ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

তপন চৌধুরী

ঋণখেলাপিরা বহাল তবিয়তে আছেন, বড় বড় কথাও বলছেন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০৭:৪৩ এএম
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তপন চৌধুরী বলেন, বড় ঋণখেলাপিরা দেশে-বিদেশে বহাল তবিয়তে আছেন। তারা বড় বড় কথাও বলছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এসব ঋণখেলাপির বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংলাপে এ কথা বলেন তপন চৌধুরী। এতে দেশের বিভিন্ন শিল্প খাতের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী নেতা ও শিল্পের উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে তপন চৌধুরী বলেন, ‘ঋণখেলাপিদের নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু আমরা খেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না। সাধারণ জনগণের টাকা নিয়ে যারা বড় বড় খেলাপি হয়েছেন, তারা দেশে-বিদেশে বহাল তবিয়তেই আছেন এবং অনেক বড় বড় করে উঁচু স্বরে কথাও বলেন। তাদের কিচ্ছু হয়নি। এই টাকা না দিলে যে কিছু হয় না, সেটাও তারা প্রমাণ করে দিচ্ছেন।’

ব্যাংকের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা প্রচ-ভাবে কমেছে মন্তব্য করে তপন চৌধুরী বলেন, অনেকেই এখনো পর্যন্ত তাদের জমা দেওয়া টাকা ফেরত পাননি। দুর্বল ইসলামিক ব্যাংকগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু কাজ করছে, তবে অন্যান্য দুর্বল ব্যাংকের বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তপন চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারের অনেক সময় বিভিন্ন বিষয় থাকে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কিছু তো নেই। ফলে অন্তর্বর্তীকালে সরকারের কাছে আমাদের অন্তত এইটুকু প্রত্যাশা ছিল যে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ইতিমধ্যে বেশ লম্বা সময় পার হয়ে গেল। আমরা অনুরোধ করতে চাই, আপনারা দায়িত্ব থেকে যাওয়ার আগে অন্তত কিছু উদাহরণ রেখে যান। কেউই বিচারের ঊর্ধ্বে নন, আইনের ঊর্ধ্বে ননÑ এটা আমরা দেখতে চাই।’

তপন চৌধুরীর কথার পর এর উত্তর দেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সময় এখানে ব্যবসায়ীদের ওপর ক্র্যাকডাউন করা হয়েছিল, এর ফল কিন্তু ভালো হয়নি। অর্থনীতি স্থবির হয়ে গিয়েছিল। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে মনে করি, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হবে। একই সঙ্গে আইনগতভাবে আগাতে হবে।’

যারা অর্থ পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করা হয়েছে জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সেগুলো আদালতের বিষয়। এখন আদালতের কাজকে তো প্রভাবিত করা যায় না। এর সঙ্গে আমরা ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার কাজ করছি।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বেক্সিমকো টেক্সটাইল ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠানকে কিন্তু আমরা সচল রেখেছি। এস আলম দেশে থাকতে না পারেন, তার অংশীদারত্বে থাকা এসএস পাওয়ার সচল আছে। কারণ, এগুলো দেশের সম্পদ। সামিটের মালিকেরাও দেশে নেই, কিন্তু তাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই চলছে।’

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘আমরা চাইছি না কোথাও কারখানা ও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাক। ব্যক্তির জন্য আমরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেব না। প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জাতীয় সম্পদ। কর্মসংস্থান হচ্ছে আমাদের সাধারণ মানুষের জীবিকা অর্জনের জায়গা। ফলে কারখানা চালু রেখে পাশাপাশি আমাদের আইনগতভাবে আগাতে হবে। আইনকে আমরা কঠোরভাবেই নেব, ব্যক্তিকে আমরা ছাড়ব না। কিন্তু প্রতিষ্ঠান আমরা বন্ধ করতে দেব না। এটা হয়তো অনেকে পছন্দ করবেন না। অনেকে বলবেন যে আমরা একটু নরম, কিন্তু আমাদের একটা ভারসাম্য রেখে চলতে হবে।’