ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ব্যবস্থাপনা খরচ কমাতে উদ্যোগ নিচ্ছে আইডিআরএ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:৩৯ এএম

বাংলাদেশ বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর প্রস্তাব করেছে। এই খসড়া সংশোধনী প্রস্তুত করা হয়েছে কঠোর আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে, অতিরিক্ত খরচ বন্ধ করতে, যা কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং দাবি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব মোকাবিলা করতে। এ বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের মতামত জমা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর আইডিআরএ জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা খরচের নতুন সীমা প্রস্তাব করে মতামত নিয়েছিল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি একটি বৃহত্তর সংস্কার পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য নন-লাইফ বিমা খাতে গ্রাহকের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা। অগ্নি, সাধারণ ও মেরিন বিমাসহ সব ক্যাটাগরিই এই সংস্কারের আওতায় আসবে।

বর্তমানে, ‘নন-লাইফ বিমা ব্যবসা ব্যবস্থাপনা খরচের সর্বোচ্চ সীমা বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী কোম্পানিগুলো মোট প্রিমিয়াম আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ বেতন, কমিশন, বিপণন ও প্রশাসনিক খরচে ব্যয় করতে পারে। তবে অনেক কোম্পানি এই সীমা অতিক্রম করে, ফলে তাদের আর্থিক শক্তি দুর্বল হয়। এক সিনিয়র আইডিআরএ কর্মকর্তা বলেন, ‘অতিরিক্ত ব্যয় শেষ পর্যন্ত গ্রাহককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কোম্পানি বেশি ব্যয় করলে দাবি নিষ্পত্তিতে দেরি হয় এবং গ্রাহকের আস্থা নষ্ট হয়।’

খরচের সীমা কমানোর প্রস্তাব

নতুন খসড়া সংশোধনীতে বিভিন্ন প্রিমিয়াম আয়ের স্তরে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা খরচের সীমা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম ১৫ কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয়ের ক্ষেত্রে আগের নিয়মে অগ্নি ও সাধারণ বিমায় ৩৫ শতাংশ এবং মেরিন বিমায় ২৬ শতাংশ ব্যয় করার অনুমতি ছিল। প্রস্তাবিত সীমা এখন যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ১৬ শতাংশ। উচ্চ প্রিমিয়াম আয়ের ক্ষেত্রে সীমা আরও কমানো হয়েছে। ১২০ কোটি টাকার বেশি প্রিমিয়াম আয়ের ক্ষেত্রে অগ্নি ও সাধারণ বিমায় ব্যবস্থাপনা খরচের সীমা ২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ এবং মেরিন বিমায় ১৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে প্রতিটি আয়ের স্তরে ধাপে ধাপে খরচ কমানো হয়েছে। পরবর্তী ১৫ কোটি টাকার জন্য অগ্নি ও সাধারণ বিমায় সীমা ৩৩ শতাংশ থেকে কমে ২৩ শতাংশ এবং মেরিন বিমায় ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১৫ শতাংশ হবে। সর্বোচ্চ আয়ের স্তরে সীমা কঠোরভাবে নামানো হয়েছে ১২ শতাংশ (অগ্নি ও সাধারণ বিমা) এবং ৬ শতাংশ (মেরিন বিমা)।

শিল্প খাতের উদ্বেগ

তবে শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিতে যেখানে সীমা বাড়ানো উচিত ছিল, সেখানে উল্টো কমানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বেশির ভাগ কোম্পানি বিদ্যমান সীমাই মানতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আরও কমানো ইতিবাচক ফল না-ও দিতে পারে। তাদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা, সমিতিগুলোর মতামত এবং গবেষণা প্রয়োজন ছিল, পাশাপাশি বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকেও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

সংস্কারের সম্ভাব্য প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনগুলো কোম্পানিগুলোকে খরচ কমাতে এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী হতে সহায়তা করবে, যার ফলে দাবি নিষ্পত্তিতে বিলম্বও কমবে। নতুন সীমা মানতে কোম্পানিগুলোকে আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ছোট কোম্পানিগুলো সমস্যায় পড়তে পারে, তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই সংস্কার শিল্পের স্থিতিশীলতা বাড়াবে। যদিও এই পদক্ষেপ শৃঙ্খলা আনবে, তবে ছোট ও অদক্ষ কোম্পানিগুলো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, যাদের কমিশন ও প্রশাসনিক খরচের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি। খরচ কমাতে তাদের কার্যক্রমের কৌশল নতুনভাবে ভাবতে হতে পারে। ব্যবস্থাপনা খরচের সীমা কঠোরভাবে বেঁধে দিয়ে আইডিআরএ নন-লাইফ বিমা খাতে জবাবদিহি ও দক্ষতা আনতে চায়। এই সংস্কার কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা শক্তিশালী করবে, সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি নিশ্চিত করবে এবং দীর্ঘদিনের অদক্ষতা ও অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত খাতে জন-আস্থা ফিরিয়ে আনবে।

নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এটি বাংলাদেশের নন-লাইফ বিমা শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে, যা কোম্পানিগুলোকে আর্থিক শৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যাবে এবং গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষা করবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৮২টি বিমা কোম্পানি রয়েছে, এর মধ্যে ৪৬টি নন-লাইফ কোম্পানি এবং ৪৩টি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। নন-লাইফ বিমা জীবন বিমা বাদে অন্যান্য ঝুঁকির আর্থিক সুরক্ষা দেয়, যেমনÑ সম্পত্তি, স্বাস্থ্য, মোটর, মেরিন, প্রকৌশল ও দায়বদ্ধতা বিমা। এগুলো ব্যক্তি ও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাবসায়িক ব্যাঘাত এবং অন্যান্য অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে আর্থিক ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়।