শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০২:৩১ এএম

রাজনৈতিক ঐক্য ফিরছে ঐকমত্য কমিশনে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০২:৩১ এএম

রাজনৈতিক ঐক্য ফিরছে  ঐকমত্য কমিশনে

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সংবিধান, নির্বাচন ও বিচারব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রীয় নানা নীতি সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দেয় বিভক্তি। কিন্তু বিভেদে না গিয়ে সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই লক্ষ্যে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় ঐকমত্য কমিশন। এর পর থেকেই এ কমিশন বিভিন্ন ইস্যু ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সিরিজ বৈঠক করে সিদ্ধান্তে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জরুরি অবস্থা জারির বিধান সংশোধন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন সম্পর্কিত বিধান, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নির্ধারণ, জ্যেষ্ঠতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণ, সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি থেকে ‘বহুত্ববাদ’ বাদ দেওয়া, ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’-এর সংশোধনসহ নানা বিষয়ে তৈরি হয়েছে ঐকমত্য। 

এ ছাড়া উচ্চকক্ষ গঠন, নি¤œকক্ষে নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষণসহ নানা বিষয় নিয়ে একাত্মতা তৈরি হলেও পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে রয়েছে ভিন্নতা। এ ছাড়া কয়েকটি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যও তৈরি হয়নি। সব মিলিয়ে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে তা দিয়েই চলতি মাসেই জুলাই সনদ ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া খুবই ভালো। তবে কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে হবে। অন্যথায় সংস্কার ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।  
দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে কমিশনগুলো। ওই মাসের ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এ কমিশনের সহসভাপতি করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।

ওইদিন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এই মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে এই কমিশন। 

সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬ প্রস্তাব নিয়ে প্রথম পর্বে গত ২০ মার্চ ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এ আলোচনা চলে ১৯ মে পর্যন্ত। প্রথম পর্বে ঐকমত্য হয়নিÑ এমন ২০টির মতো বিষয়কে মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার প্রস্তাব হিসেবে চিহ্নিত করে কমিশন। সেগুলোর বিষয়ে ৩০টি দলকে একসঙ্গে নিয়ে গত ৩ জুন থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়। সর্বশেষ গত বুধবার ঐকমত্য কমিশনের ১৪তম দিনের মতো সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যাওয়া একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবার মত নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধাতে উপনীত হওয়া ভালো দিক। তবে কোনো বিষয় নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে শঙ্কা। আবার এক বিষয় নিয়ে ঘুরিফিরে একাধিকবার আলোচনায় বিরক্তি প্রকাশ করেন অনেকে। 

তারা আরও জানান, ঐকমত্য কমিশনে আসা প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করে জুলাই সনদ দ্রুত ঘোষণা করা প্রয়োজন। কারণ নির্বাচনের সময়ক্ষণ ঘনিয়ে আসছে, সরকার দিনদিন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, মাঠে রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য বাড়ছে, জুলাই স্পিরিটও আগের মতো নেইÑ সব মিলিয়ে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও জুলাই সনদ ঘোষণা সংকটের মধ্যে পড়বে। 

সার্বিক বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে হবে; সেটা ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো প্রক্রিয়ায়। বড়জোর ৩১ জুলাইয়ে যেতে পারি।

এখন পর্যন্ত বড় যেসব বিষয়ে ঐক্য: জরুরি অবস্থা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়াও এ যাবৎ রাষ্ট্রের মৌলিক যেসব সংস্কার প্রস্তাব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো হলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন; এতে অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন। 

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব: এতে সরকারি হিসাব, অনুমিত হিসাব, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিÑ এই চারটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ সংসদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধী দলের মধ্য থেকে দেওয়া হবে। অর্থাৎ বিরোধী দলগুলো সংসদে যে কটি আসন পাবে, তার অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ পাবে।

নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ: এ বিষয়ে আশু এবং দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান; হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ ও পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নি¤œ আদালত স্থানান্তর।

যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি: আলোচনা হলেও ঐকমত্য হয়নি এমন বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি (এনসিসির পরিবর্তে নতুন প্রস্তাব); বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে অন্য যেকোনো কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে হয়। এতে নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগও  প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করার বিধান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষমতা কমানোর জন্য সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা এই তিন অঙ্গের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যা বললেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একমত হওয়া যাবে না। দায়িত্বশীল, জবাবদিহিমূলক সরকার আমরা তৈরি করব নাÑ এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এটা থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা সংস্কার আবশ্যক। কিন্তু সরকার এই সংস্কার করতে অনেক দেরি করে ফেলছে। এটা গত ডিসম্বরের মধ্যে শেষ করতে পারলে ৫ আগস্টের স্পিরিট ও সরকারের গ্রহণযোগত্যাকে আরও কাজে লাগানো যেত। এখন সরকারের গ্রহণযোগত্যা যেমন কমেছে, তেমনি অভ্যুত্থানের স্পিরিটও কমে আসছে। তাই সংস্কার দ্রুত করতে পারলে সরকার ও আমাদের সবার জন্য মঙ্গল। 

ঐকমত্য কমিশনের পদ্ধতিগত কিছু সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা ইস্যুতে কতগুলো দল একমত হয়েছে তাতে টিক চিহ্ন দেওয়া, এটা হচ্ছে মূল সমস্যা। বাংলাদেশে যতটা রাজনৈতিক দল রয়েছে, তাদের মধ্যে সব দলের গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা, স্ট্রাগল সমান নয়। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন সবাইকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে, এটাই মূল সমস্যা। উচিত ছিল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা। সব দলের সঙ্গে কথা বলায় প্রধান অনেক বিষয়ে একমত হওয়া যাচ্ছে না। আবার প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, অভ্যুত্থানের এক বছর যেতে না যেতেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। এখন দেশে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঐক্য প্রয়োজন। সব দলের ঐক্য ছাড়া সংকট ও ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসা যাবে না। দেশে সবাই মিলে একটা ঐক্যের পরিবেশ দরকার।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!