দাম ধরে রাখতে নিলামে ডলার কিনেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আরও ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে। এ নিয়ে তিন মাসে ১৪ দফায় সব মিলিয়ে ২০৮ কোটি ৮০ লাখ (২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন) ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই ডলার কেনার কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়ছে; বিপিএম-৬ হিসাবে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। মুদ্রাবাজারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পর ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৩ জুলাই ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনা শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে অর্থাৎ, ডলারের দর যাতে কমে না যায়, সে জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান। তিনি বলেন, বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনছে। বৃহস্পতিবার ১২১ টাকা ৮০ পয়সা দরে ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে। আগের মতোই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে এই ডলার কেনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরিফ খান বলেন, ‘ডলারের দর বেড়ে যাওয়াও অর্থনীতির জন্য ভালো নয়, আবার কমে যাওয়াও ভালো নয়। তাই এই বাজারকে ‘সুস্থির’ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে ডলার কিনছে। তাতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহ বাড়ছে।’
এর আগে ১৩ দফায় ১৯৮ কোটি ১০ লাখ (১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন) ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়েছিল। ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ১ কোটি ডলার কেনা হয়।
গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ১৪ আগস্ট ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, ২৮ আগস্ট ১২১ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭০ পয়সা দরে ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, ৯ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১৫ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার, গত ২২ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার কেনা হয়। চলতি অক্টোবর মাসে দুই দফায় ২১ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ১২১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৮০ পয়সা দরে ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার কেনা হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার কেনা হয়েছে ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। তিন বছর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ডলারের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ১২২ টাকায় গিয়ে ঠেকে।
ডলারের বাজারের অস্থিরতার আঁচে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে দিয়েছিল। মুদ্রাবাজারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পর ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৩ জুলাই ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে আমদানি বিল পরিশোধে সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে ডলার বিক্রি করছিল, সেখানে এখন চলছে উল্টো প্রবাহ। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত গত তিন বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ২৫ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করে, যা মূলত জ¦ালানি, সার ও খাদ্য আমদানি বিল মেটাতে ব্যবহার হরা হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন