ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ

সরকারের প্রশংসা করলেও শর্ত নিয়ে প্রশ্ন বিএনপির

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০১:৫৪ এএম

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নির্ধারণ করায় অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি প্রশ্নও রেখেছে বিএনপি। বিষয়টিকে ‘দেশের জন্য ভালো খবর’ উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এই সুবিধার বিপরীতে সরকার কী শর্তে সম্মত হয়েছে, তা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের প্রকৃত প্রভাব বোঝা সম্ভব নয়।


যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা প্রধান শিল্পপণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) এক ঘোষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের রপ্তানি খাত পর্যাপ্ত ভর্তুকি পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মার্কিন পণ্যের জন্য বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়।


এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে তীব্র চাপ তৈরি করে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক রপ্তানিবাজার, যেখানে ২০২৪ সালে প্রায় ৯.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য গেছে।
এই শুল্ক এখন কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে, যা গত সপ্তাহে জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এক পার্শ্ব আলোচনার সূত্র ধরে কার্যকর হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা আপাত স্বস্তি পেলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে গভীর ও দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত আপাতত দেশের রপ্তানি খাতের জন্য স্বস্তির বার্তা হলেও এর প্রকৃত লাভ-লোকসান নির্ভর করছে এর পেছনের কূটনৈতিক সমঝোতার শর্তাবলির ওপর। একদিকে বিএনপি সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছে, অন্যদিকে একই দলের নীতিনির্ধারকেরা স্বচ্ছতা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। যা বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে দ্বিমাত্রিক করে তুলেছে।


সরকার দায়িত্ব পালন করেছে
গতকাল শুক্রবার বিকেলে উত্তরা আজমপুরে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ (গতকাল শুক্রবার) একটা ভালো খবর আছে, কয়েক দিন আগে আপনারা দেখেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ করেছে। ওটা কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে। সে জন্য আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই দেশের মানুষ যেন দ্রুত একটা নির্বাচিত সংসদ পায়। তবে এই সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তারা সংলাপ শেষ করেছে এবং রপ্তানি বাজার রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে, এটা ইতিবাচক।


এর বিনিময়ে কী দিতে হয়েছে, জানি না
এদিকে একই দিন গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ অন্তত আপাতত আমাদের রপ্তানি বাজার বাধাগ্রস্ত করবে না। তবে এর বিপরীতে সরকার কী শর্ত দিয়েছে, সেটি না জানা পর্যন্ত এর প্রকৃত প্রভাব বলা যাবে না।


তিনি জানান, পাকিস্তানে ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামে ২০ শতাংশ, ভারতে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক রয়েছে। এই দিক থেকে আমরা প্রতিযোগিতায় খারাপ অবস্থায় নেই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কী শর্তে আমরা এই ছাড় পেয়েছি?


শুল্ক হ্রাসের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রস্তাব নিয়েও প্রশ্ন তুলে আমীর খসরু বলেন, বাণিজ্য সচিব বলেছেন যে বোয়িং কেনা হতে পারে। সেটা যদি এই শুল্ক হ্রাসের অংশ হয়, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও জাতীয় স্বার্থ কতটা সুরক্ষিত থাকল, সেটা আলোচনার বিষয়।
আমীর খসরু বলেন, আমরা শুধু আমেরিকানির্ভর হয়ে থাকতে পারি না। আমাদের বাজারবৈচিত্র্য আনতে হবে। এটাই আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে আমাদের দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, বিধিবিধান সংস্কার করে রপ্তানিনীতিকে টেকসই করতে হবে।