সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে সাদাপাথর উদ্ধার করেছে পুলিশ। বালু এবং ত্রিপল দিয়ে ঢেকে আনুমানিক ৫০ ট্রাক পাথর লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রতিটি ট্রাকে প্রায় ৬০০ ঘনফুট করে মোট ৫০ ট্রাক আনুমানিক ৩০ হাজার ঘনফুট পাথর ছিল।
পুলিশ জানায়, গত রোববার রাত ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিপরীতে ধলাই নদীর তীরে দক্ষিণ বুড়দেও এলাকায় বালু ও ত্রিপলে ঢাকা অবস্থায় পাথরগুলোর সন্ধান মেলে।
জানা গেছে, ভোলাগঞ্জ থেকে পাথরগুলো এনে লুকিয়ে রাখেন উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আবুল বাশার বাদশা ও তার ভাগ্নে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরমান আহমদ।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার এবং এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত বৃহস্পাতবার সিলেটে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সাদাপাথর থেকে লুট হওয়া প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অভিযানে ১৩০টি পাথরবাহী ট্রাকে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় ৭০টি ট্রাকে লুটের পাথর পাওয়া যায় এবং সেগুলো জব্দ করা হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট। জব্দকৃত এ পাথর সাদাপাথরে নিয়ে পুনরায় ফেলা হচ্ছে। গত বুধবার রাতেও কোম্পানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে আরও প্রায় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছিল। ওই পাথর রাতেই সাদাপাথর এলাকায় পুনস্থাপন করা হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা জানান, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও পরিবেশ বাঁচাতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, মজুদ বা পাচারে জড়িত কেউ ছাড় পাবেন না। গত বুধবার রাতে সিলেটের বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় পাথর লুটপাট বন্ধ, লুটের পাথর উদ্ধার করে পুনস্থাপনসহ পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সাদাপাথর ও জাফলং এলাকায় যৌথ বাহিনীর ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন ছাড়াও, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্টে দায়িত্বেও থাকবে যৌথ বাহিনী। এ ছাড়া অবৈধ স্টোন ক্রাশার মেশিনের বিরুদ্ধে অভিযান ও পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
ইউপি চেয়ারম্যান আটক : সাদাপাথর থেকে পাথর লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন আটক করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ভোরে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি। ওসি জানান, আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে অন্য একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে রাজধানী ঢাকার ডেমরা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ভোলাগঞ্জ থেকে লুট হওয়া ৪০ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর। র্যাব, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে গত বৃহস্পতিবার রাতে ডেমরার সারুলিয়া শুকুরসী ঘাট এলাকার সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে আস্ত ও ‘ক্রাশড’ এসব পাথর জব্দ করা হয়।