বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:০৪ এএম

প্রযুক্তির বিকাশ ও আমাদের অগ্রযাত্রা

ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:০৪ এএম

প্রযুক্তির বিকাশ ও আমাদের অগ্রযাত্রা

প্রযুক্তি জগতে বহুল আলোচিত ‘ই-স্বাক্ষর যুক্ত স্মার্ট একাডেমিক ক্রেডেনশিয়াল’ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ এক নতুন মাইল ফলক স্পর্শ করেছে আরও আগেই। নিকট-অতীতে সরকারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি খাতের সিটি ইউনিভার্সিটি আনুষ্ঠানিকভাবে রিলিফ ভ্যালিডেশন লিমিটেডের (আরভিএল) সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের জন্য ই-স্বাক্ষর যুক্ত একাডেমিক সার্টিফিকেট চালু করে দেশের শিক্ষা ও প্রযুক্তি জগতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। 


একসময় এদেশে কেবল স্বাক্ষর দেওয়ার মতো মানুষের সংখ্যাও ছিল সীমিত। ফলে টিপসই দিয়েই অধিকাংশ লেনদেন সম্পন্ন হতো। পেপারলেস সমাজ বিনির্মাণে সর্বপ্রথম প্রয়োজন সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সহজে সঠিকতা নিরূপণ করার মতো ইলেকট্রনিক ডকুমেন্ট বা ডিজিটাল ডকুমেন্ট। মাত্র একদিনেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিটি ইউনিভার্সিটির কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ই-স্বাক্ষর সংবলিত শিক্ষা সনদ বা একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট লাভ করার মাধ্যমে একই সঙ্গে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, তাদের শিক্ষক, অভিভাবক, সহপাঠী, নিকটাত্মীয় ও অনুজ ছাত্রছাত্রীরা ই-স্বাক্ষর নামক একটি অনস্বীকার্য স্মার্ট টেকনোলজির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে তা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক বার্তা।


উচ্চ শিক্ষা বা চাকরির সুবাদে যাদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, তারা  বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সার্টিফিকেট সত্যায়িত করার দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত আছেন। প্রচলিত ধারায় একটি সার্টিফিকেট সত্যায়িত করতে শিক্ষাঙ্গন পর্যায়ে আবাসিক ছাত্রাবাসের প্রভোস্ট, বিভাগীয় প্রধান, প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, রেজিস্ট্রার ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপাচার্য বা উপ-উপাচার্যের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। এরপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে নোটারি করে তা জমা দিতে হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিরীক্ষা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক তা সত্যায়িত অবস্থায় ফেরত দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বাক্ষর শেষে এই সার্টিফিকেট জমা দিতে হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এখানেও নিরীক্ষা শেষে তা স্বাক্ষরিত হয়ে ফেরত যায়। এরপর ভিসা লাভ ও বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা শিক্ষাবৃত্তির জন্য তা জমা হয় সংশ্লিষ্ট দূতাবাস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিদেশি দূতাবাস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সময় নিয়ে তা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নীরিক্ষাপূর্বক ভিসা প্রদান করে এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ ও বৃত্তি প্রদান করে।  


রিলিফ ভ্যালিডেশন লিমিটেড প্রবর্তিত টিক ঠিক অ্যাপ ব্যবহার করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন যে কোনো স্থান থেকে তাদের শিক্ষা সনদ বা একাডেমিক ক্রেডেনশিয়ালের কপি ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোনো সময় দেশে বা বিদেশে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা দূতাবাসসহ যে কোনো নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে উপস্থাপন করতে পারবে। একইভাবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়, দূতাবাস বা নিয়োগদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মুহূর্তেই রিলিফ ভ্যালিডেশনের টিক ঠিক অ্যাপ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সনদ বা একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের সঠিকতা রুট ফাইল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষিত ডাটাবেজ থেকে যাচাই করার সুযোগ পাবে। এভাবেই তারা একাডেমিক ক্রেডেনশিয়ালের নির্ভুলতা বা অথেন্টিসিটি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন। এর ফলে একদিকে মহামূল্যবান সময় অন্যদিকে মূল্যবান কাগজ তথা পরিবেশ ও অর্থের ব্যাপক সাশ্রয় হবে। সেই সঙ্গে বন্ধ হবে জালজালিয়াতি ও অন্যান্য অপরাধ। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এখন হাতের একটি স্মার্ট মোবাইল ফোনই যথেষ্ট। কারণ ই-স্বাক্ষর যুক্ত একটি সনদ কেবল অনলাইনেই নয়, অফলাইনেও দেখার ও যাচাই করার সুযোগ থাকছে।  


বিদেশের বুকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা নেই, এমন মানুষও ই-পাসপোর্টের কল্যাণে একটি আধুনিক বাংলাদেশের অস্তিত্ব অনুভব করতে এবং বাংলাদেশকে নিশ্চয় সমীহ করছে। একইভাবে ই-স্বাক্ষরযুক্ত শিক্ষা সনদ এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের নতুন পরিচয় ঘটছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত শতাধিক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসা এবং সেই সঙ্গে অন্যান্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার কাগুজে সনদ তৈরি ও বিতরণ হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সনদ জালিয়াতির তথ্য জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জা দেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থাকে বিব্রত করে। অথচ পৃথিবীর বহু দেশ আজ থেকে অনেক আগেই ই-স্বাক্ষর যুক্ত স্মার্ট একাডেমিক ক্রেডেনশিয়াল চালু করে শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য অংশীজনদের নানাবিধ জটিলতা থেকে মুক্তি দিয়েছে এবং দ্রুততম সময়ে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ ও আর্থিক বিবেচনায় সাশ্রয়ী হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। 
দেশের সমস্ত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই-স্বাক্ষর যুক্ত শিক্ষা সনদ ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট প্রদানের প্রথা চালু করা আজ সময়ের দাবি। এর ফলে একদিকে শিক্ষা সনদের জালিয়াতি হ্রাস পাবে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের সনদ সত্যায়িত করার অনাবশ্যক বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা অনতিবিলম্বে ই-স্বাক্ষর যুক্ত শিক্ষা সনদের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। একাডেমিক বা শিক্ষা সনদ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মূল্যবান ‘সিকিউরিটি পেপার’। এই  ‘সিকিউরিটি পেপার’ তৈরির কারণে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গাছ এবং ব্যয় হচ্ছে প্রচুর মিষ্টি পানি। সেই সঙ্গে সনদ তৈরিতে কৃত্রিম রং ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যও পরিবেশের জন্য ক্ষতি বয়ে আনছে। একসময় ছাগলের চামড়াসহ আরওা কিছু মূল্যবান সামগ্রীও ব্যবহৃত হতো ‘সিকিউরিটি পেপার’ তৈরির জন্য। শিক্ষা সনদ ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরির জন্য ব্যবহৃত ‘সিকিউরিটি পেপার’, প্লাস্টিক সামগ্রী, কৃত্রিম রং ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আমদানি করতে হয়। এক্ষেত্রে ই-স্বাক্ষর যুক্ত স্মার্ট একাডেমিক ক্রেডেনশিয়াল চালু বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং প্রকৃতিকে রক্ষার জন্যও সহায়তা করবে।   


শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি খাতের সিটি ইউনিভার্সিটি আনুষ্ঠানিকভাবে রিলিফ ভ্যালিডেশন লিমিটেডের (আরভিএল) সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের জন্য ই-স্বাক্ষর যুক্ত একাডেমিক সার্টিফিকেট চালু করে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর মধ্যে দিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। বিভিন্ন সময়ে প্রবর্তিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সংশোধিত সাক্ষ্য আইন- ২০২২ বাংলাদেশে ই-স্বাক্ষর যুক্ত সনদের আইনগত বৈধতা এবং তা সর্বমহলে গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। তবে বাস্তবে তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। ‘ই-স্বাক্ষর যুক্ত স্মার্ট একাডেমিক ক্রেডেনশিয়াল’ ব্যবহার করা হলে ই-স্বাক্ষরের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক হারে বাড়াবে। স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এই এগিয়ে যাওয়াকে স্বাগত জানাই।

লেখক: ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ 
অবসরপ্রাপ্ত মেজর, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গবেষক
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!