সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম

সিলেটের পিবিআই

ঘুষের মধুতেই তুষ্ট তারিকুল

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম

ঘুষের মধুতেই তুষ্ট তারিকুল

নাম তার তারিকুল ইসলাম শহীদ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), সিলেট অফিসের উপপুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র)। যার বিপি নম্বর-৭৭৯৬০১৬০৪৫। ঘুষ গ্রহণের সব তরিকায় সিদ্ধহস্ত তিনি। কীভাবে বাদী-বিবাদীর পকেট থেকে অর্থ বের করতে হয়, সেই কৌশলগুলো তার বেশ জানা। অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য দুর্নাম সিলেটের পুলিশে। সিলেটের মধুর স্বাদে তিনি বেজায় তুষ্ট। যার জন্য গত এক যুগ ধরে তিনি পড়ে আছেন সিলেটে। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে আছেন সিলেট পিবিআইতে। তার চোখের সামনে দিয়ে কত অফিসার পিবিআইতে এলেন আবার চলেও গেলেন কিন্তু তিনি আছেন সেই একই অফিসে, একই পদে। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর পুলিশে ব্যাপক রদবদল হলেও তার গদি নড়েনি। কেননা অফিসের শীর্ষ কর্তার আশীর্বাদধন্য তিনি। সেই কর্তা তাকে পাশে রাখেন ছায়ার মতন। ফলে প্রায়ই একই ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে করা উভয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বা আইও নিয়োজিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। এরপর অফিসে ডেকে নেন বাদী-বিবাদী পক্ষকে। দর কষাকষিতে নেমে পড়েন উভয়ের সঙ্গে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ভুক্তভোগী বিভিন্ন জনের কাছ থেকে। ঘুষ দাবির অভিযোগ ছাড়াও কয়েকটি মামলার নথি এসেছে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের কাছে। 

সিলেট পিবিআইতে যে সিন্ডিকেট মাঠপর্যায়ে ব্যাপক তদন্ত ছাড়াই টেবিলওয়ার্ক প্রতিবেদন জমা দেয়, তিনি তাদের একজন। এমনও অভিযোগ আছে, বিবাদীর সঙ্গে কথা না বলে, তাদের কোনো বক্তব্য না নিয়ে বা কথা না শুনে বাদীর খায়েশ পূরণে গায়েবি তথ্যসহ চার্জশিট দাখিল করেন। তাদের এমন টেবিলওয়ার্ক প্রতিবেদনের জন্য আদালতের বারান্দায় বছরের পর বছর বিনা অপরাধে ঘুরছেন নিরপরাধ মানুষ। এ প্রতিবেকদকে এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে আছেন সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মীও। 

ভুক্তভোগীদের দাবিÑ ঘুষগ্রহণ, অনিয়ম-দুর্নীতিতে তারিকুল ইসলামের জুড়ি নেই। অর্থের বিনিময়ে তিনি সত্য ঘটনাকে মিথ্যায় রূপান্তরিত করেন। প্রকাশ্য তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও অবৈধ সুবিধা নিয়ে আসামিকে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন। আবার নিরপরাধ ব্যক্তির গলায় ঝুলিয়ে দেন মামলার মালা। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিস্তর। ঢাকায় হেডকোয়ার্টারের কানেও গেছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ। ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই তার বিরুদ্ধে এরইমধ্যে বিভাগীয় তদন্ত চালাচ্ছে। এরপরও তিনি থামছেন না। অদৃশ্য ইশারায় আছেন বহাল তবিয়তে। 

তারিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। সিলেটে পোস্টিং নিয়ে আসার পর এখান থেকে বদলির আগ্রহ মনের ভেতর থেকে মুছে ফেলেছেন। সিলেট পিবিআই এখন তার ঘরবাড়ি। দীর্ঘদিন একই জায়গায় থাকায় এখানে তার নিজস্ব একটি জায়গা তৈরি হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আসার পরও কোনো প্রতিকারের মুখোমুখি হতে হয় না বলে তিনি নিজের ওপর এখন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। 

বিয়ানীবাজার উপজেলার বড় শালেশ্বর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাকির হোসেন হয়রানির অভিযোগ এনে সিলেটের বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার-ডিআইজির কাছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে একটি আবেদন করেন। অভিযোগে তিনি তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলার তদন্তকালে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি এবং মসজিদের নাম করে এক লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ আনেন। সিলেটের অতিরিক্ত ডিআইজি আজিজুল ইসলাম গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পিবিআইয়ের কাছে পাঠান। ভুক্তভোগী জাকির হোসেন বলেন, ‘ইংল্যান্ড থাকাকালে আমার বাড়ি লুটপাট হলে দেশে ফিরে মামলা করি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার প্রতিপক্ষ মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করে।

পরবর্তীতে আদালত থেকে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইতে পাঠানো হয়। তদন্তের দায়িত্ব পান উপ-পুলিশ পরিদর্শক তারিকুল ইসলাম শহীদ। তিনি তদন্তভার পেয়ে ঘুষ নিয়ে আমাদের সঙ্গে দর কষাকষি শুরু করেন। এমনকি জাকারিয়া নামের অপর এক সহকর্মীকে দিয়েও দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে টাকা না পেয়ে তিনি আক্রোশমূলক প্রতিবেদন জমা দেন।’

অপরদিকে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় সংঘটিত একটি ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে দায়ের করা মামলার তদন্তভার পিবিআইতে ন্যস্ত হলে ওই দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় তারিকুলকে। সেখানেও অভিযোগ ওঠে, উভয় মামলার আইও নিযুক্ত হওয়ায় তিনি প্রতিবেদন তৈরিতে দু’পক্ষের সঙ্গে দর-কষাকষি করেন। প্রকাশ্য তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও আর্থিক সুবিধা নিয়ে একটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্তদের আসামির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করলে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বাদীপক্ষ ঢাকায় পিবিআইর উপর মহলে অভিযোগ করেন। তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার ভিডিও ফুটেজ, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ প্রচারিত ভিডিও থাকার পরও কয়েকজনের নাম মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দেন।

বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআই হেডকোয়ার্টার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চলতি বছরের ২৩ মার্চ। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআই সিলেটের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহন লাল তালুকদারকে। এরপর পাঁচ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও মোহন লাল তালুকদার অভিযোগের তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে মোহন লাল তালুকদার বলেন, ‘ঘুষ গ্রহণের যে অভিযোগ এসেছে তার তদন্ত প্রায় শেষ। সিলেট পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে এটি হেডকোয়ার্টারে পাঠানো হবে।’

পুলিশ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী এবং মামলার বাদী ইসলাম উদ্দিন জানান, বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় হামলার ঘটনায় মামলার তদন্তভার আদালত থেকে পিবিআইতে গেলে দায়িত্ব দেওয়া হয় উপ-পুলিশ পরিদর্শক তারিকুল ইসলামকে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তিনি আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেকটি পাল্টা মামলারও তদন্ত কর্মকর্তা।

এটি তদন্তে স্বচ্ছতা বিঘিœত এবং প্রকৃত অপরাধী পার পেয়ে যেতে পারে বলে সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে তিনি নানা অজুহাতে তাকে আর্থিক সুবিধা দিতে আমাদের বাধ্য করেন। তারপরও তিনি আসামি পক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মামলার ৩ নম্বর আসামি মাওলানা নাজিম উদ্দিন, ৫ নম্বর আসামি শাহজাহান, ৭ নম্বর আসামি ইয়াহিয়া ইসলামসহ আটজনের নাম অভিযোগ থেকে বাদ দিয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ নয়, সরাসরি তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। বিষয়টি জানার পর আমরা ঢাকায় পিবিআই হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ দেই। তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আমরা অভিযোগ দায়ের করলে পিবিআই পুলিশ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।

ইসলাম উদ্দিন আরও বলেন, সবশেষে আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত রাখতে তারিকুল ইসলাম আমাদের কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেই টাকা দেইনি বলে তিনি আসামি পক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তাদের নাম কর্তন করেন। আমাদের বিরোধী পক্ষের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তিনি এখনো জামা দেননি। সেই মামলা থেকে আমাদের কিছু নামের ব্যাপারে আপত্তি করলে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। আমরা তাকে জানিয়ে দিয়েছি, যা সত্য তিনি যেন সেটিই দেন। আমরা তাকে কোনো আর্থিক সুবিধা দিতে পারব না।

অভিযোগের বিষয়ে তারিকুল ইসলাম শহিদ বলেন, তদন্তকালে কেউ না কেউ সংক্ষুব্ধ হতেই পারে। এ রকমই অনেকে আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করেছেন। আমার কাজ তদন্ত করা, আমি তদন্ত করি। সঠিক ঘটনা তুলে আনার সময় সেটি কারো বিরুদ্ধে গেলে তিনি নানা অভিযোগ আনেন।

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব অভিযোগ এসেছে তা সঠিক নয়। বিয়ানীবাজারের যিনি অভিযোগ দিয়েছেন, তিনি একাধিক মামলার আসামি। তার প্রতিবেদন পক্ষে যায়নি বলে তিনি আমার ওপর সংক্ষুব্ধ।’ এ ছাড়াও বিশ্বনাথের মামলার বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম শহীদ বলেন, ‘তাদের দাবি, আমি হাদিয়া দাবি করেছি। আসলে দুইজনের বিষয়ে তারা তদবির করেছিলেন, তাদের তদবির না রাখায় তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।’ একই ব্যক্তি পক্ষে-বিপক্ষে দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আসলে এ বিষয়ে জানা হয়ে গেছে বলে আমাকে পরবর্তীতে একই ঘটনার বিপক্ষ দলের আরেকটি মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। আমি যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালন করছি।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে পিবিআই সিলেটের এসপি খালেদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলতে ফোনে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!