- ন্যাটোতেও যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন
- ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বেগ
- ইউক্রেনের নিরাপত্তায় ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর মতো ভাষা ব্যবহারের সম্ভাবনা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ইস্যুতে গতকাল সোমবারের বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলেনস্কিকে ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল ছাড়ার প্রস্তাব দিতে পারেন বলে আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। অবশেষে বৈঠক শুরুর আগেই গত রোববার রাতে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে জেলেনস্কিকে অঞ্চল ছাড়তে হবে বলে পোস্ট দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলেনস্কি চাইলে তার দেশে রাশিয়ার যুদ্ধ থামাতে পারেন। তবে এর বিনিময়ে ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিতে হবে, ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। আর এটাই হবে শান্তিচুক্তির একটি অংশ’।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা একাধিকবার দাবি করেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে তারা নিরপেক্ষ এবং ট্রাম্প নিজেও এক সময় এমনটাই দাবি করতেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের পর ও ট্রুথ স্যোশালে পোস্ট দেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের ইস্যু সমাধানের বল জেলেনস্কির কোর্টেই ঠেলে দিলেন ট্রাম্প। যদিও বৈঠকের আগে এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে তা জানা যাচ্ছে নাÑ তবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব জেলেনস্কির পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব হবে কি নাÑ তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। অন্যদিকে ট্রাম্পের এই প্রস্তাবে ইউরোপীয় নেতাদেরও উদ্বেগ রয়েছে।
এদিকে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সিএনএনকে বলেছেন, ইউক্রেনকে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দিতে রাজি হয়েছেন পুতিন। ন্যাটোতে সরাসরি যোগ দিতে না পারলেও ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো অনুচ্ছেদ ৫-এর মতো ভাষা ব্যবহার করতে পারবে বলে জানান তিনি।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর হোয়াইট হাউসে হবে এ বৈঠক। হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। তারপর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর নেতা ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক হবে।
হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানাতে হোয়াইট হাউসে আসছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর শীর্ষ নেতারা।
হোয়াইট হাউস সূত্র এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, গত শুক্রবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগ পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর এ ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন ট্রাম্প। এখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে স্থায়ীভাবে যুদ্ধাবসান চান তিনি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গতকাল হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে তিনি বলেছেন, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হলে জেলেনস্কিকে অবশ্যই কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখ- হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে এবং কখনো ন্যাটোতে সদস্য পদের জন্য আবেদন না করার অঙ্গীকার করতে হবে।
এর আগে গত রোববার রাতে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন, অথবা চাইলে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। মনে রাখুন, কীভাবে সবকিছু শুরু হয়েছিল। ওবামার আমলে ক্রিমিয়া চলে গিয়েছিল (১২ বছর আগে, একটিও গুলি ছোঁড়া হয়নি!), আর ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান, সেটা একেবারেই হবে না। কিছু বিষয় কখনোই বদলায় না!’
ট্রাম্পের এই অবস্থানে স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা বিচলিত বোধ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সদস্যভুক্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপের শীর্ষ শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো ব্যাপকভাবে রাশিয়াবিরোধী। গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিত-ার মতো পরিস্থিতি আবারও তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ট্রাম্প কিছু শর্ত মানতে জেলেনস্কিকে চাপ দিতে পারেন বলেও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। তবে ওভাল অফিসে জেলেনস্কির আগের সফরের মতো পরিস্থিতি যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে এবার ন্যাটো নেতারাও সচেষ্ট।
দ্য গার্ডিয়ান আরও জানায়, সোমবারের বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখ-তার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবেন এবং ভূখ- বিনিময় পরিকল্পনার বিরোধিতা করবেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য যেকোনো সমঝোতায় ওয়াশিংটন কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে তা জানতে চাইবেন তারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের অঞ্চল ছাড়ার প্রস্তাবের আগে এক প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে ইউক্রেনের সম্মিলিত শক্তি রাশিয়াকে শান্তির পথে আনতে বাধ্য করবে। গত জুলাইয়ে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়। ওই আলাপকে জেলেনস্কি বর্ণনা করেছিলেন, ‘এটাই আমাদের মধ্যে হওয়া সেরা আলাপ।’
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার তিন দিনের মাথায় জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প। চলতি বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনে উত্তপ্ত বাগবিত-ার পর এটাই হবে তাদের প্রথম বৈঠক। তবে এবার জেলেনস্কি একা নন। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারসহ আরও কয়েকজন নেতা জেলেনস্কির সঙ্গে ওয়াশিংটনে আলোচনায় অংশ নেবেন। এ ছাড়া ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনেরও আলোচনায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।