গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া মানবাধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ১৭১ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থুনবার্গসহ মোট ১৭১ জনকে গ্রিস ও সেøাভাকিয়ায় পাঠানো হয়েছে। তারা গ্রিস, ইতালি, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, পোল্যান্ড, জার্মানি, বুলগেরিয়া, লিথুয়ানিয়া, অস্ট্রিয়া, লুক্সেমবার্গ, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, সেøাভাকিয়া, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, সার্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ। এর আগেও তিনি ত্রাণ নিয়ে সমুদ্রপথে গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন তবে ব্যর্থ হন।
এর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ১৩৭ জনকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ২১ জন স্প্যানিশ মানবাধিকারকর্মীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তবে এরই মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মী অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি আটক কেন্দ্রগুলোয় তাদের অবমাননাকর আচরণের শিকার হতে হয়েছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহরের ৪১টি জাহাজে অন্তত ৪৪টি দেশ থেকে ৪৫০ জনের বেশি মানবাধিকারকর্মী অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত অ্যাকটিভিস্ট, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবী এবং সাধারণ নাগরিক। সুইডিশ পরিবেশবাদী আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গের অন্যতম প্রধান মুখ।
গতকাল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া পোস্টে জানানো হয়, গতকাল গ্রেটাকে গ্রিসে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে ফ্লোটিলা থেকে আটকের পর গ্রেটার ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ এসেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ফেরার পর এ অভিযোগ করেন ওই নৌবহরে অংশ নেওয়া কয়েকজন আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মী। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে গত শনিবার ইস্তানবুলে ফেরেন তুরস্কের সাংবাদিক এরসিন সেলিক।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া সেলিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতন করেছে, মাটির ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে এবং ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করেছে।’ তিনি স্বচক্ষে এসব নির্যাতন দেখেছেন বলে জানান।
ইস্তানবুল বিমানবন্দরে একই কথা বলেন মালয়েশিয়ার অধিকারকর্মী হাজওয়ানি হেলমি ও যুক্তরাষ্ট্রের উইন্ডফিল্ড বিবার। তারা জানান, ‘থুনবার্গকে ধাক্কা দিয়ে তার গায়ে জোর করে ইসরায়েলি পতাকা মুড়িয়ে দেওয়া হয়।’
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা জানায়, এ ধরনের কোনো দুর্ব্যবহার বা নির্যাতন নিয়ে গ্রেটা ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি।’
সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক ইমেইলে জানিয়েছে, তাদের এক কর্মকর্তা গ্রেটার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি ওই কর্মকর্তাকে জানান, তাকে বিছানায় ছারপোকার কামড় সহ্য করতে হচ্ছে। পাশাপাশি, তাকে খুবই সামান্য খাবার ও পানি দেওয়া হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান ইমেইলটি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, ‘(সুইডিশ) দূতাবাস গ্রেটার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছে। তিনি পানিশূন্যতায় ভোগার অভিযোগ করেছেন। তাকে অপর্যাপ্ত খাবার ও পানি দেওয়া হয়েছে। ছারপোকার কামড়ে তার সারা শরীরে ঘা হয়ে গেছে। তিনি দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন এবং অমসৃণ ও কঠিন জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে।’
তবে এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে গ্রেটা নিজে কোনো বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা যায়নি। হয়তো গ্রিসে ফিরেই তিনি এ বিষয়ে মুখ খুলবেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন