বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানায় করা শহিদুল ইসলাম শহিদ হত্যা মামলায় ২৩১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এসআই মো. ফয়সাল। এই মামলার বাদী গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফার আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণযোগ্যতা শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আসামিদের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, শহিদুল ইসলাম শহিদ হত্যা মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা চার্জশিটের বিরুদ্ধে না-রাজি আবেদন করেছিলেন। আদালত আবেদন খারিজ করে ২৩১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণের আদেশ দেন। এই মামলায় মোট ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত ৩০ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল ২৩১ জনকে আসামি করে দ-বিধি আইনের ৩০২ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পুলিশ জানিয়েছে, এটি ২০২৪ সালের বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) আওতাধীন থানাগুলোতে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম অভিযোগপত্র। ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় নগরীর বহদ্দারহাটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় একাধিক পিস্তল, শটগানসহ ভারী অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এর আগে নিউমার্কেট মোড়ে সমাবেশ করে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে ষোলশহর মেয়র গলিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে হামলা চালান। এরপর বহদ্দারহাট মোড়সংলগ্ন সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা হয়। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন অটোরিকশাচালক শহিদ। পরে তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শহিদের ভাই শফিকুল ইসলাম চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেনÑ সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন ও নুরুল আজিম রনিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্রে ১২৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জন সাধারণ নাগরিক, ৯৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন ডাক্তার রয়েছেন।