* ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাচারকৃত কিছু অর্থ ফিরবে
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা, চাঁদাবাজি পরিস্থিতি, অর্থপাচার ফেরত আনার উদ্যোগ, দাতা সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া কমানো এবং নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একাধিক মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর দেশে চাঁদাবাজি বেড়েছে এবং রাজনৈতিক সরকার ছাড়া এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। একইসঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগেই গত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাচার করা অর্থের কিছু অংশ ফেরত আনা সম্ভব হবে। তবে কত অর্থ ফেরত আসবে তা তিনি নিশ্চিত করে বলেননি। এ ছাড়া আগামী সরকারের মন্ত্রী হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই বলেও স্পষ্ট করেছেন।
গতকাল সচিবালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে কয়েকজন অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আগে যেখানে এক টাকা চাঁদা নেওয়া হতো, এখন দেড়-দুই টাকা নেওয়া হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর নানা পক্ষ চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছে এবং আগে যারা ছিল তারাও সক্রিয় আছে। যারা চাঁদাবাজি করে তারাই আবার ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য।
তিনি মনে করেন, চাঁদাবাজির কারণে পণ্যমূল্য বাড়ছে, তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। রাজনৈতিক সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া চাঁদাবাজি রোধ করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একই সময় অর্থপাচার প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত সরকারের ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলছে এবং যুক্তরাজ্য ও দুবাই থেকে অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় কিছু অর্থ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে ফেরত আসতে পারে।
তিনি বলেন, টাকা যারা পাচার করে তারা অনেক বুদ্ধিমান, কীভাবে লুকাতে হবে তা জানে। ফেরত আনার প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ হলেও আমরা হাই প্রায়োরিটিতে কাজ করছি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ অর্থবছরের জন্য ঋণের সীমা করে দিয়েছে, এই কথা ঠিক। তবে আমরা নিজেরাই ঠিক করেছি বাজেট সাপোর্টের নামে আর বেশি ঋণ নিব না। কারণ এখন আমাদের নিজেদের সক্ষমতায় আমরা চলতে চাই। ট্যাক্স রেশিও বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে। তা ছাড়া দাতা সংস্থাগুলো থেকে ঋণ নিলে নানা শর্তের জালে আটকা থাকতে হয়। এতে কাজের সমস্যা হয়। তাই আস্তে আস্তে এই ঋণ থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন জানান, আগামী সরকারের মন্ত্রী হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। তিনি বলেন, উপদেষ্টা হওয়ার আগে আমি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে পড়াতাম। তারা এখনো আমার রুম ও গাড়ি রেখেছে। এটা আমার জন্য বড় কমফোর্টÑ ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে পারব।
নিজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বার্ড, পিকেএসএফ, এনজিও ব্যুরো থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকা পর্যন্ত সব সরকারের সময়ই সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। এই দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াসহ একাধিক সরকার প্রধানের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হয়েছে। তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঘনিষ্ঠ হলেও দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ থেকেছেন বলেও উল্লেখ করেন।