ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

গ্লোবাল ফ্লোটিলা

শহিদুল আলমকে বহনকারী জাহাজও ইসরায়েলি দখলে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
  • সব নৌযান ও যাত্রীকে ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেওয়া হচ্ছে
  • আটকের আগে শেষ ভিডিওবার্তায় শহীদুল আলম গাজার পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান
  • প্রেস সচিবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিন্দা

বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে বহনকারী ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখী নৌযান কনশানসসহ গ্লোবাল ফ্লোটিলার সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। শহিদুল আলম গতকাল বুধবার এক ভিডিওবার্তায় আটক হওয়ার কথা জানিয়েছেন। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, ‘গাজায় বৈধ নৌবদ্ধ অবরোধ ভেঙে প্রবেশের আরেকটি ব্যর্থ চেষ্টা কোনো ফল দেয়নি। সব নৌযান ও যাত্রীকে ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেওয়া হচ্ছে। সব যাত্রী নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন। তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে।’

এ ছাড়া গতকাল সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশিত এক ‘প্রি-রেকর্ডেড’ ভিডিওবার্তায় শহিদুল আলম বলেন, ‘আমি শহিদুল আলম, বাংলাদেশ থেকে আসা একজন আলোকচিত্রী ও লেখক। যদি আপনারা এই ভিডিওটি দেখে থাকেন, তবে বুঝবেন আমরা সমুদ্রে অবরুদ্ধ হয়েছি এবং আমাকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী অপহরণ করেছে। এ রাষ্ট্র গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সক্রিয় সহযোগিতায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার সহযোদ্ধা ও বন্ধুদের আহ্বান জানাই, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যান।’

গাজা অভিমুখী সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীদের নৌবহরকে ইসরায়েলি বাহিনী আটকে দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন কর্তৃপক্ষ। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ আয়োজিত এই ফ্লোটিলায় ৯টি নৌকা ছিল। এর মধ্যে ‘কনশানস’ নামের একটি নৌকায় প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইতালি থেকে তারা যাত্রা শুরু করেন। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘কনশানস’ জাহাজটিতে ২৫টি দেশের সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন। তাদের লক্ষ্য ছিল তথ্যের ওপর ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙা এবং গাজার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা।

এদিকে গাজাগামী ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজগুলো দখল করে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ আটক অধিকারকর্মীদের ইসরায়েলের একটি বন্দরে নিয়ে যাচ্ছে সে দেশের নৌবাহিনী। ফ্রিডম ফ্লোটিলার অধিকারকর্মীদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে আসা ‘আদালাহ-দ্য লিগাল সেন্টার ফর আরব মাইনোরিটি রাইটস ইন ইসরাইলের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দৃক, শহিদুল আলম যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দৃক বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।’

দৃকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার ফিলিস্তিনি সময় আনুমানিক সকাল ৬টার সময় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) গাজা থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল (২২০ কিলোমিটার) দূরে ফ্রিডম ফ্লোটিলার ‘কনশানস’সহ সর্বমোট ৮টি জাহাজকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘সহিংসভাবে দখল করে’ নেয় ইসরায়েলের বাহিনী। ভোরে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে, কনশানসের গাজাগামী যাত্রীরা একটি ইসরায়েলি সামরিক হেলিকপ্টারের আক্রমণের কথা জানান। ওই সময় ইসরায়েলি নৌবাহিনী একসঙ্গে থাউজেন্ড ম্যাডলিনস বহরের পালতোলা নৌকাগুলো দখল করে নেয়।

এদিকে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে তাকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এমন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ ছাড়া উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে আটকের ঘটনায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল তার নিজের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে লিখেছেন, ‘শহিদুল আলমকে মুক্তি দিন। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, যেন তার নিরাপদে বাংলাদেশে ফেরার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, শহিদুল আলমের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, তবে একই সঙ্গে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার প্রতিও। এটি কেবল এক মানবিক বিপর্যয় নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এক নৈতিক পরীক্ষাও। শহিদুল আলমসহ নৌবহরের সব যাত্রীর অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান প্রেস সচিব। 

আলোকচিত্রীর আটক করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে নিন্দা জানান। বিবৃতিতে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এই নৌযানগুলো গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, পানি এবং ওষুধসহ মানবিক সহায়তা বহন করছিল। ইসরায়েলের এই অমানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী কর্মকা-ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

এ ঘটনায় মুক্তি ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও। এ ছাড়া এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। এ ছাড়া ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা নৌযান থেকে বাংলাদেশি আলোকচিত্রীকে অপহরণ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রতিবাদ মিছিল করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে।