ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ঐক্য পরিষদের আন্দোলন এনবিআরে সাময়িক বরখাস্ত আরও ৯ কর্মকর্তা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০২:০৯ এএম
  • সাময়িক বরখাস্ত ৩৬, দুদকে ১৬ জনের তদন্ত 
  • দাপ্তরিক কাজ ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বাধা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনের জের ধরে গতকাল দুই ধাপে ৯ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অফিসের ‘দাপ্তরিক কাজে বাধা দেওয়া ও সংগঠনের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করায় এই সিদ্ধান্ত’ গ্রহণ করেছে এনবিআর। গতকাল সোমবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) এক আদেশে তাদের বরখাস্ত করা হয়।

গতকাল দুপুরের পরে চারজনকে বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেনÑ সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু, খুলনার মোংলার কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার আবুল আলা মোহাম্মদ আমীমুল ইহসান খান, চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির যুগ্ম কমিশনার সানোয়ারুল কবির ও খুলনার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম। 

পরে সন্ধ্যায় আরও পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেনÑ আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সোহেলা সিদ্দিকা, ঢাকা কর অঞ্চল-৭ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার সুলতানা হাবীব, ফরিদপুর কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মো. মেজবাহ উদ্দিন খান, দিনাজপুর কর অঞ্চলের পরিদর্শী রেঞ্জ-২ এর যুগ্ম কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া ও সিআইসির পরিচালক চাঁদ সুলতানা চৌধুরানী। তাদের বরখাস্তের আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে। এনবিআর ঐক্য পরিষদের আন্দোলনের জেরে এ পর্যন্ত ১৩১ সহকারী কর কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে।

আন্দোলনের জেরে গত দেড় মাসে এনবিআর সদস্য থেকে প্রহরী পদবি পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান চার কর্মকর্তার বরখাস্তের পৃথক চারটি আদেশে সই করেন। 

এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সরকার কর্তৃক গত ১২ মে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারির পর এর বিরোধিতা করে এনবিআর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের কর্মচারীদের কর্মসূচি চলাকালে দায়িত্বরত কর্মচারীদের দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনে বাধা প্রদান করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কাজ ত্যাগ করে রাজস্ব ভবনে আসতে বাধ্য করতে সংগঠকের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তাই তাদের (৯ কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা-৩৯ (১) অনুযায়ী তাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’ চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সাময়িক বরখাস্তকালীন তারা বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।’

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত মাসে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছে, বরখাস্তরা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং অনেকেই নেতৃত্বও দিয়েছেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়।

গত মে ও জুন মাসে রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে এনবিআর।

১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাÑ এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি হয়। এর পর থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারে দাবিতে প্রায় দেড় মাস আন্দোলন করেন। তবে আন্দোলন প্রত্যাহারের পর এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। 

কাজ বন্ধ রাখার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এনবিআরের ২ সদস্যসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাদের অধিকাংশই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।