বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম

দেশের মানুষ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চান

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম

দেশের মানুষ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চান

দেশের সব মানুষই আশা করছেন যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনটি যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে, অংশগ্রহণমূলকভাবে হবে। নির্বাচনে যে ফলাফল আসবে তা আগামীদিনের বাংলাদেশের পরিবর্তনের যে চেষ্টা সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। যদিও যে কোনো একটি ঘটনায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে রাস্তা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা সঙ্কুলান থাকে। গত কিছুদিন ধরেই আমরা ঢাকার বাইরে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত প্রাক-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভার আয়োজন করেছি। তাতে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় সব সংলাপে যে বার্তাটা পরিষ্কারভাবে আসছে, মানুষ বলতে চাচ্ছেন যে, আগে নেতারা বলতেন জনতা শুনতেন, এই পরিস্থিতির তারা পরিবর্তন চান এবং তারা কি বলতে চান সেটাও কিন্তু পরিষ্কারভাবে তারা জানাচ্ছেন। তারা দেখতে চাচ্ছেন একটি নির্বাচন যেখানে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন। তাদের ক্ষেত্রে নির্বাচনের ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করা, নির্বাচনের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের এখন যেই সোশ্যাল মিডিয়া সামাজিক মিডিয়ার ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং যথোপযুক্ত প্রার্থীকে দাঁড় করানোর ব্যাপারে খুব বড়ভাবে কথা আসছে। তারা (অংশগ্রহণকারী) মনে করেন, নির্বাচনের ব্যয় যদি কমানো না যায় তা হলে দুর্নীতি কমানো মুশকিল হবে। একই রকমভাবে নির্বাচন-পরবর্তী জবাবদিহিতার কাজে তারা বার্ষিকভাবে প্রত্যেকটা জনপ্রতিনিধি কি দায়িত্ব পালন করলেন তার হিসাব দেওয়ার কথা তারা বারবার বলছেন।


আমরা যখন রাজশাহীতে এই সংলাপের আয়োজন করি মোটাদাগে স্থানীয় অন্তত চারটি বড় বড় বিষয় উঠে আসে। এর মধ্যে একটি হলো রাজশাহী যে মরুকরণ, তিস্তা এবং অন্যান্য নদীতে এখানে যে পানির ক্ষেত্রে সংকট সেটাকে নিরসনের বিষয়। দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টা সামনে আসে, এই অঞ্চলে যে জ্বালানির সংকট রয়েছে গ্যাসসহ অন্যান্য ব্যাপারে। তৃতীয়ত, যোগাযোগব্যবস্থাÑ রাজশাহীর সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা এবং চতুর্থত, এখানে শিল্প নেই, বিশেষ করে কৃষি শিল্পের ব্যাপারে অনেকেই গুরুত্ব আরোপ করেছেন। স্বাস্থ্য সেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, যে সমস্ত দরিদ্র মানুষের সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদির বিষয় আছে, কিন্তু সবচেয়ে লক্ষণীয় যে আলোচনাটা এসেছে সেটা হলো নিরাপত্তার আলোচনা। এটা শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয় নয়। এটা শুধু আর্থিক অন্যান্য নিরাপত্তার বিষয় না। সামাজিক নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ইত্যাদির বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে এসেছে।
নিরাপত্তার বিষয়কে মানুষ সুশাসনের সঙ্গে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে, প্রশাসনের দক্ষতার সঙ্গে, সক্ষমতার সঙ্গে এবং রাজনৈতিক মনোভাবের সঙ্গে সরকারের অভিপ্রায়ের সঙ্গে যুক্ত করে দেখেছেন। অর্থাৎ নিরাপত্তার বিষয়টি তারা সামগ্রিকতায় বিচার করেছেন এবং এই নিরাপত্তাকে যদি জোরদার করা না যায় তা হলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা কষ্টকর হবে বলে তারা বিবেচনা করেন। কেন জানি নির্বাচন-উত্তর নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের দৃষ্টিতে কম গুরুত্বপূর্ণ।


নির্বাচনী আলাপ বাদ দিয়ে যদি সংস্কার নিয়ে কথা বলি তাতে মোটা দাগে যে বিষয়টা সামনে আসে তা হলো- আগে নেতা বলতেন জনতা শুনতেন। কিন্তু এখন মানুষ চান, জনপ্রতিনিধিরা শুধু বলবেন না, জনগণের কথাও শুনবেন। সহজ করে বললে, দেশের মানুষ এখন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চান। মানুষ চান প্রতিটি জনপ্রতিনিধি তার কাজের বার্ষিক হিসাব দেবেন। জবাবদিহির এই সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলে আমি মনে করি। 


শেষ আলাপে অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে যদি আলোচনা করি তা হলে পূর্বের সরকারের সময়ে অর্থনীতির কি দশা ছিল সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা করতে হলে প্রথমেই বিগত দেড় দশকে ‘অলিগার্ক উত্থানের দশক’ হিসেবে ভাবতে হবে। কেননা একটি গোষ্ঠী রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থে নীতি প্রণয়ন করেছে; তারা ব্যাংক, জ্বালানি, পুঁজিবাজার থেকে শুরু করে অফশোর ব্যাংকিং ও অবৈধ অর্থপাচার সব ক্ষেত্রেই জড়িয়ে পড়েছিল। মোটাদাগে দেশের দুই ফুসফুস, আর্থিক খাত ও জ্বালানি খাত তারা ক্ষয় করেছিল। 


তবে বাংলাদেশে এখন এক ভয়াবহ ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই ঝড় অর্থনীতি, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুভূত হচ্ছে। বলাবাহুল্য, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যে কমিটি ও কমিশন করা হলো, সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রতিনিধিত্ব যথাযথভাবে ছিল না। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, কেবল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি। ফলে সরকারের তৈরি কমিটি ও কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব কোথাও গিয়ে আর অগ্রসর হতে পারল না। তবে এটা কি তাদের আকাক্সক্ষার অভাব? এটা কি তাদের যোগ্যতার অভাব? এটা কি তাদের সক্ষমতার অভাব? নাকি এর ভেতরে আরও বড় কোনো স্বার্থের সংঘাত লুকিয়ে আছে এই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।’


আমাদের মনে রাখতে হবে, ‘সরকার আসে সরকার যায়, জনগণ থাকে, দেশ থাকে। কারিগরি সমাধান অনেকে দিতে পারেন, কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য নাগরিকদের জবাবদিহির চাহিদা অপরিহার্য। নাগরিকের কণ্ঠস্বর, রাজনীতির কণ্ঠস্বর ও সামাজিক আন্দোলনের কণ্ঠস্বর একত্রিত না হলে অন্যদের দোষ দিয়েও পার পাওয়া যাবে না।’

লেখক: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!