বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১১:৩২ পিএম

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষকদের বেতন-ভাতায় নিভে গবেষণার প্রদীপ

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১১:৩২ পিএম

শিক্ষকদের বেতন-ভাতায় নিভে গবেষণার প্রদীপ

  • বাজেটের ৭০ শতাংশই ব্যয় বেতন-ভাতায়
  • গবেষণায় বরাদ্দ মাত্র ২ শতাংশ
  • গবেষণায় আগ্রহও নেই শিক্ষকদের, সামান্য বরাদ্দই হয় না ব্যয়
  • ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাজেট ছিল ৯১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। ফেরত গেছে প্রায় ১১ লাখ টাকা
  • ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৩ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ছিল ৬ হাজার ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। যার মধ্যে গবেষণা খাতে ছিল মাত্র ১০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা 

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বাজেট ছিল ৯১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তবে এ সীমিত অঙ্কের অর্থও পুরোপুরি খরচ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বরাদ্দের মধ্যে খরচ হয়েছে ১৪ কোটি ৯৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। অর্থাৎ ফেরত গেছে প্রায় ১১ লাখ টাকার মতো। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সে বছরও ফেরত গেছে প্রায় ৭ লাখ। দেশের আরেকটি প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ২ দশমিক ১১ শতাংশ।

একই অবস্থা দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কেন্দ্র হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবচিত্র একবারেই ভিন্ন। বার্ষিক বাজেটের ৬৯ থেকে ৭০ শতাংশ খরচ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আর অন্যান্য সুবিধার পেছনে। সেখানে গবেষণায় বরাদ্দ ঘুরপাক খায় ২ শতাংশের মধ্যে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাস নিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ মনে করেন। প্রয়োজন ছাড়া গবেষণায় নজর দেন না অনেকেই। এ ছাড়া গবেষণার অপ্রতুল বরাদ্দ দেশের উচ্চশিক্ষাকে একরকম স্থবির করে রেখেছে। ভালো মানের গবেষণা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবল ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। জ্ঞান, সৃষ্টি, উদ্ভাবন ও নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখতে পারছে না। গবেষণার জন্য অন্তত ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা দরকার বলে মনে করছেন তারা। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বাজেটের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ১৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, ৬৬৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা পেনশন ও অবসর সুবিধা, পণ্য ও সেবা খাতে ১ হাজার ৩৮২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা পণ্য ও সেবা খাতে, ১০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা গবেষণা খাতে এবং অন্যান্য অনুদান খাতে ৮৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ বাজেটের ৬৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে বেতন-ভাতা ও অবসর সুবিধার পেছনে।

বাকি টাকার মধ্যে ২৪ দশমিক ২১ শতাংশ পণ্য ও সেবা খাতে, গবেষণা খাতে মাত্র ১ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং অন্যান্য অনুদান খাতে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। গবেষণা খাতে ব্যয়ের মধ্যে আবার ৬৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ওই বছর গবেষণার সরঞ্জামাদি খাতে ব্যয় হয়েছে। তবে পরের অর্থবছর অথাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৪৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। 

এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ৫৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির মোট ৬০ হাজার ৭১ কোটি টাকা বাজেট ছিল। এ বাজেটের পুরোটাই খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ টাকাই ব্যয় হয়েছে বেতন-ভাতা ও অবসর সুবিধা দিতে গিয়ে। বাকি টাকার মধ্যে ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা খাতে, গবেষণা খাতে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য অনুদান খাতে ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। 

ইউজিসি সূত্র আরও জানায়, ২০২৩ সালে ২৩ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো গবেষণাই প্রকাশিত হয়নি। এর আগের বছর ২০২২ সালে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো গবেষণা প্রকাশ করেনি। 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি একাডেমি স্টাফ ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ প্রকল্পের আওতায় শিক্ষকদের গবেষণা কাজে সহায়তা করে আসছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৩ সালে ১ হাজার ৫৫১টি গবেষণা প্রকল্প ছিল। এর মধ্যে ১৪৪টি সমাপ্ত ও ১ হাজার ৪টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। বাকি ৭টি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

একাধিক শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানায় যায়, অপ্রতুল বরাদ্দ আর শিক্ষকদের গবষেণায় আগ্রহ না থাকার কারণে আধুনিক জ্ঞান সৃষ্টি, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও নীতিনির্ধারণে নতুন তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে পড়ছে। বেতন-ভাতার পাশাপাশি গবেষণায় বিনিয়োগ না বাড়ালে বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ডিগ্রি বিতরণের প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়াবে, জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গবেষণার ক্ষেত্রে দুটি সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে বড় সমস্যা হলো অনেক শিক্ষকরা ভালো গবষেণায় আগ্রহী হলেও সেই অনুপাতে বরাদ্দ না থাকায় তারা গবেষণা করতে চান না। আরেকটি হলো- কিছু শিক্ষক আছেন যারা তাদের পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন সুবিধার জন্য নামমাত্র একটি গবেষণা করেন। প্রতিবছর অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। ফলে এ গবেষণা জাতি বা রাষ্ট্রের খুব একটা কাজে লাগে না। 

এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা নয়। এর বড় কাজ হলো গবেষণা করে নতুন নতুন জ্ঞান ও সৃজনশীলতা তৈরি করবে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষক শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন। শিক্ষকদের মধ্যে গবেষণা বিমুখতা রয়েছে। যদিও গবেষণায় বরাদ্দের অপ্রুতলতা রয়েছে কিন্তু যে বরাদ্দ আছে সেটাও পরিপূর্ণ ব্যয় হয় না। 

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রচুর গবেষণা দরকার। গবেষক তৈরি না হলে দেশ চলবে কীভাবে? আমাদের দেশে প্রকাশনা এতই সীমিত, আন্তর্জাতিক মানে যেতে পারছি না। গবেষণার কাজগুলো অনেক ব্যয়বহুল। দেশে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে অর্থায়ন কম। শিক্ষা খাতে যে বাজেট আছে, সেখানে আরও বাড়ানোর প্রয়োজন আছে।’ 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!