ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

পাথরকাণ্ডে ওএসডি সিলেটের ডিসি

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০১:৩০ এএম
  • নতুন জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম
  • এসপি, ইউএনও, ওসি প্রত্যাহারের গুঞ্জন

পাথরকাণ্ডে সমালোচনার মুখে সিলেট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে। তার জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দেশব্যাপী ভেজাল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমকে। বর্তমানে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত উপসচিব। গতকাল সোমবার সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে তাকে সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শিগগিরই তিনি সিলেটে যোগ দেবেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে সিলেট থেকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

এদিকে পাথরকাণ্ডে সিলেটের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের যোগসাজশের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসার পর সমালোচনার মুখে পড়েন সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর ইউএনও ও থানার ওসি। বিশেষ করে সাদাপাথর লুটের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি। বিষয়টিতে সরকারের উপর মহলও বিব্রত হয়। গত রোববার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও স্বীকার করেন, পাথরলুটে প্রশাসনের যোগসাজশের কথা। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) দাবি করে, সিলেটের সাদাপাথর লুটপাটে প্রশাসনও দায়ি। স্থানীয় প্রশাসন নিজের দায় এড়াতে পারে না। তাদের চোখের সামনেই এত বড় কা- ঘটে গেছে।

এরপরই গতকাল সোমবার সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহারকে ফেঞ্চুগঞ্জে এবং ফেঞ্চুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে কোম্পানীগঞ্জে বদলি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বদলির আদেশের পর সিলেটের প্রশাসনে সমালোচিত শীর্ষ কর্তাদের মাঝেও বিরাজ করছে বদলি আতঙ্ক। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, যেকোনো সময় সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান এবং থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানকে তাদের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হতে পারে।

সিলেট গণদাবি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন, এটা স্পষ্ট যে, সাদাপাথরসহ সিলেটের পাথরকোয়ারি থেকে নির্বিচারে পাথর লুটের পেছনে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের ব্যর্থতা দায়ি। শ্রমিকদের দায় দিলেও তারা পারিশ্রমিকে কাজ করে। আসল কালপিট যারা লুটেরা সিন্ডিকেটে আছে তারা। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবিÑ কেউ দায় থেকে বাদ নয়। আমরা পাথরলুটে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। এত বড় ঘটনার পর কেউ ছাড় পেলে এমন ঘটনা আগামীতে ঘটতেই থাকবে। সরকারের উচিত হবে না, বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া।

পাথরকাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ওজায়ের আল মাহমুদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার। বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসন সরাসরি জড়িত। তাদের সামনে পাথর লুট হলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। তবে উপরের আনুকূল্য না থাকলে তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে পারতেন। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের ব্যর্থতার জন্য তাদের উপর মহলও দায়ি। তারা যথাসময়ে শক্ত ভূমিকা রাখলে পাথর লুট হতো না। গণমাধ্যমের সংবাদে বিভিন্ন সূত্র থেকে লুটেরাদের সুযোগ দিতে স্থানীয় ও জেলার প্রশাসন এবং পুলিশের দুর্বলতার ছবি ফুটে ওঠে। দাবি করা হয়, পুলিশ-বিজিবির মতো অনৈতিক সুবিধা পেত প্রশাসনও। নিয়মিত মাসোহারা যেত উপজেলা থেকে উপর মহল পর্যন্ত। এ কারণে পুরো সাদাপাথর, সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকা, ধলাই নদী, শাহ আরেফিন টিলা লুটেপুটে সাবাড় করে দিলেও তারা ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। বিভিন্ন সূত্র মতে, ‘বিশেষ সুবিধা’ নিয়ে জেলা প্রশাসন সিলেটের পাথরকোয়ারি ও বালুমহালগুলো ধ্বংসের জন্য লুটেরাদের সুযোগ করে দিয়েছে।

সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জের ওসি ওজায়ের আল মাহমুদ আদনান সিলেট থেকে প্রত্যাহার হওয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী। ফলে জেলা প্রশাসকের ছায়ায় আদনান কোম্পানীগঞ্জে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। পাথরলুটে সুযোগ করে দিতে তিনি পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা।