রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৫:৫৩ এএম

আলুতে কুপোকাত কৃষক

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৫:৫৩ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কৃষিপণ্য আলুর বাজারে চলছে দ্বৈত চিত্র। হিমাগার গেটে কেজিপ্রতি মাত্র ১১ থেকে ১৩ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা পর্যায়ে তা ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় পাইকারি বাজারে দরপতন দেখা দিয়েছে, অথচ খুচরা বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রির ফলে ভোক্তাদের জনপ্রিয় এ তরকারি পৌঁছে গেছে সাধ্যের বাইরে। অন্যদিকে কৃষকরা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কৃষিপণ্য আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। উদ্যোগের মধ্যে রয়েছেÑ হিমাগার পর্যায়ে আলুর ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ, সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ আলু কেনা, প্রান্তিক কৃষকের আলু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেনা এবং ভবিষ্যতে উৎপাদন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রণোদনা দেওয়া।

এই প্রেক্ষাপটে কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত ও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান এবং অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এই সভার কার্যপত্র রূপালী বাংলাদেশ পেয়েছে।

এই বিষয়ে কৃষি সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, কৃষকের ক্ষতি রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আলু চাষ নিরুৎসাহিত হতে পারে। তিনি কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণে হিমাগার গেটে দাম বেঁধে দেওয়া এবং প্রণোদনা দেওয়ার ওপর জোর দেন।

উৎপাদন, চাহিদা ও ব্যয়

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালে দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ লাখ মেট্রিক টন বেশি।

এবার প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে গড় খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ টাকা ১৭ পয়সা। সংরক্ষণ ব্যয় হিসেবে হিমাগারে স্থানভেদে প্রতি কেজি প্রায় ৬ টাকা থেকে ৬.৩০ টাকা এবং পরিবহন ও অন্যান্য খরচ হিসেবে আরও দেড় থেকে দুই টাকা যুক্ত হওয়ায় মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা। অথচ হিমাগারের গেট থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে ১১ থেকে ১৩ টাকায়। খুচরা বাজারে মূল্য থাকলেও এই লোকসানের মূল বোঝা বহন করছেন কৃষকরা।

মজুদ পরিস্থিতি

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে আগস্ট মাস নাগাদ দেশে প্রায় ৩১ থেকে ৩৯ লাখ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। সে হিসেবে নতুন মৌসুমের আলু বাজারে আসার আগ পর্যায়েÑ অর্থাৎ আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত এ চাহিদা। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, জনপ্রতি ৭১ গ্রাম/দিবস হিসেবে। এই তুলনায় প্রায় ১.৯৫ লাখ মেট্রিক টন আলু বেশি মজুত রয়েছে।

অন্যদিকে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী হিমাগারে বীজ আলুসহ প্রায় ২৮ দশমিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টন আলু মজুত আছে। যা ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাজারের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। তবে হিমাগার থেকে আলু উত্তোলনের হার কম থাকায় আগামী মৌসুমে নতুন আলু সংরক্ষণে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

সচিবদের মতামত

সভায় বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, আলু পচনশীল পণ্য হওয়ায় টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) মাধ্যমে কার্ডহোল্ডারদের কাছে আলু বিক্রি করার সুযোগ সীমিত। তবে ট্রাক সেলের মাধ্যমে বিক্রি করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে। তাই আলুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বিকল্প চিন্তা করা প্রয়োজন।

খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান প্রস্তাব করেন, স্কুল ফিডিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে আলু অন্তর্ভুক্ত করা হলে একদিকে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে কৃষকের ন্যায্য মূল্যও নিশ্চিত করা যাবে। তবে তিনি ওএমএসের মাধ্যমে আলু বিক্রি করার সুযোগ খুবই সীমিত বলে জানান। তিনি বাণিজ্য সচিবের সাথে একমত পোষণ করে আলুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে বিকল্প পন্থার ওপর গুরুত্ব দেন।

কৃষি সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, কৃষক পর্যায়ে বিক্রির ক্ষেত্রে আলুর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এর মলে ভবিষ্যতে আলু চাষ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। অবে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার্থে হিমাগার গেটে দাম বেঁধে দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে আলু কেনা হলে মূল্য কমার প্রবণতা কমতে পারে বলে তিনি আশা করেন। আর আগামী মৌসুমে কী পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করা হবে তা নির্ধারণ করা এবং আলু চাষে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য বলেন।

অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বাজারে আলুর দাম কমলে ভোক্তারা খুশি হন, কিন্তু কৃষকেরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই কৃষককে সরাসরি সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে প্রকৃত কৃষকের তালিকা তৈরির ওপর জোর দিয়ে আগামী মৌসুমে আলুচাষে প্রণোদনা প্রদানের আহ্বান জানান। এ জন্য উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও কৃষি সচিবকে অনুরোধ জানান।

যে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

এ বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ হিমাগার পর্যায়ে আলুর ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি ২২ টাকা সুপারিশ করা হয়। হিমাগার গেটে আলুর বিক্রয়মূল্য নির্ধারণের কারণে ভবিষ্যতে বাজারমূল্যে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে  দেওয়া হতে পারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ খরচসহ ২২ টাকা দরে কিনে রেফার্ড পেমেন্টে একই হিমাগারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে পারবে।

একই সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাথে আলোচনা করে প্রকৃত কৃষকের তালিকা সংগ্রহ করে প্রান্তিক কৃষকের আলু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিনতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেনা আলু অক্টোবর-নভেম্বর মাসে হিমাগার থেকে উত্তোলন করে টিসিবির মাধ্যমে ট্রাক সেলের মাধ্যমে বাজারজাত করতে পারবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় আগামী মৌসুমে আলুচাষে বীজ, সার ও সেচ খাতে প্রণোদনা প্রদানের জন্য বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে। বাস্তবতা বিবেচনায় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রণোদনা প্রদান করে কৃষকের ক্ষতি লাঘবের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

রাজধানীর গাবতলীস্থ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বিভিন্ন গবেষণা ও প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বৃষ্টির জন্য সবজিখেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সবজির বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে গেলে এ সমস্যা থাকবে না। সবজির দাম বাড়তির দিকে হলেও আলুর দাম কম।

তিনি বলেন, কৃষকরা এ বছর আলুর দাম পাচ্ছে না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সে জন্য সরকারিভাবে কিছু আলু ক্রয়ের পরিকল্পনার কথা উপদেষ্টা জানান। তিনি এ সময় কৃষকদের ক্ষতি কমাতে কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে আলুর দাম নির্ধারণ করার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথাও জানান।

Link copied!