ঢাকা বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

বললেন সিইসি

দেশের জন্য কিছু করতে  আগামী নির্বাচনই শেষ সুযোগ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১১:৪১ পিএম

আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করাকে জীবনের শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষ কর্মী বাছাই করতে গিয়ে বহু কসরত করতে হয়েছে। অনেকটা লোম বাছতে কম্বল উজাড়ের মতো অবস্থা। তবে শুধু কর্মীরা নিরপেক্ষ নয়, বরং প্রার্থীদের আচরণবিধি পালনে বাধ্য করতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োজন। নইলে আপৎকালীন এই সময়ে কর্মীদের কিছুই করার থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে শুরু হওয়া নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং নারী নেত্রীদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে সূচনা বক্তব্যে সিইসি এ কথা বলেন। সংলাপে সভাপতিত্ব করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এতে নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে একটা বিশেষ ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে হচ্ছে। এটাকে তিনি দেশের জন্য কিছু করতে পারার শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন এবং তার প্রতিশ্রুতিও একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার। তিনি বলেন, এ কাজ নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, কমিশন এর মধ্যেই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আজকের সংলাপে তারা মাঠপর্যায়ে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকারীদের কথা শুনতে চান। কারণ তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। নির্বাচনে কোথায়, কীভাবে জালিয়াতি হয়, কোথায় বিরতি থাকে, তা মাঠের কর্মীরা ভালো জানেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সাড়ে ২১ লাখ মৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ৪৫ লাখ যোগ্য ভোটারের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নারী-পুরুষের সংখ্যানুপাতে নারী ভোটারের সংখ্যা ৩০ লাখ কম ছিল। নারীদের মধ্যে সেই সচেতনতা তৈরি করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবাসী ভোটার এবং নির্বাচন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্তদের ভোট দেওয়ার জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে।

এ সময় নারী নেত্রীদের উদ্দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ভোটের সময় তো গাড়ি বন্ধ থাকে। এটা আমি তো ওভাবে চিন্তা করিনি। ফিজিক্যালি ডিজেবল যারা, নির্বাচনের দিন তারা যাতে কমফোর্টলি আসা-যাওয়া করতে পারে, এগুলো আমাদের পক্ষ থেকে করা সম্ভব। মানে, গ্রাউন্ড ফ্লোরে যাতে ভোটকেন্দ্র হয়। সিইসি বলেন, একটা সুন্দর ্ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেন উপহার দিতে পারি, সে ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমাদের ইনটেনশন গুড। ইলেকশন কমিশন রিয়েলি ইন্টারেস্টেড টু ডেলিভারি ইলেকশন। এই মেসেজটা আপনারা দিয়ে দেবেন নারী ভোটাররা যাতে আসেন ভোটকেন্দ্রে।

এ সময় নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, ১২ কোটি ৬৩ লাখের বেশি ভোটারের মধ্যে ৬ কোটি ২৩ লাখ নারী ভোটার। এদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা একজনের (ইসি) পক্ষে কী সম্ভব। একার পক্ষে তো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। একটি গোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করছেন আপনারা।

তিনি বলেন, আপনারা ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব চান। এটা তো ভবিষ্যতের ব্যাপার। তবে বর্তমানে যে একজন নারী আছেন কমিশনে, এটা ধরে রাখতে হলে আমাকে সহযোগিতা করতে হবে। যত বেশি নারী ভোটার আনতে পারবেন, ততই আমাদের সংখ্যা বাড়বে।

ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় সংলাপে অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি কর্মকর্তা, ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী মানবাধিকারকর্মী খুশী কবীর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, উইমেন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মিষ্টি আশরাফুন নাহারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবন্ধীদের ঘরে বসে ভোটের প্রস্তাব যুক্তিসংগত : ইসি সানাউল্লাহ

এ সময় নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ (অব.) প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য এক যুগান্তকারী প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিবন্ধীদের ঘরে বসে ভোট দেওয়ার প্রস্তাবটি খুবই যুক্তিসংগত। এটি কার্যকর হলে সমাজের একটি বড় অংশ সহজে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

নারী প্রতিনিধিত্ব ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ২০৩০ সালের পর ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে তাদের আর সময়সীমা বাড়ানো হবে না। তিনি প্রস্তাব করেন, নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে না পারলে দলের পুনরায় নিবন্ধনের বিষয়টি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে পাস করালে রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে আরও সচেতন হবে।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও পর্যবেক্ষক সংস্থার ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রবাসী ভোটের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও প্রক্রিয়াটি শুরু হবে, সেটিই জরুরি। এটি দেশের বাইরের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির প্রথম ধাপ।

এ ছাড়া পর্যবেক্ষক সংস্থা নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনার জানান, অনেক পর্যবেক্ষক সংস্থা যোগ্য হলেও তারা আগের নির্বাচনগুলোতে কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখেনি, তাই তাদের এবার পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সীমাবদ্ধতা গত তিনটি নির্বাচন থেকে উঠে এসেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গুজব ও অপতথ্য মোকাবিলার কৌশল নিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, গুজবের ক্ষেত্রে অর্ধেকের মতো সোর্স ট্রেস করা যায় না। অনেক সোর্স দেশের বাইরে, তাদের আইনের আওতায় আনা যায় না। তবে তথ্যের প্রবাহে লাগাম টানবে না ইসি।