- এখনো সক্রিয় আগের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সিন্ডিকেট
- সিন্ডিকেটের নেপথ্যে জরুরি বিভাগের ইনচার্জ সুপারভাইজর হান্নান মুন্সি, আউটসোর্সিং সুপার ভাইজার জাহিদ হোসেন, হিসাবরক্ষক কাজী মুরাদ হোসেন, পরিচালকের পিএ মোহাম্মদ নাঈম হোসেন, ওয়ার্ড সরদার আমিনুল ইসলাম, ক্যাশিয়ার মামুন
- গজ, তুলাসহ হাসপাতালের পর্দা পর্যন্ত বিক্রি করতেও দ্বিধা করে না কেউ
- ১,৩৫০ শয্যার মধ্যে শিশুদের বরাদ্দ মাত্র ১৬০টি। নারীদের জন্য আরও কম মাত্র ১২০টি
- রোগী ভর্তি থেকে ট্রলি-হুইলচেয়ার প্রাপ্তিসহ প্রতি পদে পদে দিতে হয় টাকা
- দুর্নীতির দায়ে এরই মধ্যে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ১৫ জনকে
- দিনে প্রায় ৪ হাজার মানুষের চলাচলের জন্য রয়েছে মাত্র ৩টি লিফট
- সিন্ডিকেটের কাছে চিকিৎসকরাও অসহায়
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যখন দেশের সব খাতে সংস্কার চলছে তখনো পিছিয়ে স্বাস্থ্যখাত। এ খাতের অধিকাংশ স্থানেই এখনো সক্রিয় আগের সেই ফ্যাসিবাদী সিন্ডিকেট। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলো একপ্রকার জিম্মি সিন্ডিকেটের হাতে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণÑ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। এখানকার ওয়ার্ড মাস্টার থেকে শুরু করে সুপারভাইজর, নার্স, জরুরি বিভাগের ইনচার্জÑ আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে একটি ট্রলি পেতে হলেও তাদের দিতে হয় টাকা। বলা চলে, সোহরাওয়ার্দীতে রোগীদের পা ফেলতে হলেও টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ দুর্নীতিতে একেকজন হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তাদের অধিকাংশই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পেলেও এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন হাসপাতালজুড়ে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দায়িত্ব পাওয়া নতুন পরিচালক প্রায় ১৫ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলেও এখনো সিন্ডিকেটের একটি বড় অংশ সক্রিয় রয়েছে, যা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন খোদ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দিন। তাদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন বলেও দাবি তার। এ বিষয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। সিন্ডিকেট ভাঙতে অভিযুক্ত সবাইকে পর্যায়ক্রমে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে অধিদপ্তর।
রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের ওষুধপত্র থেকে থেকে শুরু করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিক্রির মূল মাস্টারিতে রয়েছেন ওয়ার্ড মাস্টার জাকির হোসেন উকিল, ওয়ার্ড মাস্টার সাইদুল ইসলাম (লিটন) এবং ওয়ার্ড মাস্টার রেজাউল। তাদের নেপথ্যে রয়েছেন ওয়ার্ড সরদার আমিনুল ইসলাম। নিজেদের স্বার্থে গজ, তুলাসহ হাসপাতালের পর্দা পর্যন্ত বিক্রি করতে তারা দ্বিধা করেন না। হাসপাতালটির আউটসোর্সিং সুপারভাইজর জাহিদ হোসেন প্রতি মাসে জরুরি বিভাগে যারা ডিউটি করেন তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে মাসোহারা নেন।
ইমার্জেন্সিতে ভর্তিযোগ্য রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে এ জাহিদের বিরুদ্ধে। এমনকি সিট দেওয়ার নাম করে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ২ হাজার করে টাকা নেন বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মী। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, এ সুপারভাইজর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই হাসপাতালকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন। যেসব রোগী সিটের জন্য টাকা দেয় না তাদের সিট নেই বলে বিভিন্ন ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। বিনিময়ে ওই ক্লিনিক থেকে নেন বড় অঙ্কের কমিশন।
অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে নার্স নেতা আসমার বিরুদ্ধেও। রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দিতেও তিনি টাকা আদায় করেন জানিয়ে হাসপাতালের শিশু বিভাগের এক চিকিৎসক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখানকার নার্সসহ ছোট পদে যেসব কর্মী রয়েছেন তাদের একটা শক্ত সিন্ডিকেট রয়েছে। যে সিন্ডিকেটের কাছে আমরা চিকিৎসকরাও অসহায়। তারা আমাদের কোনো নির্দেশনাই শুনে না। শুধু রোগীরা নয়, তাদের কাছে আমরা নিজেরাও অসহায়।’
এসব সিন্ডিকেটে আর কারা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে জরুরি বিভাগের ইনচার্জ সুপারভাইজর হান্নান মুন্সি, হিসাবরক্ষক কাজী মুরাদ হোসেন, পরিচালকের পিএ মোহাম্মদ নাঈম হোসেন, ক্যাশিয়ার মামুন এরা মিলে এই সিন্ডিকেট চালাচ্ছে।’
যার সত্যতা মিলল আউটসোসিংয়ে নিয়োগ পাওয়া এক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, সামান্য এ চাকরির জন্য ক্যাশিয়ার মামুন স্যারকে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। তবে অন্যরা আরও কমেই চাকরি পেয়েছে বলে শুনেছি। কেউ কেউ নাকি ১ লাখেই চাকরি পেয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়ার্ড মাস্টার নাঈম হোসেন, পরিচালকের ড্রাইভার রেজাউল করিম, মুসা শিকদার এরা টাকা সংগ্রহ করে ক্যাশিয়ার সাহেবের কাছে জমা দিতো। বিশেষভাবে লোক নিয়োগ দিলে যারা ইমার্জেন্সি ও আউটডোরে ডিউটি করবে তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর যারা ওয়ার্ডে ডিউটি করবে তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এর বাইরেও এসব বিশেষ কর্মচারী যারা আউটডোর ও জরুরি বিভাগে ডিউটি করবে তাদের প্রতি মাসে জনপ্রতি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় ওয়ার্ড মাস্টার ও সুপারভাইজরদের। এসব কর্মচারী রোগীদের থেকে জোর করে টাকা আদায় করেন। একটা রোগী ভর্তি করলে এক থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়। হুইলচেয়ার ও ট্রলিতে রোগী উঠালেও দিতে হয় টাকা। এ ছাড়া বেড পেতে হলে ৫০০-১০০০ টাকা ওয়ার্ডের কর্মচারীদের দিতে হয়। এতে যেখানে বিনা মূল্যে রোগ নিরাময়ের আশায় রোগীরা প্রতিদিন ভিড় করে সেখানে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
তবে নিজেদের ওপর আসা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ওয়ার্ড মাস্টার সাইদুল ইসলাম লিটন ও জাকির হোসেন উকিল। রূপালী বাংলাদেশকে তারা বলেন, ‘সব হাসপাতালেই ওয়ার্ড মাস্টারদের একটা দায়িত্ব থাকে। আমরা সেই দায়িত্বই পালন করি শুধু। এর বাইরে কে কী করল, তা আমরা জানি না।’
একই কথা বলেন ক্যাশিয়ার মামুনও। তিনি বলেন, ‘এ হাসপাতালে সিন্ডিকেট আছে, এটা সত্য। কিন্তু এ সিন্ডিকেটে আমার কোনো অংশীদারিত্ব নেই। আউটসোর্সিং বা অন্য কোনো ইস্যুতে আমি দুর্নীতিতে জড়িত নই।’
এদিকে হাসপাতালটিতে আগের ফ্যাসিবাদী সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে স্বীকার করেছেন খোদ হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দিন। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি আমরা ১৫ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এখনো অনুসন্ধান চালাচ্ছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাব, তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।’
আরও যত অনিয়মের অভিযোগ :
নিয়ম অনুসারে কোনো হাসপাতালে অন্তত ৪৫ ভাগ শয্যা নারী ও শিশু রোগীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। কিন্তু শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১ হাজার ৩৫০ শয্যার হলেও এখানে শিশু রোগীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১৬০টি শয্যা। নারী রোগীর জন্য রয়েছে আরও কম মাত্র ১২০টি। বাকি শয্যাগুলোয় রোগীর চাপ পর্যাপ্ত থাকলেও নেই পর্যাপ্ত কনসালটেন্ট। গাইনি, শিশু, সার্জারি ও মেডিসিন বিভাগের ৩ শিফট মিলিয়ে অন্তত ৯০ জন কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন হাতেগোনা কয়েকজন।
তারাও ডিউটি করেন মাসে মাত্র ৩ থেকে ৪ দিন। তবে বেশির ভাগ বিভাগেই রয়েছে পদের অতিরিক্ত চিকিৎসক। যারা কোনো কাজ না করেই মাসের পর মাস কাটিয়ে দিচ্ছেন। ফলে এখানে আসা অধিকাংশ রোগীই পায় না বিশেষজ্ঞ সেবা। অধিক গুরুতর রোগীদের এখানে ভর্তি না করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এসব কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহান কর্মরত চিকিৎসকরাও। যারা চিকিৎসাকেই জীবনের ব্রত হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এ ছাড়া আতঙ্কের বিষয় হলোÑ হাসপাতালটিতে বাতাস চলাচলের জায়গায় বানানো হয়েছে ‘লিনেন গোডাউন’। যা থেকে আবারও আগুন লাগার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। হাসপাতালটিতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। রাত হলে কেবিন বা পেয়িং বেডগুলোয় বহিরাগতদের আনাগোনায় আতঙ্কে থাকতে হয় রোগী ও স্বজনদের।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মনোমুগ্ধকর নির্মাণশৈলী দেখলে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। শক্ত ভিত্তি আর দৃষ্টিনন্দন ভবন হলেও পুরো হাসপাতালজুড়ে নেই প্রতিবন্ধী মানুষ বা রোগীবহনকারী স্ট্রেচারের জন্য কোনো র্যাম্প। হাসপাতালের চার কোনায় চারটি সিঁড়ি থাকলেও নেই পর্যাপ্ত লিফট। দিনে প্রায় ৪ হাজার মানুষের চলাচলের জন্য রয়েছে মাত্র ৩টি লিফট। বছরখানেকের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে আইসিইউ-২। নতুন করে চালু করার কথা থাকলেও তা না করে এটিকে বানানো হয়েছে এইচডিও। ফলে গুরুতর রোগীদের প্রয়োজন থাকলেও দেওয়া যাচ্ছে না আইসিইউ সেবা। শুধু তাই নয়, হাসপাতালজুড়ে নতুন কেবিন হলেও লবিংয়ের জোর না থাকলে পাওয়া যায় না সিটও। ফলে রোগীদের ভোগান্তির অপর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির একেকটি লিফটের সামনে রোগী ও তাদের স্বজনদের লম্বা লাইন দেখা যায়। জরুরি বিভাগের পেছনে লিফটের সামনে মিনিটে মিনিটে জড়ো হয় ২০-৫০ জন রোগী ও তাদের স্বজনরা। রোগী, রোগীর স্বজন, চিকিৎসকসহ বর্জ্য বহনকারী ট্রলি, ময়লা-আবর্জনার ঝুড়ি, খাবারের ট্রলি এমনকি রোগীর স্ট্রেচারও নিয়েও আয়ারা দাঁড়িয়ে আছেন একই লাইনে।
লিফটের ভেতরে কোনো ফ্যান তো দূরে থাক বাতাস চলাচলেরও নেই বাড়তি সুবিধা নেই। ফলে মানুষের শরীরের গন্ধের পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনার গন্ধে লিফটে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। হাসপাতালটির আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন বলেন, আইসিইউর সামনে অপেক্ষা করা যতটা কষ্টের তার চেয়ে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে লিফটে ওঠা-নামা করতে গিয়ে। এত সুন্দর একটা হাসপাতাল অথচ লিফটে উঠলে মনে হয় ময়লার ভাগাড়ে উঠলাম।
ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টার থাকলেও থাকে না কোনো চিকিৎসক: হাসপাতালটির ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টার বা ওসেক নামে জরুরি সেবা চালু থাকলেও নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ইন্টার্ন চিকিৎসক আর মেডিকেল অফিসার দিয়ে দিনের অধিকাংশ সময় এখানে চিকিৎসা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির এক চিকিৎসক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি নিজে বাইক এক্সিডেন্ট করলে লোকজন এখানে নিয়ে আসে। পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আমাকে চিকিৎসা দিতে আসেননি। অথচ জরুরি বিভাগে চারজন করে কনসালটেন্ট থাকার কথা।
মাঝেমধ্যে একজন থাকেন। যারা আবার ২-৩ ঘণ্টার বেশি সময় দেন না। আমি নিজে হাসপাতালটির চিকিৎসক হয়েও দেখেছি অনেক গুরুতর রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা মেডিকেলসহ অন্য বড় হাসপাতালে। এমন অবস্থায় তো একটা হাসপাতাল চলতে পারে না। এখানকার জরুরি বিভাগে কোনো শিশু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় না। সরাসরি ইনডোরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরও সাধারণ পোশাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সেবা নিতে এসে বিব্রত হয়েছেন। তার পরিদর্শনের সময় কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাননি উল্লেখ করে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আমরা হাসপাতালটিতে আকষ্মিক পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। কিছু অভিযোগ পেয়েছি। যেগুলোর বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। বাকিগুলো নেবে বলে আমরা আশা করছি।’
হাসপাতালেই ধূমপান রোগীর স্বজনদের: হাসপাতালটির তৃতীয়তলায় দুই ভবনের মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় যেখানে বাতাস চলাচলের জন্য রাখা প্রয়োজন সেখানে গোডাউন করে হাসপাতালের সব লিনেনের পর্দা জড়ো করে রাখা হয়েছে। এর আগে আগুন লাগার ঘটনায় আতঙ্কিত হাসপাতালটির কর্মীরা রুমটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওয়ার্ডবয় বলেন, ৬ বছর আগে এরকমই একটি স্টোর রুম থেকে হাসপাতালে আগুন লাগে। এখানে অনেক রোগীর স্বজনরা রাতের বেলায় লুকিয়ে সিগারেট খেতে আসে। লিনেন কাপড়ের গোডাউন হওয়ায় যেকোনো সময় আবারও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।
রাতে নেই নিরাপত্তার বালাই :
রাতের বেলায় নিরাপত্তার কোনো বালাই নেই। এমন অভিযোগ করে হাসপাতালটির ৬ তলার একটি পেয়িং বেডের এক রোগীর মেয়ে বলেন, সারা দিন রোগী নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে রাতের বেলায় যখন বিছানায় গা এলিয়ে দেই তখন দেখতে পাই বিছানার নিচে একজন অপরিচিত লোক বসে আছে। চারপাশে তাকিয়ে দেখি আরও কয়েকজন অপরিচিত লোক ঘোরাফেরা করছে। রোগীর চিকিৎসা করাব না নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করব, তা নিয়ে আতঙ্কিত রাত কাটাতে হচ্ছে।
একই অভিযোগ হাসপাতালটির কেবিন ব্লকের কয়েকজন রোগীর স্বজনেরও। তারা জানান, রাত হলে গেটে তালা দেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে অচেনা লোকদের কথা বলতে দেখা যায়। যারা এখানে চিকিৎসাও নিচ্ছেন না বা কোনো রোগীর স্বজনও না। কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা আরও জোরদার করার তাগিদ তাদের।
জানা যায়, ১৩৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও বেশির ভাগ সময়ই এখানে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি থাকে। প্রতি রোগীর সঙ্গে যদি একজন করেও সহযোগী থাকে তাহলে প্রায় তিন হাজার। এর বাইরে নতুন ৭০টি কেবিনসহ পুরাতন কেবিন রয়েছে আরও ১৮টি। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালটির সার্বিক পরিচালন ব্যবস্থা নিয়েও। এখানে সর্বত্র অনিয়ম ছড়িয়ে আছে বলে অভিযোগ করেন হাসপাতালে কর্মরত একজন।
অবগত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর :
এসব অনিয়মের বিষয়ে অবগত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাই ছদ্মবেশে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেন বলে জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের একটা কঠিন সিন্ডিকেট থাকে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সেটি বেশি। আমি নিজে কয়েকবার ছদ্মবেশে গিয়ে এর প্রমাণ পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। ভবিষ্যতেও এটি চলমান থাকবে। সংস্কার কার্যক্রম যখন চলছে তখন সব খাতেই সংস্কার হবে। কোনো হাসপাতালেই আর সিন্ডিকেট ব্যবস্থা থাকবে না।’