বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৫, ০৫:১৭ এএম

জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের ইউটার্ন

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৫, ০৫:১৭ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদ আর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে বেশ সরব ছিল জামায়াত ইসলামী। কিন্তু লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর ক্ষুব্ধ জামায়াতে ইসলামী। যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করছে দলটি।

শুধু তাই নয়, এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়েও সংশয় তাদের। এই অভিমান থেকে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায়ও অংশ নেয়নি জামায়াত। তারা বলছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে লন্ডনে যৌথ বিবৃতিতে তাদের অবজ্ঞা করা হয়েছে।

অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরের নির্বাচনি এলাকায় পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিএনপির নেতাদের হাতে হামলার শিকার হয়ে তিনিও ইউটার্ন নিয়েছেন। গত সোমবার রাতে তিনি পটুয়াখালীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সহাবস্থানে থেকে নির্বাচন সম্পর্কে আগে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম তার জন্য ঢাকায় ফিরে ইউনূস স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতে হবে, যখন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে তখন রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। বর্তমান নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

এই দুই দলের পাশাপাশি এনসিপিরও সংস্কার-বিচারের পর নির্বাচন এই অবস্থান রাজনীতির মাঠে তৈরি করেছেন নতুন সংকট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মতানৈক্য কিছুটা থাকবেই। সরকার আন্তরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল হলে এসব সংকট কেটে যাবে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপিসহ মিত্র দলগুলোর মধ্যে দেখা দেয় দূরত্ব। বিপরীতমুখী অবস্থান ছিল দুই পক্ষের। এই সংকট দূর করতে সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দীর্ঘ দুই ঘণ্টার এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ঐকমত্যে আসেন দুই পক্ষ। এরপর অধ্যাপক ড. ইউনূস ও তারেক রহমান যৌথ বিবৃতিতে জানান, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

এই বিবৃতিতে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বাগত জানালেও বিবৃতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামী ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। ওই বিবৃতির পর এনসিপির নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে একটি দল বা এক ব্যক্তির সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে। এটিকে গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলেও বর্ণনা করছেন তারা।

একই সুরে কথা বলছে জামায়াতে ইসলামীও। দলটি জানিয়েছে,  সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। এতে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যেখানে বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু কোনো একটি দলের সঙ্গে আলাপ করে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। এই দুই ছাড়াও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ দু-একটি দলও প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

যৌথ বিবৃতি নিয়ে এই মান-অভিমানের পর গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় যোগ দেয়নি জামায়াত। তবে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনায় অংশ নিয়েছে। বিএনপি সভায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, নারী প্রতিনিধিত্বসহ বেশকিছু বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।

ঐকমত্য কমিশনের সভায় যোগ না দেওয়ার কারণ হিসেবে জামায়াত বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে ‘ইগনোর’ করা হয়েছে বলে মনে করে দলটি। এর প্রতিবাদ হিসেবে তারা বৈঠকে যোগ দেননি।

তবে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আজ বুধবারের আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা মনে করছি, আগামীকালের (আজ বুধবার) আলোচনায় তারা অংশ নেবে।’

অন্যদিকে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির সঙ্গে সরব ছিল গণঅধিকার পরিষদও। দলটি নির্বাচনের দাবিতে এতদিন অনড় অবস্থানে থাকলেও সম্প্রতি পটুয়াখালীর গলাচিপায় দলটির সভাপতি নুরুল হক নূরের ওপর বিএনপির হামলার পর অবস্থান পাল্টেছে দলটি। এরপর নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ নুরুল হক নূর।

গত সোমবার পটুয়াখালী পৌরশহরে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, একমাত্র বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দল নির্বাচন নিয়ে শক্ত অবস্থানে নেই। কারণ বিএনপির তৃণমূলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অন্য দলগুলো আগেই টের পেয়েছে, যা আমি টের পেয়েছি এলাকায় এসে। তাই বিএনপির সঙ্গে সহাবস্থানে থেকে নির্বাচন সম্পর্কে আগে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম তার জন্য ঢাকায় ফিরে ইউনূস স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতে হবে, যখন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে তখন রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।

গতকাল মঙ্গলবারও ঐকমত্য কমিশনের সভা শেষে নুরুল হক নূর একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে জনগণ শঙ্কিত। কারণ ৫ আগস্টের পরও পরিস্থিতি অনেকটা আগের মতোই রয়েছে। আমাদের মতো লোককে যেখানে জিম্মি হতে হয়, সেখানে নির্বাচন কেমন হতে পারেÑ তা কিছুটা আঁচ করা যায়। তাই আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা জরুরি।

এ প্রসঙ্গে দলটির উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের দলের প্রধান যা বলছেন তা আমাদের দলীয় বক্তব্য। আমরা মনে করছি নির্বাচন নিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। মাঠ প্রশাসন একটি দলকে সমর্থন দিচ্ছে। তাই নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা জরুরি।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরফিুল ইসলাম আদীব বলেন, একটি দল বা ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করার চেষ্টা করা অন্য সব দল ও শহিদ পরিবারের প্রতি অবমূল্যায়ন। রাজনৈতিক দলগুলোসহ সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সময় ঠিক করা প্রয়োজন।

সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছি। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব আমাদের কাছে সমান।’

সার্বিক বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান স্টেক হোল্ডাররা একমত হয়েছেন। জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা না করে যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় তারা একটু অভিমান করেছে। এটা রাজনৈতিক ‘ইগো’। তবে এগুলো ক্ষুদ্র বিষয়। প্রধান উপদেষ্টা উদ্যোগ নিলেই এসব সংকট কেটে যাবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!