বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে নভেম্বর মাসে আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ হ্রাস দেখা গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের নভেম্বর মাসে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার ছিল। তবে অক্টোবরের তুলনায় এই মাসে রপ্তানি সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক এবং ব্যাংক খাতের চলমান সংকটের কারণে সামনের মাসগুলোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আশা করা কঠিন।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের ১৯ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের তুলনায় কিছুটা বেশি। এতে দেখা যাচ্ছে, নভেম্বরের দুর্বল পারফরম্যান্স সত্ত্বেও পাঁচ মাসে সামগ্রিক রপ্তানি খাতে সামান্য প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। এ সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। পোশাক খাতই রপ্তানি আয়ের প্রধান ভরসা হিসেবে রয়ে গেছে। ২০২৫ সালের নভেম্বরে এ খাত থেকে এসেছে ৩ হাজার ১৪০ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। নিটওয়্যার ও ওভেন উভয় পণ্যই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম.এ. রহিম ফিরোজ বলেন, ‘আমাদের অর্ডার আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বড় ক্রেতারাও অর্ডার কমিয়েছে। এর ফলে নিটিং ও ডাইং ইউনিটের কাজও কমে গেছে। আগামী নির্বাচনের আগে অর্ডারের প্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা নেই।’
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে অর্ধেক পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে এবং একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৫ শতাংশ কমেছে।
বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘পোশাক রপ্তানি কমার তিনটি প্রধান কারণÑ নির্বাচনকালীন অস্থিরতার কারণে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কের ফলে চীনা রপ্তানিকারকের ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ এবং সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের কারণে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি না খোলা।’
তিনি আরও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে ক্রেতারা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। চীনের রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছেন, যা আমাদের বাজারকে কিছুটা সঙ্কুচিত করছে। অন্য রপ্তানিকারকরাও জানিয়েছেন, সরকারি ঘোষণার পর অনেক আমানতকারী সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। ফলে গার্মেন্টস মালিকরা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে পারছেন না, এবং ব্যাংক পরিবর্তন করাও সহজ নয়।
পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ওষুধ শিল্প, জাহাজ, চিংড়ি এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যও উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে। এসব বৈচিত্র্যময় খাত মিলেই দেশের রপ্তানি পোর্টফোলিওকে আরও মজবুত করেছে। প্রধান রপ্তানি গন্তব্যগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে, যেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। উদীয়মান ও কৌশলগত বাজারগুলোর রপ্তানিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে চীন (২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ), পোল্যান্ড (১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ), সৌদি আরব (১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ) এবং স্পেন (১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ), যা বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের বিস্তৃত উপস্থিতি তুলে ধরে।
নভেম্বর মাসে তৈরি পোশাক ছাড়াও হিমায়িত ও জীবিত মাছের রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্য ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ, হোম টেক্সটাইল ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং কৃষিপণ্য ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং মেশিনারিজ পণ্য ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন