প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপ। গতকাল সোমবার শিক্ষার্থীদের একপক্ষ দ্রুত ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে লংমার্চ করে রাজধানীর শিক্ষা ভবনসংলগ্ন রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত টানা অবস্থানের ঘোষণা দিলেও সন্ধ্যায় সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। আর অপরপক্ষ কলেজের স্বকীয়তা রক্ষা ও উচ্চ মাধ্যমিক বহালের দাবিতে মিছিল এবং রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ করেছেন।
এ ছাড়াও কলেজ ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের এই দুপক্ষের হাতাহাতির একপর্যায়ে কলেজের এক শিক্ষককে শারীরিক হেনস্তার পাশাপাশি কলেজের শিক্ষক লাউঞ্জ ভাঙচুর করে দ্রুত চূড়ান্ত অধ্যাদেশ চাওয়া শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় আজ সারা দেশে সরকারি কলেজ-মাদ্রাসা অন্যান্য অফিসে দিনব্যাপী সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালোব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতি।
কলেজের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে গতকাল সকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য সকালের ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে দুই গ্রুপের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষা ভবনে সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী কিছু ছাত্র কলেজের উপাধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে। পরে শিক্ষার্থী কলেজ লাউঞ্জে আক্রমণ ও ভাঙচুর চালায়। পরবর্তীতে পুলিশ এসে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের উদ্ধার করে।
তবে শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের ধস্তাধস্তির পর শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়ান। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষক ফরহাদ রেজা নামের এক শিক্ষার্থীকে ধরে শিক্ষক কমনরুমে নিয়ে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন এবং পরে ওই শিক্ষার্থীকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে আনেন।
পরে শিক্ষার্থীদের একাংশ ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক বহাল ও কলেজের স্বকীয়তা রক্ষার দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের প্রকাশিত খসড়া নিয়ে তারা আপত্তি তোলেন। ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ হাসান বলেন, ঢাকা সেন্টাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশের যে খসড়াটা দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় উঠে যেতে পারে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় আমাদের ঐতিহ্য। তা ধরে রাখতেই আমরা বিক্ষোভ করছি। অধ্যাদেশের খসড়ায় উচ্চমাধ্যমিক শাখা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়নি, তবে এই মডেলের উচ্চ মাধ্যমিক বেশিদিন রান করবে না। আমরা সেই জায়গা থেকে প্রতিবাদ করতে এসেছি।
শিক্ষার্থীদের অপরপক্ষ রাজধানীর শিক্ষা ভবন সংলগ্ন রাস্তায় অবস্থান করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারিসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন। ঢাকা কলেজের সঙ্গে শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে যোগ দেন। তারা আগামী ৩ দিনের মধ্যে অধ্যাদেশ জারির প্রতিশ্রুতি ছাড়া তারা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দিলেও সন্ধ্যায় শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলন স্থগিত করেন।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় শিক্ষা ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তানজিমুল আবির বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন তাদের অধ্যাদেশ জারি করতে আর কী কী প্রশাসনিক ধাপ বাকি আছে। তারা ৬ হাজারের বেশি মতামত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন, সেগুলো সংকলন করা হচ্ছে। এরপর তারা অংশীজনদের সাথে পরামর্শ সভার আয়োজন করবেন। এই মুহূর্তে চাপের মুখে অধ্যাদেশ দিয়ে দেওয়া তাদের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে করা হয়ে উঠবে না। তাই আমরা আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কিছুদিন সময় দিচ্ছি। তবে তা কতদিন সেটি সবার সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
আজ সারা দেশে বিসিএস শিক্ষকদের কর্মবিরতি
ঢাকা কলেজের শিক্ষক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের ওপর দুষ্কৃতকারীরা হামলা এবং টিচার্স লাউঞ্জ ভাঙচুরের প্রতিবাদে আজ সারা দেশের সব সরকারি কলেজ, সরকারি মাদ্রাসা ও অন্যান্য অফিসে দিনব্যাপী সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালোব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতি। গতকাল সমিতির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল ও সদস্য সচিব ড. মো. মাসুদ রানা খান এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দিয়েছেন। তারা এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাঠামো প্রস্তাব করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে অংশীজনদের মতামত চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ই-মেইলে ও সরাসরি মতামত সংগ্রহ করা হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন