বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ০২:০৫ এএম

ঋণের ফাঁদে গ্যারান্টার

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ০২:০৫ এএম

ঋণের ফাঁদে গ্যারান্টার

বন্ধু কিংবা আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই ঋণের জামিনদার হন অনেকেই। কিন্তু একপর্যায়ে কখনো ব্ল্যাকলিস্টে, সম্পদ হারানোর ঝুঁকিতে, আবার কখনো অযাচিত মামলায় জড়িয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ডাটাবেজে গ্যারান্টারের নাম উঠে যাচ্ছে ঋণখেলাপিদের তালিকায়। আইন অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলেই জামিনদার স্বয়ংক্রিয়ভাবে দায়ী হয়ে যান। সিআইবিতে তাদের নাম ওঠে, আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক আদালতের মাধ্যমে গ্যারান্টরের সম্পত্তিও নিলামে তুলতে পারে অপরিশোধিত ঋণ আদায়ে।

জানা যায়, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার সাতটি অর্থঋণ আদালতে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য বিচার চলমান ৩১ হাজার ৩০৯টি মামলার সঙ্গে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ জড়িত। এর মধ্যে জামিনদারকেও বিবাদী করা হয়েছে ১০ হাজার ২১১ মামলায়। এই মামলাগুলোর সঙ্গে জড়িত প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার অর্থঋণ আদালতগুলো রায় দিয়েছেন ১ হাজার ১২৯টি মামলায়, যার সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এই রায়গুলোর মধ্যে ৪০৮টি মামলায় ঋণের গ্যারান্টারও বিবাদী ছিলেন।

২০২৪ সালে রায় হয়েছে ৯৩৯টি মামলায়, যার সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার খেলাপি। এর মধ্যে ২৭৬টি মামলায় গ্যারান্টারও বিবাদী। আর ২০২৩ সালে রায় হয়েছে ৪২৮টি মামলায়, যার সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে ৩৭৮টি মামলায় গ্যারান্টার বিবাদী। ২০২২ সালে রায় হয়েছে ১ হাজার ২২৪টি মামলায়, যার সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার খেলাপি। এর মধ্যে ৩১৮টি মামলায় গ্যারান্টারও বিবাদী। ২০২১ সালে রায় হয় ১ হাজার ৬২১টি মামলায়, যার সঙ্গে জড়িত প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে ৩৫৬টি মামলায় গ্যারান্টারও বিবাদী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডেটাবেজ থেকে নাম স্থগিতের জন্য ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন গ্যারান্টর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৭৪৮টি রিট করেছে হাইকোর্টে, যার সঙ্গে জড়িত প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এসব রিটের প্রেক্ষিতে ৫৫৪ জনের নাম সিআইবি থেকে স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। বাকিরা এখনো আইনের চোখে খেলাপি। ২০২৪ সালে সিআইবি ডেটাবেজ থেকে নাম বাতিলের জন্য ১২৩৫টি রিট করা হয় হাইকোর্টে, যার সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এসব রিটের প্রেক্ষিতে ৮৬৬ জনের নাম সিআইবি থেকে স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। অর্থঋণ আদালতের আদেশ অনুযায়ী নিলাম বিজ্ঞপ্তি হওয়ার পর তা ঠেকানোর জন্য ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন গ্যারান্টর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে ২৩১টি রিট করেন। এই নিলামগুলোর সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এই রিটগুলোর প্রেক্ষিতে ১৩৯টি নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট। একইভাবে ২০২৪ সালে নিলাম ঠেকাতে বিভিন্ন গ্যারান্টর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে ৪৫৮টি রিট করে। এই নিলামগুলোর সঙ্গে জড়িত প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এই রিটগুলোর প্রেক্ষিতে ১৭৯টি নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এমরান আহমেদ ভুঁইয়া বলেন, একটি ঋণের বিপরীতে ব্যাংক স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক নেওয়ার পর আর পৃথকভাবে গ্যারান্টর নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তাই এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা এখন সময়ের দাবি। সোজা কথায়, আইন অনুযায়ী যে গ্রহীতা ঋণ নেওয়ার আগে উপযুক্ত বন্ধক দিতে না পারবেন, তাকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দেবে না। আরেকজনকে গ্যারান্টর বানিয়ে অহেতুক হয়রানির মধ্যে ফেলা একবারেই মানবাধিকার লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যাংক যা করে, আইনের মধ্য থেকেই করে। এখানে ব্যাংক কাউকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে না। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক যদি মনে করে, ঋণগ্রহীতা ক্লিন ইমেজের, তাহলে সে ক্ষেত্রে ব্যাংক আইনের মধ্য থেকে উপযুক্ত উপায়ে ঋণ অনুমোদন দেবে। তবে এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্যারান্টর নিয়োগের পরিমাণ কমেছে।

এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এ. (রুমী) আলী বলেন,  সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টর নিয়োগের সিস্টেম চালু আছে। বাংলাদেশেও আইন অনুযায়ী সেটি হচ্ছে। তবে গ্যারান্টর হওয়ার আগে ভেবেচিন্তে, সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক চাইলে গ্যারান্টরের প্রয়োজন না-ও হতে পারে। সেটি নির্ভর করে ব্যাংকের সঙ্গে গ্রাহকের সম্পর্ক বা তার লেনদেনের পূর্ব ইতিহাসের ওপর। তবে যদি কাউকে গ্যারান্টর করার জন্য কেউ অনুরোধ করেন, অবশ্যই গ্যারান্টর হওয়ার আগে তাকে সবকিছু ভালোভাবে ভেবেচিন্তে করতে হবে। কারণ ঋণখেলাপি হয়ে গেলে মূল গ্রহীতার পাশাপাশি গ্যারান্টর বেকায়দায় পড়বেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!