সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ

আউটসোর্সিং নিয়োগে কোটি টাকার দুর্নীতি!

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম

আউটসোর্সিং নিয়োগে কোটি টাকার দুর্নীতি!

  • পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করা প্রার্থীদের নিয়োগ হয়নি
  • যোগ দেওয়া ১২ জনের ১১ জনই মৌখিক বা শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নেননি, আবেদনও করেননি
  • যাদের মধ্যে চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন খানের তিনজন, সদস্য গোলাম মোস্তফার তিনজন এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ছয়জন
  • টেন্ডার ও চাকরি বিধিমালা ২০০৯ লঙ্ঘন
  • নিজেদের প্রার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বাদ পড়া দুই প্রতিষ্ঠানের
  • নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগে কোটি টাকার দুর্নীতি ও চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সদ্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান ও একজন সদস্যের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য চালানো হয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। এতে মেধা ও যোগ্যতা উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো এক লিখিত অভিযোগপত্রে এসব অনিয়মের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ দেশের নতুন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এর উদ্দেশ্য হলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রতিষ্ঠার শুরুতেই এমন নিয়োগ কারসাজির অভিযোগ সামনে আসা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নিয়োগে মেধা ও যোগ্যতার পরিবর্তে অর্থ প্রাধান্য পেলে প্রতিষ্ঠানটির সুশাসন ধ্বংস হয়ে যাবে। একই সঙ্গে সরকারের ঘোষিত জুলাই ২০২৪-এর চেতনাÑ যেখানে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার অঙ্গীকার করা হয়েছিল, সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ঠিকাদারকে আইনের আওতায় আনা এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়াই এখন সময়ের দাবি।

এই বিষয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমার জানা মতে এই ধরনের কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। কারণ এই সংক্রান্ত কমিটি রয়েছে। যা হওয়ার কমিটির মাধ্যমেই হয়েছে। তারপরও যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে এই ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির হয়েছে, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সংস্থার প্রধান হিসেবে আমার বিরুদ্ধেও অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে মন্ত্রণালয় আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, অর্থ বিভাগে যেহেতু অভিযোগ হয়েছে, মন্ত্রলালয় তদন্ত করুক। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে।

টেন্ডার প্রক্রিয়ার আড়ালে কারসাজি :

চলতি বছরের ৭ এপ্রিল জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ১০টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করে। যাচাই-বাছাই শেষে তিনটি প্রতিষ্ঠানÑ মেসার্স এলিজা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স রেডিসন এন্টারপ্রাইজকে রেসপনসিভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষার জন্য তাদের প্রার্থীদের ডাকা হয়।

কিন্তু অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরীক্ষায় মেসার্স এলিজা এন্টারপ্রাইজের দুজন প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ার অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটিকে বাতিল দেখানো হয়। একইভাবে রেডিসন এন্টারপ্রাইজকেও নন-রেসপনসিভ ঘোষণা করা হয়। পরে গোপনে মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজকে চুক্তি ও কার্যাদেশ দেওয়া করা হয়। গত ১ আগস্ট নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদানের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও সেদিন কেউ যোগ দেয়নি।  

চেয়ারম্যান-মেম্বার-ঠিকাদার সিন্ডিকেট :

অভিযোগে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১০ আগস্ট ১২ জন লোক হঠাৎ করে চাকরিতে যোগদান করে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন খানের তিনজন, সদস্য গোলাম মোস্তফার তিনজন এবং ঠিকাদার মাহবুব এন্টারপ্রাইজের ছয়জন প্রার্থী ছিলেন। বিস্ময়কর বিষয় হলোÑ এই ১২ জনের ১১ জনই মৌখিক বা শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নেননি, এমনকি আবেদনও করেননি। কারো কারো শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় নথি পর্যন্ত ছিল না।

যেখানে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীরা ৬০ থেকে ৮০ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, সেখানে তাদের নিয়োগ না দিয়ে টাকা প্রদানের বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

আইন ভঙ্গ ও দুর্নীতি বাণিজ্য :

অভিযোগকারী পক্ষ জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার ও চাকরি বিধিমালা ২০০৯-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয়েছে। এমনকি নিয়োগপ্রাপ্তদের রাজস্ব খাতে ভবিষ্যতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে। ফলে প্রকৃত মেধাবীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, এসব অনিয়মের বিষয়ে একাধিকবার চেয়ারম্যানকে জানানো হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। বরং অদৃশ্য শক্তির সহায়তায় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ঠিকাদার যৌথভাবে নিয়োগ বাণিজ্য বাস্তবায়ন করেছেন।

তদন্ত দাবি :

এই অনিয়ম উদঘাটন না হলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মতো নতুন প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হওয়ার পাশাপাশি সার্বিকভাবে চাকরি খাতে দুর্নীতি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে অভিযোগকারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থার অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে নিয়োগের ফাইল এবং মূল্যায়ন কমিটির সদস্য আয়েশা হক ও মোবাশ্বের আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনুলিপি আকারে অভিযোগপত্রটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-কেও পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে এলিজা এন্টারপ্রাইজের আহসান হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টেন্ডারে তারা ১২ জন সরবরাহের জন্য যোগ্য হন। কিন্তু দুজন প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ার অজুহাতে তাদের সব প্রার্থীকে অযোগ্য হিসেবে বাতিল করা হয়। এ বিষয়ে একাধিকবার চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। প্রতিবারই তিনি আশ^াস দিয়েছেন। কিন্তু কার্যকর কিছুই হয়নি।

তবে টেন্ডারের মাধ্যমে ছয়জনকে চাকরি দিতে পারা মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজের মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তার জানা মতে, এ ধরনের কোনো অনিয়ম হয়নি। তা ছাড়া এ ধরনের কোনো অনিয়মের কথা তার জানা নেই।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!