মাত্র কয়েক দিন আগে ডাকসু নির্বাচনে ভরাডুবি হয় ছাত্রদলের। ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে ছাত্রদল একটি পদেও বিজয়ী হতে পারেনি। একই অবস্থা হয়েছে জাকসু নির্বাচনেও। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল কেন্দ্রীয় সংসদের কোনো পদেই জয়ের দেখা পাওয়া দূরের কথা, প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও যেতে পারেনি। হল সংসদেও একই অবস্থা। যদিও ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে নানা অনিয়ম আর কারচুপির অভিযোগ তুলে ছাত্রদল ভোট বর্জন করেছে। প্রগতিশীল রাজনীতি ও সংস্কৃতিচর্চার চারণভূমি হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ভরাডুবি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একসময়ের আলোচিত এই ছাত্রসংগঠন এবার পুরো নির্বাচনে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদলের নিষ্ক্রিয়তা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং যোগ্য প্রার্থী না দেওয়াকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ফলাফল ছাত্রদলের জন্য শুধু একটি নির্বাচনি ধাক্কা নয়, এটি তাদের অস্তিত্ব সংকটেরও ইঙ্গিত।
ছাত্রদলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রদল প্যানেল ঘোষণা করেছে দেরিতে, মনোনয়নপ্রক্রিয়ায় ছিল দ্বিধা ও কোন্দল। অনেক হলেই তাদের প্রচার ছিল নামমাত্র। অন্যদিকে শিবিরসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই হলে হলে কাজ করেছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছে এবং তাদের দাবি-দাওয়ার পাশে থেকেছে। ফলে আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারেনি ছাত্রদল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রদলের কোনো কর্মসূচি আমরা দেখি না। অন্য সংগঠনগুলো ভালো-মন্দ যা-ই করুক, তারা মাঠে থাকে। ছাত্রদলের কোনো বক্তব্য, উপস্থিতি, এমনকি দেয়ালে পোস্টারও দেখি না। তাদের অনেক প্রার্থীর নামই আমরা প্রথম শুনেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, দীর্ঘদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটির বা ছাত্রদলের কার্যক্রম ছিল না এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়াও ঠিক হয়নি। অনেক যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কেন এত দুর্বল প্রার্থী দেওয়া হলো, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ভিপিসহ অনেক প্রার্থী অপরিচিত থাকায় তাদের ভোট দেননি।
এদিকে নির্বাচনের আগে ও পরে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও তা নির্বাচন কমিশন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বরং অনেকের ধারণা, নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা আড়াল করতেই এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে।
ফলাফল বর্জনের সময় সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন (বৈশাখী) বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এক হয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের সত্যিকার রায়ের প্রতিফলন ঘটছে না। এসবের প্রতিবাদে আমরা নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি।’
জাকসুর সাবেক ভিপি আশরাফ উদ্দিন খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ছিল অগোছালো। অনেক বছর এখানে কমিটি ছিল না। পরে সিনিয়রদের দিয়ে একটি কমিটি দিয়েছে। যার ফলাফল ভালো হয়নি।’
তবে নিজেদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই বলে দাবি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। তিনি বলেছেন, জাবি ছাত্রদলে কোনো কোন্দল নেই। উপাচার্য ছাত্রদলের অভিযোগে গুরুত্ব দেননি, তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন