শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ০১:৩২ এএম

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি

ভাতা বাড়ানোর পথ খুজছে সরকার 

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ০১:৩২ এএম

ভাতা বাড়ানোর পথ খুজছে সরকার 

বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত কর্মসূচি হলো নগদ অর্থভিত্তিক ভাতা বা ক্যাশ ট্রান্সফার প্রকল্পগুলো। কিন্তু বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে যা পর্যাপ্ত নয়। এমনকি ন্যূনতম চাহিদাও মেটানো সম্ভব নয়। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মা ও শিশুর জন্য মাতৃত্বকালীন সহায়তাসহ একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় সহায়তার আওতায় রয়েছে। কিন্তু এসব ভাতার কার্যকারিতা, বাস্তব উপকারভোগীদের হাতে সঠিক অর্থ পৌঁছানো এবং সমগ্র খাতের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন বহুদিনের। দাতা সংস্থা এডিবির কাছ থেকেও এ বিষয়ে শর্ত রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর পদ্ধতিগত ও নির্দিষ্ট সময় পরপর পর্যালোচনার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জুম প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১ এর অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়Ñ কর্মসূচিগুলোর আর্থিক পরিধি, ভাতাভোগীদের প্রকৃত প্রয়োজন এবং অর্থনৈতিক সূচকের পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতাভুক্ত মোট কর্মসূচি ৯৫টি, যার মধ্যে ক্যাশভিত্তিক কর্মসূচি রয়েছে ২১টি। পর্যালোচনা করার জন্য সরকারের প্রধান প্রধান ক্যাশভিত্তিক কার্যক্রমকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো প্রতিবছরে একবার পর্যালোচনা করা হতে পারে।

ভাতা কাঠামো পর্যালোচনায় নতুন উদ্যোগ :

বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে, দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের নগদ অর্থভিত্তিক কর্মসূচিগুলো একটি নির্দিষ্ট ধাঁচে চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, আয় বৈষম্য ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক চাপের কারণে সুবিধাভোগীরা প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ন্যূনতম চাহিদাও মেটাতে পারছেন না। এ জন্য ভাতার অঙ্ক পুনর্বিবেচনা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রস্তাব করা হয়, নিয়মিত পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভাতা নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে ভোক্তা মূল্যসূচক ও মাথাপিছু স্থূল জাতীয় আয়Ñ এই দুটি সূচককে গুরুত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ দেশের সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি ও আয়ের প্রবৃদ্ধি অনুযায়ী ভাতার হার পর্যালোচনা করে সমন্বয় করা যেতে পারে। এজন্য একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

সুবিধাভোগীর সংখ্যা :

অর্থ মন্ত্রণালয় ও সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে এসব নগদ অর্থভিত্তিক কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে  এক কোটি ২৪ লাখ ৪৫ হাজার জনেরও বেশি। দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে এখন কোনো না কোনো ভাতাভোগী আছেন। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা সবচেয়ে বড় তিনটি কর্মসূচি। বিশেষ করে দরিদ্র ও নি¤œআয়ের পরিবারের জন্য এগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বরাদ্দের ধারা :

সরকার প্রতিবছর বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিপুল অঙ্কের বরাদ্দ রেখে আসছে। সাম্প্রতিক পাঁচ অর্থবছরের সরকারি বরাদ্দ বিশ্লেষণ করলে চিত্র দাঁড়ায় এভাবেÑ চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ হয় প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এই পাঁচ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বরাদ্দের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

চলমান আর্থিক চ্যালেঞ্জ :

বাস্তবে বরাদ্দের পুরো অর্থই ভাতাভোগীদের হাতে পৌঁছায় না। প্রশাসনিক খরচ, তথ্যভা-ারের ঘাটতি, প্রকৃত দরিদ্র বাছাইয়ে জটিলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর কারণে বহু ক্ষেত্রেই প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার ভাতা যতটা বাড়ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় তার থেকেও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ফলে ভাতার প্রকৃত মূল্যমান হ্রাস পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত :

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি একটি দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু এটি কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি হিসেবে নয়, বরং নিরপেক্ষ তথ্য-উপাত্ত ও সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক সূচকের ভিত্তিতে নিয়মিত পর্যালোচনা করা জরুরি। ভাতার অঙ্ক, কাভারেজ ও ভাতা প্রদানের পদ্ধতিÑ সবকিছুতেই যুগোপযোগী সংস্কার প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নতুন এই পদক্ষেপÑ ভোক্তা মূল্যসূচক ও মাথাপিছু আয়কে ভিত্তি ধরে ভাতা পর্যালোচনা ভবিষ্যতে যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আরও কার্যকর ও টেকসই করবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!