে যদি একটা সিলেকশন হয়, তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। আমরা যারা সিনিয়র আছি, তাদের ওপর চাপ কম পড়ে। এটা সত্যি, আমরা নিজেদের জায়গা থেকে দেশকে সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করি।’ যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভারতগামী এশিয়ান টেবিল টেনিস দলের ম্যানেজার সুজন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়দের মধ্যে আমরা একটা প্রবণতা দেখেছি যে তারা ম্যাচ কম খেলতে চায়। ফলে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করার ভীতি কাজ করে। তারা বেশি বেশি ম্যাচ খেললে ওদের মধ্যে যে জড়তা আছে, সেটা কেটে যাবে। কিন্তু ওরা কম খেলতে যাচ্ছে। তবে যে মাসে টুর্নামেন্ট থাকবে, সে মাসে সিলেকশন না হলেও চলবে। যখন সিলেকশন হয়, এর আগে খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিসের প্রবণতা বেড়ে যায়। সিলেকশন না থাকলে একধরনের ঢিলেমি পেয়ে বসে। যদি দুই মাস পর সিলেকশন দিই, তাহলে প্রথম এক মাস খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স খুঁজেই পাওয়া যাবে না।’
ওদিকে জুলাই মাসে নেপালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে রামহিমের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলানো হয়েছিল জাভেদকে। এটা নিয়েও নানা নেতিবাচক সমালোচনা শুনতে হয়েছে নড়াইলের খেলোয়াড় জাভেদকে। এ প্রসঙ্গে জাভেদ বলেন, ‘সাধারণত দলের প্রথম ও দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড় দুই সেট করে খেলার সুযোগ পায়। আর তৃতীয় খেলোয়াড় এক সেট খেলে। সেই হিসাবে রামহিম খেলেছে এক সেট।’ জাভেদ অবশ্য মালদ্বীপের সঙ্গে সব ম্যাচই হারেন। এটা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় জাভেদকে। এ ব্যাপারে জাভেদের ব্যাখ্যা, ‘আমি তো শেষ ঘরোয়া টুর্নামেন্ট প্রেসিডেন্ট কাপের ফাইনালে উঠি রামহিমকে হারিয়ে। আমিই সেখানে খেলার যোগ্য ছিলাম। তা ছাড়া বিগত দিনেও অভিজ্ঞ জাতীয় দলে খেলার ব্যাপারে। ফেডারেশন মনে করেছে আমাকে ওই পজিশনে খেলোনো উচিত।
আমি তো নিজের ইচ্ছায় খেলতে পারি না। অফিসিয়ালদের নির্দেশনায় খেলি। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ বিষয়টি অন্য খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।’ এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়ে বলে দাবি করলেন জাভেদ, ‘সর্বশেষ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে কোরিয়ায় যাওয়ার আগে আমি ছিলাম ৪ নম্বর র্যাঙ্কিংয়ে। কিন্তু আমাকে বাদ দিয়ে ১৮ নম্বর খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকে নেওয়া হয় তখন। ওখানে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলাম। আবারও যাতে ওই বৈষম্যের শিকার না হই, সে জন্য নিজেকে বাছাইয়ে ওপরে ধরে রাখার চেষ্টা করি।’ এরপর যোগ করেন, ‘আমার দুটো স্পনসর নাভানা ফার্মাসিউটিকেল ও সেইলিস বাংলাদেশ। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যদি আমার পারফরম্যান্স ভালো না হতো, তাহলে তো আর ওরা আমাকে স্পনসর করত না।’