শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০২:১৫ এএম

গোপালগঞ্জে অনির্দিষ্টকাল কারফিউ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০২:১৫ এএম

গোপালগঞ্জে অনির্দিষ্টকাল কারফিউ

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ছাড়া অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে সরকার। এনসিপির সমাবেশ পরবর্তী সংঘর্ষে নিহত চারজনের লাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পোস্টমর্টেম ছাড়া নিয়ে গেছে উপস্থিত আপনজনেরা। গোপালগঞ্জের সহিংস ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এদিকে গতকালের কারফিউয়ের মধ্যে শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। রাস্তাঘাট, হাট-বাজার ছিল জনমানবহীন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি। জেলাজুড়ে বিশেষ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে, যৌথবাহিনীর অভিযানে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, চলমান কারফিউতে জেলায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সড়কে সীমিতসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছেন। তবে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সড়কে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো উপস্থিতি চোখে পড়েনি। সকালে শহরের ঘোনাপাড়া, এলজিইডি মোড়, গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, কোর্ট চত্বর, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার ও পুলিশ লাইন্স মোড় ঘুরে কোথাও কোনো চেকপোস্ট বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। তবে গোপালগঞ্জ পৌরসভার সামনে কয়েকজন গ্রামপুলিশ সদস্য ও পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে বিভিন্ন মোড়ে চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁ খোলা ছিল, সেখানে কিছু মানুষের জটলা দেখা যায়। কাঁচাবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে ফলের দোকানে বেশকিছু লোকজন ছিল। এদিকে, কারফিউয়ের কারণে স্থানীয়ভাবে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

‘জুমা’ বাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ:
গোপালগঞ্জের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রথম দফায় ২২ ঘণ্টার কারফিউ শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, গত বুধবার রাত ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে চলমান কারফিউ আজ শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এরপর ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কারফিউ বন্ধ থাকবে। দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলমান থাকবে। অর্থাৎ, বুধবার রাত ৮টায় যে কারফিউ শুরু হয়েছিল, তাতে বিরতি মিলবে ৩৯ ঘণ্টা পর।

তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি: গোপালগঞ্জে সহিংস ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেনÑ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এবং অন্যজন আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। 

সুরতহাল, ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতদের দাফন-সৎকার: গোপালগঞ্জে নিহত চারজনের কারোর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত হয়নি; রাতেই তাদের দাফন ও সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। গত বুধবার দিনভর সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৭), শহরের শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন। এর মধ্যে পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহাকে বুধবার রাতে পৌর শ্মশানে সৎকার করা হয়। এ ছাড়া টাইলস মিস্ত্রির সহকারী রমজান কাজীকে বুধবার রাতে এশার নামাজের পর এবং মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সোহেল রানা ও ক্রোকারিজ দোকানের কর্মচারী ইমন তালুকদারকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বলেন, মৃত্যু নিশ্চিতের পরপরই উপস্থিত লোকজন জোর করেই লাশ নিয়ে যায়। কে বা কারা কার আত্মীয় বা আপনজন আমরা তা নিশ্চিত করতে পারিনি। কারণ ওই সময় সে রকম পরিবেশ ছিল না। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত নিয়ে মৃতের পরিবারের সদস্যরাও কেউ কোনো কথা বলতে চাচ্ছেন না। 

গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গোপালগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করা হয়। সেখানে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিকের কাছে সাংবাদিকরা সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চান। তখন তিনি বলেন, বিষয়টি আইন প্রক্রিয়ায় পরবর্তীতে দেখা হবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় পুলিশের কারো গাফিলতি আছে কি নাÑ সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।

যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৫: গত বুধবার সন্ধ্যা থেকেই গোপালগঞ্জে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। জেলায় কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২ জনকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে এবং আরও ৩ সদস্যকে রাজারবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। 

উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে যান।

বুধবারের সংঘর্ষে জড়িত থাকা সন্দেহে ২৫ জনকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, জেলার শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমাদের যা যা করণীয় সবই করা হবে। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত বা নিহতের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর থানার  ওসি মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, বুধবারের ঘটনায় আহত বা নিহত হওয়া কোনো পক্ষ থেকে বা কারো পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি।

মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না আইন ও সালিশ কেন্দ্র: গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ জন নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, নিহত চারজনের মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না। একই সঙ্গে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছে তারা। বিবৃতিতে আসক বলেছে, অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করতে হবে। এনসিপির নেতা ও সমর্থকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবিও আসকের। জনসাধারণের ওপর বল প্রয়োগ, গুলি চালানো ও প্রাণহানির ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদ- ও সংবিধান উভয়ের চরম লঙ্ঘন। এ ধরনের ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক পরিসর, মানবাধিকারের মূল্যবোধ এবং নাগরিক নিরাপত্তার প্রতি একধরনের হুমকি। নাগরিকের জীবন রক্ষা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। গোপালগঞ্জের ঘটনায় রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।

গোপালগঞ্জের হামলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের প্রতিবেদন: গোপালগঞ্জে গত বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভা কর্মসূচিতে বাধা দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে সারা দেশে ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশ থেকে একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে মোট ১১টি পয়েন্টে গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!