সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা, যানজট নিরসন ও নিরাপত্তার জন্য রাজধানীতে ৫ হাজারেরও বেশি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছেন। তবে তাদের নিজস্ব কোনো টয়লেট বা শৌচাগারের সুবিধা নেই। টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। ডিউটিস্থলের আশপাশে অস্বস্তি নিয়েই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয় তাদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
ট্রাফিক তথ্য বলছে, ঢাকায় ২৫০-এরও বেশি ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে। এসব বক্সে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তাদের নিজস্ব কোনো শৌচাগারের সুবিধা নেই। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর অনেক বক্স ভেঙে ফেলে আন্দোলনরত জনতা। এরপর এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
অবশ্য ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে উন্নতমানের কোনো ট্রাফিক বক্স নেই। উন্নত বক্স হলে এবং আশপাশে একটু জায়গা থাকলে এই সমস্যা হয়তো কিছুটা সমাধান হতো।
রাস্তায় ডিউটিরত ট্রাফিক পুলিশ জানান, পাবলিক টয়লেটে যেতে হয় তাদের, যার কারণে অস্বস্তিতে পড়তে হয় সারা দিন রাস্তায় থাকা তাদের। অনেক সময় জরুরি প্রয়োজন মেটাতে যেতে হয় রাস্তার আশপাশের ভবনগুলোতেও। তাদের প্রশ্ন, এই সমস্যা আর কত দিন ঝুলে থাকবে? অবিলম্বে এর সমাধান হওয়া জরুরি।
ট্রাফিক পুলিশের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, দুই সিটি করপোরেশনের কারণে বন্ধ হয়ে আছে ট্রাফিকের শৌচাগারসংকটের সমাধান। রাজধানীতে যেসব ট্রাফিক বক্স আছে, সেগুলো অধিকাংশ সিটি করপোরেশনের জায়গার মধ্যে পড়েছে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, কিছু ট্রাফিক বক্সে শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিছু জায়গায় কাজ চলছে, আবার কিছু কিছু স্থানে এটি তৈরি করার কোনো ব্যবস্থাই নেই।
ট্রাফিক কনস্টেবল ও সার্জেন্টরা বলছেন, অনেক সময় ইচ্ছাশক্তি থাকলেও পুলিশের পক্ষ থেকে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের দাবি, অনেক সময় সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা শৌচাগারসংকটের সমাধানের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন, কিন্তু সমাধান হচ্ছে না।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ট্রাফিক পুলিশ বক্স ঘুরে দেখা গেছে, মানসম্মত তেমন কোনো ট্রাফিক বক্স ও শৌচাগার নেই। শুধু শৌচাগারের সংকট নয়, রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের অনেক দুর্ভোগও। অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বক্সে বসে বিশ্রাম নিতে পারেন না, রাস্তার পাশে বা গাছের আড়ালে বসে রেস্ট নিতে হয় তাদের।
এ বিষয়ে চিকিৎসকেরা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সব সময় রাস্তায় থাকেন, যার কারণে তারা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসকদের দাবি, শব্দদূষণ আর শৌচাগারের সংকটের কারণে অনেকে হৃদরোগ ও পেটের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ মল চেপে রাখলে অনেকে পাইলস বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
ট্রাফিক সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, থানার পুলিশ বা অন্যান্য পুলিশের ডিউটির সময় বা অন্যান্য সময়ে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা থাকে, কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে পুলিশ বক্সে বিশ্রাম বা একটু শুয়ে থাকার পরিবেশ বা ব্যবস্থা নেই। অনেক ট্রাফিক বক্সে ফ্যানও নেই। প্রচ- গরমে ডিউটির পরও স্বস্তির বদলে অস্বস্তিতেই সময় কাটান তারা।
রাজধানীতে কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্ট রেখা, কাজল, তন্নী, সাবরিনাসহ একাধিক নারী সদস্য জানান, শৌচাগারের সংকট একটি বড় সমস্যা। যখন আমাদের প্রয়োজন হয়, তখন আশপাশে সরকারি বা বেসরকারি অফিসে যেতে হয়। প্রথম অবস্থায় অনেক সমস্যা হতো, এখন পরিবেশের সঙ্গে মিলে চলছি আমরা। এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি।
ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট খায়রুল আলম বলেন, ‘মাঝে মাঝে হঠাৎ করে আমার পেটে ব্যথা শুরু হয়, তখন চিন্তায় থাকি কোথায় টয়লেটে যাব। অনেক সময় মার্কেটে গেলে ভিড় থাকে।’
শৌচাগারসংকটের সমাধান হওয়া জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, পুলিশের পোশাক পরে নারী বা পুরুষ ট্রাফিক সদস্যরা বাইরে টয়লেট করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে মন্তব্যের মধ্যে পড়তে হয়। বিশেষ করে নারী সদস্যদের।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) ড. মো. জিললুর রহমান বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় শৌচাগারসংকটের সমাধান হচ্ছে। এটি সমাধান করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। পাশাপাশি আমরাও পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং শৌচাগার বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. আনোয়ার কবির এ বিষয়ে বলেন, কোনো মানুষ যদি মল জোরপূর্বক চেপে ধরে রাখে, তাহলে সে শারীরিকভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যেমন সে খুব কম সময়ের মধ্যে পাইলস বা পেটের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আমাদের বেশির ভাগ মানুষ পেটের সমস্যার কারণে বড় রোগে আক্রান্ত হন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন