ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

চলতি সপ্তাহে নির্বাচনি  রোডম্যাপ ঘোষণা - জানালেন ইসি সচিব 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০১:২২ এএম
  • ২৪ আগস্ট থেকে সীমানা নির্ধারণ শুনানি শুরু 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা নির্বাচনি রোডম্যাপ চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)  সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে গতকাল সোমবার নিজ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

আখতার আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনি রোডম্যাপের বিষয়ে আমরা বলেছিলাম, তা এই সপ্তাহেই ঘোষণা দেব। ইতোমধ্যে এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন কমিশনে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। কর্মপরিকল্পনা মূলত আন্তঃঅনুবিভাগীয় এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু সমন্বয়ের পর আমরা আশা করছি, এ সপ্তাহেই চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রকাশ করা সম্ভব হবে’।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা তো পরবর্তী বিষয়। আসল কথা হলোÑ সংশ্লিষ্ট সবাই যদি নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন, তবে কোনো সমস্যা হবে না। নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত প্রশাসন নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে আমি মনে করি’।

মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় কীভাবে হবে, ফোকাল পার্সন এখান থেকে নির্ধারণ, পরিপত্র ও নির্দেশনা ইস্যু ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে মিটিং চলছে। আমরা চেষ্টা করছি কোঅর্ডিনেট করে সময়ের আগেই কাজগুলো গুছিয়ে রাখতে’।

এনআইডি সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘সোমবারের (গতকাল) মাসিক সমন্বয় সভায় এ-সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এনআইডি কারেকশনের জন্য যেসব আবেদন বাতিল হচ্ছে, আবেদনকারীরা আবার তা সংশোধনের জন্য জমা দিচ্ছেন। আমাদের দৃষ্টিতে কোনো তথ্য গ্রহণযোগ্য না হলে তা বাতিল করা হয়, তবে আবেদনকারীর দৃষ্টিতে তা সঠিক হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের আপিলের সুযোগ রয়েছে এবং সেই আপিল অনুযায়ী আমরা নিষ্পত্তি করছি’।

ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাসিক সমন্বয় সভায় ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হবে না। তবে অতীতের কেন্দ্রগুলো হুবহু রাখা হবে না; যৌক্তিক প্রয়োজন থাকলে সমন্বয় করা যাবে। জাতীয় নির্বাচনে প্রতি ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ভোটারের ব্যবস্থা রাখা হয়। উদাহরণস্বরূপ বর্তমানে প্রতি বুথে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৫০০। এটিকে ৬০০ করা হলে সহজেই সামঞ্জস্য করা যাবে’।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘২২টি দলের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। যাদের আবেদন বাতিল বা বিবেচনাযোগ্য নয় তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হচ্ছে। এবার স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হবে, কোনো কারণে বা কোনো শর্ত পূরণ না করায় তাদের আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়নি’।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই কাজগুলো আগেই শেষ করতে, যাতে সবার সুবিধা হয়। শেষ মুহূর্তে হুড়োহুড়ি করে কাজ করতে না হয়। আগে থেকে করলে সমন্বয় ভালো হয়। যেমন ভোটকেন্দ্র নীতিমালা এখন থেকেই পর্যালোচনা করা সম্ভব হচ্ছে। কোনো বিষয়ই চূড়ান্ত নয়; প্রয়োজন হলে পরিবর্তন হতে পারে। তবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যেটা আগামীকাল করার কথা, তা যদি আজকেই করে রাখা যায়, তাহলে আগামীকাল আরও ভালোভাবে কাজ করার সুযোগ থাকবে’।

২৪ আগস্ট থেকে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের শুনানি শুরু: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনি এলাকাগুলোর পুনর্নির্ধারিত সীমানা সম্পর্কে আপত্তি বা পরামর্শ দাখিল করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই আগামী ২৪ আগস্ট থেকে ‘মোট ৮৩টি আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে আপত্তি শুনানি শুরু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি); যা চলবে আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত থাকবেন শুনানিতে।

২৪ আগস্ট কুমিল্লা অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি করা হবে। এদিন দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ৩ ও ৫; আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কুমিল্লা-৬, ৯, ১০ ও ১১; সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, চাঁদপুর-২ ও ৩, ফেনী-৩, লক্ষ্মীপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি হবে।

২৫ আগস্ট খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এ দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা-৩, ৪, যশোর-৩, ৬, বাগেরহাট-১, ২ ও ৩; আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঝালকাঠি-১, বরগুনা-১, ২, পিরোজপুর-১, ২, ৩, চট্টগ্রাম-৩, ৫, ৮, ১৯, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান আসনের শুনানি হবে।

২৬ আগস্ট ঢাকা অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ-১, ২, ৩, নরসিংদী-৪, ৫, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪, ৫; আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ১০, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮ ও ১৯ আসনের শুনানি হবে।

২৭ আগস্ট রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও সিলেট অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড়-১, ২, রংপুর-১, কুড়িগ্রাম-৪, সিরাজগঞ্জ-২, ৫, ৬, পাবনা-১; আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৬, জামালপুর-২, কিশোরগঞ্জ-১, সিলেট-১, ফরিদপুর-১, ৪, মাদারীপুর-২, ৩, শরীয়তপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।