সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০১:১২ এএম

কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ হোক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০১:১২ এএম

কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ হোক

বাংলাদেশের কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতার সাম্প্রতিক চিত্র ভয়াবহ, লজ্জাজনক ও অমানবিক। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই ৩৯০ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে ২৯ জন । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৫ জনকে, আর অপমান-অসহায়তায় আত্মহত্যা করেছে পাঁচজন। এসব সংখ্যা কেবল পরিসংখ্যান নয়; প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে এক একটি নিষ্পাপ জীবনের চরম যন্ত্রণা, একেকটি পরিবারের হাকাহার ও অপূরণীয় ক্ষতি।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো- ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলো কমছে না, বরং প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ২২৪, ২০২৩ সালে ৪৯৩। গত আট মাসে ১৩৪ কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় চারগুণের বেশি। একই সময়ে আত্মহত্যা করেছে ১০৪ জন কন্যাশিশু এবং খুন হয়েছে ৮৩ শিশু। এ যেন জাতিগত লজ্জা, সভ্যতার পরাজয়।


এই নির্মম প্রবণতার পেছনে রয়েছে নানা সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কারণ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলার অভিযুক্তদের একটি বড় অংশ মাদকাসক্ত ও পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা ভুক্তভোগীর আত্মীয় বা পরিচিত। এতে বোঝা যায়, শিশুদের নিরাপত্তা এখন ঘরেও নিশ্চিত নয়। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, অধিকাংশ ভুক্তভোগী অতিদরিদ্র পরিবারের। যারা বিচার, চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত।


আইন আছে, কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। শিশুনির্যাতন ও ধর্ষণের মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতায় হারিয়ে যায়। অনেক সময় প্রভাবশালী অভিযুক্তরা রক্ষা পেয়ে যায়, আর ভুক্তভোগী পরিবার সামাজিকভাবে অপমানিত ও বিচ্ছিন্ন হয়। এ অবস্থায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে, কারণ তারা জানে, অপরাধ করলেও শাস্তি পেতে হবে না।


জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম তাদের প্রতিবেদনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’ অনুমোদনের সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনার প্রমাণের দায় অভিযুক্তের ওপর বর্তানো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন, এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। আমরা মনে করি, এই সুপারিশগুলো শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, অত্যন্ত জরুরি।


আমাদের কন্যাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়, এটি রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারও। কন্যাশিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করা।


আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত শিশুদের প্রতি সহিংসতা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। অপরাধীদের নিঃশর্ত শাস্তি ও বিচার নিশ্চিত না করলে এই অভিশাপ কখনো দূর হবে না। আর এই অভিশাপ দূর করার জন্য রাষ্ট্র ও সমাজকে একসঙ্গে জেগে উঠতে হবে। 


বর্তমান সমাজে প্রযুক্তির অগ্রগতি, শিক্ষার প্রসার এবং মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও দুঃখজনকভাবে এখনো কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা একটি ভয়াবহ বাস্তবতা হয়ে রয়ে গেছে। এই সহিংসতা শুধু শারীরিক নয়, বরং মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও কন্যাশিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। 


আমরা মনে করি, শিক্ষা, সচেতনতা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমেই এই সহিংসতার অবসান ঘটানো সম্ভব। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, কন্যাশিশু কোনো বোঝা নয়, বরং তারা আমাদের সমাজের সমান অংশীদার। কন্যাশিশু নিরাপদ থাকলেই আগামীর সমাজ নিরাপদ হবে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!