মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ১০:৫৫ পিএম

গাজায় ইসরায়েলি হামলার দুই বছর পূর্ণ আজ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ১০:৫৫ পিএম

গাজায় ইসরায়েলি হামলার দুই বছর পূর্ণ আজ

  • দুই বছরে গাজায় নিহত ৬৭,১৬০ জন। নিখোঁজ ১০ সহ¯্রাধিক
  • ২০ সহ¯্রাধিক শিশু এবং ১২৫০০ নারী নিহত হয়েছেন
  • আহত হয়েছেন ১৬৯৬৭৯ জন
  • ২ হাজার ৭ শতাধিক পরিবার পুরো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে 
  • ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় গাজার ৯০% অবকাঠামো ধ্বংস 
  • জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২০ লক্ষাধিক মানুষ 
  • মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে ৬ লাখ ৫০ হাজার শিশু
  • ইসরায়েলি হামলায় ৩৮টি হাসপাতাল ও ৯৬টি ক্লিনিক ধ্বংস
  • নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬ শতাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, ২৫৪ সাংবাদিক, ১৪০ সিভিল ডিফেন্স সদস্য এবং ৫৪০ মানবিক সহায়তাকর্মী
  • দুই বছরে গাজায় ২ লাখ টন বিস্ফোরক ফেলেছে ইসরায়েল

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ ফিলিস্তিনের গাজায় যমজ সন্তানের জন্ম দেন ৩৬ বছর বয়সি ইমান। সন্তানদের নাম রাখেন উদয় ও হামজা। গাজায় তখন পুরোদমে হামলা চলছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর। সদ্য প্রসবা ইমান সেই দুঃসহ সময়ের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি যখন মা হয়েছি, ইসরায়েল তখন গাজায় সব ধরনের সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে। আমি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়িয়েছি কারো কাছে যদি বাড়তি দুধ থাকে, এ জন্য। দুই ছেলেকে নিয়ে আমি এক কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটেছি নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়। ততদিনে আমাদের বাড়ি-ঘর বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’

উদয় ও হামজার জন্মের কয়েক দিন আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হয় ইসরায়েলি হামলা। অসম এ যুদ্ধের দুই বছর পূর্তি হলো আজ। দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমান জানান, ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে এ দম্পতি এরপর থেকে রাস্তায় তাঁবুর মধ্যেই থাকা শুরু করেন। এর মধ্যেও প্রতিদিনই ছিল প্রাণ হারানো ভয়। যদিও এর মধ্যেই মারা যায় তার স্বামী আয়মান। সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে ইমান বলেন, ‘খাওয়ার মতো কিছুই নেই আমাদের। আমরা সবসময় ক্ষুধার্ত থাকি। এক দিন ওদের বাবা খাবারের আশায় বের হয়েছিল। সেদিন ওর পাশেই একটি গোলা আঘাত করে। সেখানেই ও শহিদ হয়ে যায়। দুই সন্তানকে নিয়ে এখনো বেঁচে আছি, এটাই ভাগ্য। আমি জানি না, এই যুদ্ধের শেষ হবে কবে। আদৌ কি শেষ হবে এই যুদ্ধ, সেটাও জানি না।’

গাজায় ইসরায়েলি হামলার দুই বছর পূর্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এ উপত্যকায় বেঁচে থাকা বাসিন্দাদের সবার অবস্থাই ইমান ও তার দুই সন্তানের মতো। যাদের ঘর নেই, খাবার নেই, বেঁচে আছেন ভাগ্যের জোরে। এমনকি যখন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ও হামাসের নেতারা এ যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার টেবিলে বসেছে, তখনো তারা নিশ্চত নয় তাদের অন্তহীন সংগ্রাম শেষ হবে কবে। 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ এবং নিখোঁজ আরও প্রায় ১০ হাজার। এ ছাড়া, এই সময়ের মধ্যে অঞ্চলটিতে ২ লাখ টনের বেশি বিস্ফোরক ফেলেছে ইসরায়েল। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল মায়েদিনের খবরে বলা হয়েছে, গাজা সরকারের জনসংযোগ কার্যালয় অঞ্চলটিকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের দুই বছরকে কেন্দ্র করে নতুন এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে ভয়াবহ ধ্বংস, গণহত্যা, লাখো মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং দশ সহ¯্রাধিক সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। গত রোববার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৭৬ হাজার ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বা নিখোঁজ আছেন। এর মধ্যে ৬৭ হাজার ১৬০ জনের মৃত্যুর তথ্য হাসপাতাল থেকে নিশ্চিত হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ, যাদের অনেককে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী, শিশু ও প্রবীণ মানুষ। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি শিশু এবং ১২ হাজার ৫০০ নারী নিহত হয়েছেন। পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এমন ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৭ শতাধিক। আরও ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে কেবল একজন সদস্য জীবিত আছেন।

গণমাধ্যম কার্যালয়ের ভাষ্যমতে, ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে গাজার অবকাঠামোর ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। গোটা এলাকা এখন মানবিক বিপর্যয়ে পতিত। গাজার জমির ৮০ শতাংশের বেশি দখল করে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। দুই বছরের মধ্যে ২০ লক্ষাধিক মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, অনেকেই একাধিকবার জায়গা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল গাজায় ক্ষুধা ও জাতিগত নিধনের নীতি চালাচ্ছে। মানবিক সহায়তার জন্য নির্ধারিত ‘নিরাপদ এলাকা’ আল-মাওয়াসিকেও ১৩০ বারের বেশি বোমা হামলা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় ৩৮টি হাসপাতাল ও ৯৬টি ক্লিনিক ধ্বংস হয়েছে বা অচল হয়ে গেছে। ১৯৭টি অ্যাম্বুলেন্স টার্গেট করা হয়েছে। নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬ শতাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। নিহত হয়েছেন ২৫৪ সাংবাদিক, ১৪০ সিভিল ডিফেন্স সদস্য এবং ৫৪০ মানবিক সহায়তাকর্মী।

এ ছাড়া, ১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা নেই। বিদেশে চিকিৎসার অনুমোদন পাওয়া ২২ হাজার রোগী এখনো গাজার ভেতরেই আটকা। এ ছাড়া ৬ লাখ ৫০ হাজার শিশু মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে। দুধ, ওষুধ আর খাবারের তীব্র অভাবে জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, গাজার ২৪ লাখ মানুষের প্রায় সবাই মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল এবং তারা অভূতপূর্ব বঞ্চনার শিকার। জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, গাজার ৯৫ শতাংশ বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। নিহত হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী, ৮৩০ শিক্ষক এবং প্রায় ২০০ গবেষক ও শিক্ষাবিদ। ধর্মীয় স্থানগুলোও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে ৮৩৫টি মসজিদ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি গির্জা। কবরস্থানও বুলডোজার চালিয়ে বা বোমা মেরে ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার ১৫টি খাত মিলিয়ে সরাসরি ক্ষতি হয়েছে ৭০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে কেবল আবাসন খাতে ক্ষতি ২৮ বিলিয়ন, স্বাস্থ্য খাতে ৫ বিলিয়ন ও শিক্ষা খাতে ৪ বিলিয়ন ডলার। চাষযোগ্য জমি ও মৎস্য খাত প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

এদিকে ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে তাদের এক হাজার ১৫২ সেনা নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি সেনার বয়স ২১ বছরের কম। গতকাল সোমবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহত সেনাদের মধ্যে ১৪১ জনের বয়স ৪০-এর বেশি। আর অধিকাংশই ছিলেন রিজার্ভ সদস্য, কর্মকর্তা।

গাজায় হামলার দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার ভিত্তিতে ইসরায়েল ও হামাস গতকাল সোমবার মিশরের শার্ম আল-শেখে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছে। যদিও এ আলোচনার মধ্যেও গাজায় হামলা থামায়নি ইসরায়েল। 

গতকাল সোমবার আলজাজিরা জানিয়েছে, হামাসের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির নির্বাসিত নেতা খলিল আল-হায়া। তিনি গত রোববার মিশর পৌঁছান। তিনি সম্প্রতি কাতারে ইসরায়েলি হত্যা প্রচেষ্টার হামলা থেকে বেঁচে যান। তার নেতৃত্বেই হামাসের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খুঁটিনাটি নিয়ে কথা বলবেন। লোহিত সাগর তীরবর্তী অবকাশযাপন কেন্দ্র শার্ম আল-শেখে আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন রন ডারমার। তিনি কৌশলবিষয়ক মন্ত্রী।  ৫৪ বছর বয়সি ডারমার নেতানিয়াহুর সবচেয়ে কাছের ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, বাকি জিম্মিদের মুক্তি ও ভূখ-টির ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্প সম্প্রতি ২০ দফা একটি পরিকল্পনা হাজির করেছেন। হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাবের কিছু শর্ত মেনে নিতে সম্মত হয়েছে। সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরেই আত্মসমর্পণের প্রস্তাব খারিজ করে আসছিল। এরপর আলোচনার আহ্বান জানানোর পর মিসরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এদিকে আলোচনা শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাপ বাড়িয়েছেন। তিনি আলোচনায় অংশ নেওয়া পক্ষগুলোকে দ্রুত এগোতে আহ্বান জানিয়েছেন। তার ভাষায়, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ আর জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। না হলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবেÑ যা কেউ দেখতে চায় না।’

গত রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, পরিস্থিতি এখন ‘বন্দি মুক্তির সবচেয়ে কাছাকাছি’। তিনি ইসরায়েলকে হামলা বন্ধ করে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাস অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তি দেবে এবং ইসরায়েল তাদের সেনা গাজা থেকে ফিরিয়ে নেবে। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতেই থাকবে।’ আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও হামাসের আলোচনায় অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে হামলা বন্ধ ও বন্দি বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ইজ্জত আল-রিশেক বলেন, আরব দেশগুলোর এই সমর্থন যুদ্ধের অবসান এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!