সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ০৪:১৩ এএম

মাথাচাড়া দেওয়ার অপচেষ্টায় আ.লীগ

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ০৪:১৩ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য-বিভেদের সুযোগ নিয়ে মাথাচাড়া দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলটি তাদের অবস্থান জানান ও শক্তির মহড়া দিতে নানাভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে, এমন তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছেন। নিষিদ্ধ দলটির নেতাকর্মীরা যাতে দেশের কোথাও নাশকতা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরদারি বাড়িয়েছে। গোয়েন্দারাও তাদের কার্যক্রম দ্বিগুণ করেছে। পুলিশ বলছে, নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ অফলাইন বা অনলাইনে সক্রিয় হলেই তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

আন্দোলনের মুখে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি সাইবার জগতেও যদি কেউ আ.লীগের প্রচার-প্রচারণা চালায়, তাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনের আওতায় আনতে পারবে, এমনটাই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দেশ-বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অফলাইন-অনলাইনে মিথ্যা তথ্য ও গুজবে জড়িত। নিষিদ্ধ দলটির অন্যতম ভরসা এখন সাইবার জগতে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়ানো। 

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যে শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে আ.লীগের সাবেক এমপি পঙ্কজ দেবনাথের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ঘিরে বরিশালজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ‘বরিশালের কোনো জায়গা থেকে একটা জঙ্গিও যেন ঢাকা যেতে না পারে’ মন্তব্য করে লঞ্চ মালিকদের সতর্ক করেছেন তিনি। বরিশালের বিতর্কিত ও নানান অপকর্মে জড়িত সাবেক এই আ.লীগের নেতা কেন বরিশালকে জঙ্গিদের ঘাঁটি আখ্যায়িত করলেন? এই প্রশ্নে বরিশালের রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং তার দৃষ্টিতে জঙ্গি কারা? এই উত্তর না পাওয়া গেলেও ইসলামপন্থিরা নানান সমীকরণ মেলাতে শুরু করেছেন। পলাতক থেকে দেশবিরোধী মন্তব্য করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভোর ৬টার দিকে গাজীপুর টঙ্গী-জয়দেবপুর রোডের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন বনমালা রোডে গাজীপুর আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে মিছিলের চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। পুলিশ জানায়, টঙ্গী পূর্ব থানাধীন ৪৮নং ওয়ার্ডের বনমালা রেললাইনসংলগ্ন জয়দেবপুর-টঙ্গী রোডের হায়দারাবাদ ব্রিজসংলগ্ন রাস্তার ওপর চলন্ত অবস্থায় একটি ঝটিকা মিছিল হয়। টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও টঙ্গী সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মঞ্জুর,  ৪৯নং ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সোহেল,  ৪৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল হোসেন জয় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মীদের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি ঝটিকা মিছিল হয়। মিছিলটি টঙ্গী পূর্ব থানাধীন হায়দারাবাদ ব্রিজ এলাকা থেকে শুরু হয়ে পূবাইল থানাধীন আক্কাস মার্কেট এলাকার দিকে চলে যায়। টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, মিছিলের চেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।

এর আগে, রোববার (২৫ মে) রাজধানীর গুলিস্তানে ২৩ শহিদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) কার্যালয়ের সামনে ঝটিকা মিছিলের সময় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীসহ সারা দেশে নাশকতার ছক আঁকছেন এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। ঝটিকা মিছিলের নামে কেউ যদি সংঘবদ্ধভাবে নাশকতার চেষ্টা চালায়, আমরা তাদের প্রতিহত করব। পাশাপাশি সাইবার জগতে মনিটরিং করা হচ্ছে।

ঈদুল ফিতরের পর আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল বের করার ঘটনা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশত ঝটিকা মিছিল হয়। সুযোগ পেলেই পর্যায়ক্রমে সারা দেশে জেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করছে। এসব মিছিলে ফটোসেশন করা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছদ্মনামের আইডিতে সেগুলো পোস্ট করছেন। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বাইরে পলাতক থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে।

শেষ দুই মাসে রাজধানী ও সারা দেশে শতাধিক ঝটিকা মিছিল করায় আলোচনায় এসেছে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নতুন অপতৎপরতা। প্রকাশ্যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গোয়েন্দা তথ্য মতে, নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। অনলাইন ও অফলাইনে নানাভাবে তারা সরকার ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে এগোচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ।

শনিবার (১০ মে) উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরদিন ১১ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। নিষিদ্ধের পর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধনও স্থগিত করেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের কোনো সদস্য কার্যক্রম চালালে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে ডিএমপি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তাদের সমভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠনের ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছে। বলা হয়েছে, ‘মিছিলকারীদের তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তী সময়ে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন ও বেআইনি এসব সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

গোয়েন্দা তথ্য মতে, দেশে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীসহ বড় শহরগুলোতে বড় ধরনের অরাজকতা কিংবা নাশকতার ছক আঁকছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিতাড়িত ও পতিত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। এ ক্ষেত্রে তাদের টার্গেট হতে পারে কেপিআইভুক্ত সরকারি স্থাপনা। তারা টাকার বিনিময়ে দলীয় নেতাকর্মী ও ভাড়াটে লোকদের জড়ো করে রাজপথ দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা ভারতে ও দেশে গোপন স্থানে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। নিষিদ্ধ দলটির উদ্দেশ্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সেনাবাহিনী, আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা ও বিএনপি-জামায়াতকে নিজেদের শক্তির জানান দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে থাকা হাজার হাজার বৈধ-অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রস্তুত করে রাখছেন। এ ছাড়া তাদের আরেকটি অপকৌশল হচ্ছে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ভীতি ও উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ক্ষমতাচ্যুত দলটির একাধিক নেতা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ততোধিক সূত্র এমনটাই দাবি করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজধানীতে পতিত ও বিতাড়িত আওয়ামী লীগ যাতে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি না করতে পারে, সে লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা ছাড়াও মহানগরীর বড় বড় মোড়ে যৌথ বাহিনীর চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতাও প্রস্তুত থাকবে। সীমান্ত ও বিমানবন্দরগুলোতেও সতর্ক থাকবেন সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যরা। পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট, সাবেক এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর, নিক্সন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন ক্যাডার নেতার কর্মকাণ্ডের ওপর কড়া নজরদারি রাখছেন বেশির ভাগ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) ইনামুল হক সাগর রূপালী বাংলাদেশকে জানান, নিষিদ্ধ কোনো সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাশকতা বা নৈরাজ্য রূখতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা থেমে নেই। প্রতিনিয়ত তারা নানা ছক কষছেন। স্বৈরাচার হাসিনার দোসরদের চাওয়া দেশকে অস্থিতিশীল রাখা। জনগণের জীবনযাত্রাকে নানাভাবে ব্যাহত করা। এসব কাজে তারা দেশ-বিদেশ থেকে অনুসারীদের মাঝে টাকাও বিলি করছে। আওয়ামী লীগের দেশে-বিদেশে পলাতক লাখ লাখ নেতাকর্মী ছাড়াও সিআরআইয়ের হাতে গড়া এক লাখ সাইবার যোদ্ধা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ চরম অস্তিত্বসংকটে পড়ার থেকে নিজেদের হারানো মসনদ ফিরে পেতে মরিয়া। 
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে জানান, আরও দুই দিন আগে থেকেই সারা দেশে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন গোয়েন্দা নজরদারি করে আসছে। সাইবার জগৎও মনিটরিং করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঝটিকা মিছিল বা নাশকতা সৃষ্টির তথ্য পেলেই যৌথ বাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শত শত নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবুও ফাঁকফোকর দিয়ে নির্জন বা গোপন স্থানে ২-৩ মিনিটের একটি ঝটিকা মিছিল করে সাইবার জগতে প্রকাশ বা প্রচার করা হচ্ছে। এমনকি পুরোনো ভিডিও বা স্থিরচিত্র প্রচার করা হচ্ছে। মানুষের নিরাপত্তায় র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য তৎপর রয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!