অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল গগনচুম্বী। জনগণ আশা করেছিল, নতুন অন্তর্বর্তী সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করবে, অর্থনীতিকে গতিশীল করবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া ছিল একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া এবং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়া।
এক বছর পর যদিও কয়েকটা অর্থনৈতিক সূচকের কিছুটা উন্নতি করেছে, অধিকাংশ সূচকই এখনো আগের দুর্বল অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কিছু ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে অর্থনীতি উপকৃত হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে আলোচিত দিক ছিল বিভিন্ন খাতে সংস্কার উদ্যোগ। যদিও সরাসরি অর্থনৈতিক খাতে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়নি, পরিকল্পনা উপদেষ্টা একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল সমতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক কৌশল তৈরি করা। এই টাস্কফোর্স রিপোর্টে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হলেও সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো স্বল্পমেয়াদে কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখায়নি।
বিগত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অনেক কম। অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা বজায় রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রাথমিক উৎসাহ ছিল, তা ধীরে ধীরে কমে গেছে। তাদের জীবনের গুণগত পরিবর্তন হয়নি, হওয়ার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। সরকার থেকে যা বলা হয়েছিল, তা বাস্তবে রূপ পায়নি। অনেক ক্ষেত্রেই বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে, যা মানুষকে আশাহত করেছে।
তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার বিকল্প নেই। অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদেরই নিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :