ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

চাঁদের পাথরও হয়েছিল চুরি!

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০২:১৩ এএম

সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন এলাকার পাথর চুরি নিয়ে সম্প্রতি দেশে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। পাথর চোর চক্রের অনেককে গ্রেপ্তার এবং চুরি যাওয়া পাথর উদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে। বিষয়টির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চাঁদের পাথর চুরি হচ্ছেÑ এমন মজার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে জানলে অবাক হবেন, চাঁদের পাথর কিন্তু সত্যি সত্যিই চুরি হয়েছিল! সেটা অবশ্য চাঁদে গিয়ে নয়; চাঁদ থেকে পৃথিবীতে আনা পাথরই হয়েছিল চুরি। 

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে ২৩ বছর আগে, ২০০২ সালের জুলাই মাসে। অ্যাপোলো অভিযানের সময় চাঁদ থেকে সংগৃহীত পাথরের নমুনা সংরক্ষিত আছে নাসায়। সেখান থেকেই চাঁদের পাথর চুরি করেছিলেন থাড রবার্টস নামের ২৪ বছর বয়সি এক তরুণ। থাড উটাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা, ভূতত্ত্ব এবং ভূপদার্থবিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে নাসায় শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করেন। নাসায় থাডের সঙ্গে আলাপ হয় ‘টিস্যু কালচার’ পরীক্ষাগারে কর্মরত ২২ বছর বয়সি টিফানি ফাউলারের। দ্রুত প্রেমে পরিণত হয় তাদের বন্ধুত্ব। একত্রবাসও শুরু করেন তারা। এ সময় টিফানিকে চাঁদে গিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত সময় কাটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন থাড। এর পরেই নাসায় থাকা চাঁদের পাথর চুরির ফন্দি আঁটেন তিনি। একটি উল্কাপি- চুরিরও উদ্দেশ্য ছিল তার। 

২৪ বছর বয়সি থাড ঠিক করেছিলেন রাতের অন্ধকারে চাঁদের পাথর চুরি করবেন। অ্যাপোলো অভিযানে গিয়ে চাঁদ থেকে সংগ্রহ করা অমূল্য পাথরটি সে সময় হিউস্টনের জনসন স্পেস সেন্টারে একটি ৬০০ পাউন্ডের আলমারিতে তালাবন্ধ ছিল। ৭ দশমিক ৭ কেজি ওজনের পাথরটির তখনকার মূল্য ছিল দুই কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। নাসার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থাকা চাঁদের সেই পাথর চুরির ফন্দি আঁটেন থাড। নিজের এবং সঙ্গীদের জন্য নাসার বিজ্ঞানীদের ব্যাজ জোগাড় করেছিলেন। কিনেছিলেন বিশেষ পোশাকও। চুরির কাজে প্রেমিকা টিফানিকেও পার্টনার বানিয়েছিলেন থাড। সঙ্গী ছিলেন শে সোর নামে নাসার আরেক শিক্ষানবিশও। জুলাইয়ের এক সন্ধ্যায় এই তিনজন মিলে জনসন স্পেস সেন্টারের ৩১ নম্বর ভবনে পৌঁছান। সেখানেই রাখা ছিল চাঁদের ওই পাথর।

থাড এবং টিফানি চুরি করতে ভেতরে ঢুকেছিলেন। শে বাইরে থেকে নজর রাখছিলেন নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলোর দিকে। নিওপ্রিন পোশাক পরে বায়ুশূন্য কক্ষে যান থাড এবং টিফানি। চাঁদের পাথরগুলো যে আলমারিতে ছিল সেই আলমারি নিয়েই পালিয়ে যান তারা। পরে আলমারি ভেঙে পাথরগুলো নিয়ে নেন। শুধুই যে প্রেমিকাকে দেওয়া কথা রাখার জন্য চাঁদের পাথর চুরি করেছিলেন থাড, বিষয়টি এমন নয়। পরবর্তীতে এফবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে, থাডের চাঁদের পাথর চুরির ঘটনাটি আর্থিকভাবেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। বেলজিয়ামের এক ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। ওই পাথরের প্রতি গ্রামের জন্য নাকি পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি ছিলেন তিনি। থাড চাঁদের পাথর নিয়ে বাড়ি ফিরে বিছানার তলায় পাথর রেখে একান্তে সময় কাটান প্রেমিকা টিফানির সঙ্গে। ফলে প্রেমিকাকে দেওয়া কথা রাখেন তিনি। 

এদিকে চাঁদের পাথর চুরি হওয়ার ঘটনায় নাসায় হইচই পড়ে যায়। খোঁজ খোঁজ রব ওঠে চারদিকে। তদন্তে নামে পুলিশ-এফবিআই। কয়েক দিন পর থাড চাঁদের পাথর বিক্রির উদ্দেশ্যে বেলজিয়াম যান। দেখাও করেন ওই ক্রেতার সঙ্গে। কিন্তু পাথরগুলো নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন ক্রেতা। এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। এরপরই থাডকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। কয়েক দিনের মধ্যেই থাড এবং তার সঙ্গীরা ধরা পড়েন। গ্রেপ্তারের পর থাড অপরাধ স্বীকার করে নেন। উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি সল্ট লেক সিটির প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর থেকে ডাইনোসরের হাড় এবং জীবাশ্ম চুরি করার কথাও নাকি স্বীকার করেন।

পাথর চুরির দায়ে আট বছরের জেল হয়েছিল থাডের। তবে ছয় বছরের বেশি সময় কারাবাস ভোগের পর ২০০৮ সালে মুক্তি পান তিনি। অন্য দিকে, টিফানি এবং শেও নিজেদের দোষ স্বীকার করেছিলেন। তাদের ১৮০ দিনের গৃহবন্দি এবং ১৫০ ঘণ্টা সমাজসেবার আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়াও ক্ষতিপূরণ হিসেবে নয় হাজার ডলারেরও বেশি নাসা কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয় তাদের।

তবে যার জন্য পাথর চুরি করেছিলেন থাড, গ্রেপ্তারের পর সেই টিফানির সঙ্গে আর কখনো দেখা হয়নি তার। ভালোবাসার দায় থেকে ঘটানো অসাধ্য সাধনের পরও তাদের প্রেম পরিণতি পায়নি। ২০১১ সালে এ ঘটনা নিয়ে ‘সেক্স অন দ্য মুন’ নামে একটি বই লেখেন মার্কিন কথাসাহিত্যিক বেন মেজরিচ। ওই বইয়ে এ ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করা আছে।

২০০৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে থাড বলেছিলেন, ভালোবাসার জন্যই ওই চুরি করেছিলেন তিনি। তার কথায়, ‘আমি টিফানির প্রেমে পড়েছিলাম। যা করেছিলাম ভালোবাসার জন্য করেছিলাম। ভেবেছিলাম প্রেমিকাকে চাঁদ এনে দেব। সেটা করেছি, চাঁদের পাথর সঙ্গে নিয়ে দুজন মিলিতও হয়েছি।’