মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার প্রতিবেদন ২০২৫-এ বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশ আগের মতোই দ্বিতীয় স্তরে (টায়ার-২) অবস্থান করছে। গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত মানব পাচার সূচকে বাংলাদেশের এই অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এই স্তরেই আছে। প্রতিবেদনে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, বিচারের ক্ষেত্রে সরকার সামগ্রিক আইন প্রয়োগের প্রচেষ্টা হ্রাস করেছে, ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে এবং পাচার রোধে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে ভুক্তভোগী শনাক্তকরণ নির্দেশিকা, ফ্রন্টলাইন কর্মকর্তাদের জন্য মানসিক যতেœর প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে একটি এনআরএম গ্রহণ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সরকার আরও পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছে এবং তাদের সুরক্ষা পরিষেবাগুলোতে পাঠিয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ন্যূনতম মান পূরণ করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সরকার কম পাচারকারীদের বিষয়ে তদন্ত ও বিচার করেছে এবং দোষী সাব্যস্ত করেছে। যৌনকাজে পাচার এবং জোরপূর্বক শিশুশ্রমসহ অভ্যন্তরীণ পাচারের অপরাধ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। শ্রম পরিদর্শকদের অনানুষ্ঠানিক খাতগুলো পর্যাপ্তভাবে পর্যবেক্ষণ করার এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য সংস্থাগুলোকে জবাবদিহি ক্ষমতার মারাত্মকভাবে অভাব ছিল। বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ফেরত আসা বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা ও পুনরেকত্রীকরণ প্রচেষ্টা অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে। সরকার অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ অব্যাহত রেখেছিল, যা অনেক অভিবাসী শ্রমিককে ঋণগ্রস্ত করেছিল, পাচারের প্রতি তাদের দুর্বলতা বাড়িয়ে তুলেছিল।
প্রতিবেদনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুপারিশে বলা হয়, জড়িত কর্মকর্তাসহ পাচারের অপরাধের তদন্ত ও বিচারের প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে এবং দোষী সাব্যস্ত পাচারকারীদের জন্য পর্যাপ্ত শাস্তি চাওয়া, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কারাদ- হওয়া উচিত।
মানব পাচারের মামলার বিচার এবং বিচার করার জন্য পাচারবিরোধী ট্রাইব্যুনালের কর্মীদের সক্ষমতা জোরদার ও ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা প্রয়োজনীয় হারে বাড়ানো উচিত বলেও সুপারিশে বলা হয়, যেখানে মানব পাচারসংক্রান্ত মামলার পরিমাণ বেশি।
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ভুক্তভোগী, বিদেশি ভুক্তভোগী, বিদেশে শোষিত ভুক্তভোগীসহ সব পাচারের শিকারদের জন্য সুরক্ষা, পুনরেকত্রীকরণ পরিষেবাগুলোর প্রাপ্যতা, গুণমান বৃদ্ধি এবং সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পাচারের শিকারদের চলাচলের স্বাধীনতার অনুমতি দেওয়ার কথাও এতে বলা হয়।
সুপারিশে বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে প্রবিধান প্রয়োগ এবং শ্রম নিয়োগ সংস্থা, দালাল (সাব-এজেন্ট) এবং দালালদের নিরীক্ষণ করুন, যারা নিয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কর্মী সরবরাহ করে। যার মধ্যে রয়েছে অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে নেওয়া নিয়োগ ফি বাদ দেওয়া এবং প্রতারণামূলকভাবে কর্মী নিয়োগকারীদের জবাবদিহি করা।
এ ছাড়া অনানুষ্ঠানিক খাত পর্যবেক্ষণ, শ্রম আদালতে মামলা দায়ের এবং ফৌজদারি আদালতের তদন্তের জন্য মামলা রেফারসহ পাচারের অপরাধ শনাক্তকরণের জন্য শ্রম পরিদর্শকদের ক্ষমতা বাড়ানোর কথাও এতে বলা হয়।
প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গা পাচারের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের তদন্ত ও বিচারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টা বৃদ্ধি এবং রোহিঙ্গাদের সুরক্ষ সেবায় রেফার করার জন্য সুস্পষ্ট পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এ ছাড়া পাচারের প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ সংঘটিত বেআইনি কাজের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক পাচারের শিকার ব্যক্তিদের অনুপযুক্ত শাস্তি বন্ধ করা এবং বাংলাদেশি পাচারের শিকারদের শনাক্ত ও প্রত্যাবাসন সহজতর করার জন্য ভারতের সঙ্গে ২০১৫ সালের সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন