- না জানার দাবি মন্ত্রণালয়ের
- আওয়ামী পুনর্বাসনে মরিয়া ফরিদুজ্জামান-শামসুল
- টাকার বিনিময়ে ৯ জন রিপোর্টার নিয়োগের অভিযোগ
দেশের প্রায় প্রতিটি জায়গা থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ও তাদের আস্থাভাজনদের যখন বিতাড়িত করার কাজ চলছে, তখন পুরো উল্টো চিত্র দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় চ্যানেল বিটিভি বার্তা শাখায়। ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে চিহ্নিত অনেক কর্মকর্তা এখনো বিটিভিতে বহালতবিয়তে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, কোনো সার্কুলার ছাড়া রিপোর্টার ও প্রেজেন্টার নিয়োগ দিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। কখনো মন্ত্রণালয়ের, কখনো প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের কথা বলে এ চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন বিটিভির হয়ে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার প্রেস উইংয়ের সদস্য মুন্সি ফরিদুজ্জামান ও জুলাই ছাত্র আন্দোলন নিধনে বিটিভিতে গঠিত কমিটির প্রধান এবং বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে যুক্ত নির্বাহী প্রযোজক শামসুল আলম।
কোনো নিয়োগপত্র ছাড়া শুধু টাকার বিনিময়ে বিটিভির বার্তা বিভাগে কয়েকজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ জানা গেছে। এরই মধ্যে সাদ্দাম হোসেন, মিরাজ, শারমিনসহ ৯ জন রিপোর্টার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে; যাদের কাউকেই দেওয়া হয়নি নিয়োগপত্র। অথচ বিটিভির মাইক্রোফোন দিয়ে পাঠানো হচ্ছে নানা কাজে। সম্প্রতি ইসমাত জেরিন নামের এক নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেত্রীকে নিয়োগ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোপের মুখে পড়ে বিটিভি কর্তৃপক্ষ।
মুন্সি ফরিদের অবস্থান ধরে রাখতে আস্থাভাজন নির্বাহী প্রযোজক শামসুল আলমকে বিটিভির পক্ষ থেকে যুক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে। নিয়ম ভেঙে নিউজের কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে। এ ক্ষেত্রেও নাম ভাঙানো হয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংকেÑ এমনটাই সূত্রের খবর।
শামসুল আলম তাদের আস্থাভাজন হওয়ার কারণ, ২০২৪ সালের ৭ জুলাই বিটিভি কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের আন্দোলন দমনে এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ. আরাফাতের নির্দেশে মিথ্যা প্রোপাগান্ডার যে সংবাদ প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেখানে শামসুল আলমকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়, যার স্মারক নম্বর ১৫.৫৪.৩০২৫০.২৫.১৮.০০২.২২.১৫৭।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিটিভির একজন কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এরই মধ্যে ৯ জন রিপোর্টার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সার্কুলার ছাড়াই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবগত নয়। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। শিল্পী সম্মানী থেকে তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে, যা পুরোটাই বেআইনি।
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে বিটিভি নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক মুন্সি ফরিদুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। এর আগে তিনি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেছিলেন, হাসানুল হক ইনু ও হাছান মাহমুদের আস্থাভাজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেত্রী প্রেজেন্টারসহ অনেকেই এখনো বিটিভিতে সংবাদ পড়ছেন। এটা বাদ দেওয়ার তার এখতিয়ার নেই।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও নির্বাহী প্রযোজক শামসুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই অভিযোগ সত্য নয়। এমন প্রশ্নে আমি হতভম্ব। কে বা কারা এ ধরনের তথ্য ছড়ায়, আমি জানি না। কিন্তু এ ধরনের কাজ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে সম্ভব নয়।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যখনই কোনো পদোন্নতি বিটিভি থেকে যায়, তখনই এ ধরনের হ্যারাসমেন্ট শুরু হয়। এগুলোর পেছনে কারা আছেন, জানতে চান তিনি। গত সরকারের আমলেও বিভিন্নভাবে তাকে চাপে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। তবে কিছু না পাওয়ায় তাকে আটকাতে পারেনি বলে দাবি করেন শামসুল আলম। তার ভাষায়, ‘যে ৯ জন রিপোর্টার নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমি অবগত নই। আমি এর সঙ্গে জড়িতও নই। সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সুযোগ নেই। অভিযোগের প্রমাণ চাই।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে মন্তব্য করতে অনাগ্রহ জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং সচিব মাহবুবা ফারজানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ১১ আগস্ট দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে ‘বিটিভি নিউজ এখনো হাসিনার আস্থাভাজনদের নিয়ন্ত্রণে’ খবর প্রকাশের পর বিটিভি নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক মুন্সি ফরিদুজ্জামান ও বিটিভির উপমহাপরিচালক (বার্তা) ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদসহ জড়িতদের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তলব করেছে বলে জানা গেছে।