- পর্দার আড়ালেই রয়ে যায় আসল কারিগররা
- মানবপাচারের মূল টার্গেট রোহিঙ্গারা
- গত কয়েক মাসে শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও বাংলাদেশিকে উদ্ধার
- টেকনাফের অন্তত ২০ পয়েন্ট দিয়ে মাদকের বদলে মানবপাচার চলছে
- মানবপাচারের পাশাপাশি মিয়ানমারে বেড়েছে পণ্যের পাচারও
- মানুষ ও পণ্যের বদলে মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা, আইসসহ অস্ত্র
- পাচারকারীদের সঙ্গে কাজ করছে আরাকান আর্মি
- ২০২৪ সালে পাচারের শিকার ৬৫৭ জন রোহিঙ্গার হদিস নেই
- কক্সবাজারে মানবপাচার আইনে ৪৬০টি মামলা চলমান। নিষ্পত্তি মাত্র ১৬টির
- বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তে রয়েছে শতাধিক পাচার পয়েন্ট
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত টেকনাফ উপজেলায় সম্প্রতি মানবপাচারের হিড়িক চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন বয়সি বাংলাদেশি নারী-পুরুষদের পাচারের মাধ্যমে ওপার থেকে আসছে ইয়াবা-আইসের মতো জীবনধ্বংসকারি মাদক। পাশাপাশি খাদ্যপণ্য, নির্মাণ সামগ্রীর বিনিময়েও মিয়ানমার থেকে আসছে মাদকের বড় চালান।
কক্সবাজারে গত কয়েক মাসে পাচারকারীদের কয়েকটি দুর্গম পাহাড়ি আস্তানা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে উদ্ধার হয়েছেন শতাধিক কিশোর, পুরুষ ও নারী। এ ছাড়াও মিয়ানমারে পাচারের সময় উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য ও নির্মাণ সামগ্রী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিই মূলত এসব চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। যার বিপরীতে সাগরপথে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে ভয়ংকর মাদক। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তে রয়েছে শতাধিক পাচার পয়েন্ট।
টেকনাফে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে মাদকসহ এসব খাদ্যপণ্য ও নির্মাণ সামগ্রী পাচারের সময় অনেকে আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল দালাল সিন্ডিকেট। পাশাপাশি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে মানবপাচার। প্রায়ই বিজিবি ও কোস্টগার্ডের অভিযানে পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করা হলেও মূল কারিগররা রয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্দার আড়ালের মূল হোতাদের গ্রেপ্তারে তৎপর হলেও অদৃশ্য কারণে তারা থেকে যায় অধরা। এসব প্রভাবশালীরাই বর্তমানে টেকনাফ হয়ে মানবপাচার-মাদকের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।
মানুষের বদলে আসছে মাদক : হটস্পট টেকনাফ
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিজিবি ও র্যাবের যৌথ অভিযানে গোয়েন্দা তথ্য এবং ভুক্তভোগীদের বর্ণনার ভিত্তিতে বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকা থেকে চারজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। এরপর রাজাছড়া পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও ৩৭ জন উদ্ধার করা হয়। দমদমিয়া বিওপি এলাকা থেকে চারজনকে উদ্ধার করে মোট ৮৪ জনকে পাচারকারীদের হাত থেকে মুক্ত করা হয়। এ সময় কয়েকজন পাচারকারী দালাল আটক হলেও অধিকাংশ দালাল রয়ে গেছে অধরা।
এসব অপরাধে যারা জড়িত তারা মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে গভীর যোগসূত্র রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, মাদক ও মানবপাচারের অর্থ চলে যাচ্ছে আরাকান আর্মির কাছে। এ ছাড়াও উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা তরুণী-কিশোরীদের পাচার করে বিনিময়ে লাখ লাখ পিস ইয়াবা ও আইস আমদানির ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসব মাদকের অনেক চালান আটক হচ্ছে। পাচারের সময় অনেক রোহিঙ্গা ভিকটিমকেও উদ্ধার করা হয়েছে, আটক হয়েছে দালালেরাও। কিন্তু পর্দার আড়ালে থেকে গেছে আসল ভিলেন।
সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের নাফনদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, পৌর সভা, টেকনাফ সদর, বাহারছড়া, হ্নীলা, হোয়াইক্যংসহ নাফনদী ও সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন মৎস্যঘাট এখন মানবপাচারের হটস্পট। নৌকায় করে মানুষের বদলে ফিরতে পথে মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা-আইসের বড় চালান।
টেকনাফ উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পাচারের সময় প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষসহ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় দালালকে আটকের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। সম্প্রতি শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রী পাড়া থেকে ৬ মানবপাচারকারী আটক করেছে বিজিবি। এ ছাড়াও টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জুম্মা পাড়ার গভীর জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে বন্দি রাখা নারী ও শিশুসহ আটজনকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। একই দিন বাহারছড়া গহীন পাহাড় থেকে মালয়েশিয়াগামী তিনজন ভিকটিমসহ তিন দালালকে আটক করেছে কোস্টগার্ড।
স্থানীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেকনাফের অন্তত বিশটি পয়েন্ট দিয়ে মাদকের বদলে মানবপাচার চলছে দেদারসে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন ছেঁড়া দ্বীপ, দক্ষিণ পাড়া ঘাট, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া, গোলারচর, মিস্ত্রি পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, পশ্চিম পাড়া ঘাট, টেকনাফ সদরের মহেশ খালিয়া, তুলাতুলী, রেঙ্গুলবিল ঘাট, মিঠা পানির ছড়া, হাবিব ছড়া ঘাট, সাবরাংয় ইউপির কচুবনিয়া, কাঁটা বনিয়া, বাহাড় ছড়া, মুন্ডার ডেইল, হাদুর ছড়া ঘাট, কুরাইজ্যা পাড়া ঘাট, টেকনাফ পৌর সভার নাইট্যং পাড়া, বড়ইতলী, কেরুনতলী, দমদমিয়া, মোচনী, লেদা, আলীখালি, ফুলের ডেইল, উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া নোয়াখালী পাড়া, জুম্মা পাড়া, হাজাম পাড়া, কচ্ছপিয়া, বড় ডেইল ঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচার ও ইয়াবা প্রবেশ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সূত্র জানায়, মানবপাচারে লিপ্ত রয়েছেন প্রায় অর্ধশত দালাল। তাদের রয়েছে কয়েকজন গডফাদার। যাদের সহায়তায় রয়েছে দুই শতাধিক লোকজন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এর আগে স্থানীয়রা অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিলেও সরকারের জনসচেতনামূলক প্রচারে এখন তারা সেই ঝুঁকি নিচ্ছে না। তারা সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে অবৈধ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছে শুধু রোহিঙ্গারা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, দালালেরা রোহিঙ্গাদের প্রথমে ১০ হাজার টাকায় হাত বদল করে। ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে টেকনাফ পৌর এলাকায় নিয়ে এসে ভিন্ন দালালের কাছে রাখে। পরে তাদের আবার দশ হাজার টাকায় আসল দালালের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর তাদের ছোট নৌকায় তুলে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন সাগর থেকে অন্তত ৫ কিলোমিটার গিয়ে বড় বোটে তুলে দেওয়া হয়। সেই বোটই রাতের মধ্যেই মিয়ানমারে পৌঁছায়। পরে অন্য জাহাজে করে তাদের আরেকটি শক্তিশালী মানবপাচার সিন্ডিকেট মালয়েশিয়া নিয়ে যায়। এভাবে প্রতিজন থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, পাচারের উদ্দেশ্যে আনা নারী-পুরুষদের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসহ বাহারছড়া বিভিন্ন ঘাটের সমুদ্রসৈকত এলাকার পার্শ্ববর্তী বাড়ি ও ঝোপ-জঙ্গলে এনে জড়ো করে রাখা হয়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে তাদের ছোট ছোট ফিশিং বোটের মাধ্যমে মিয়ানমার নিয়ে যাওয়া হয় এবং মিয়ানমার থেকে ফেরার সময় মাদকের বড় চালান নিয়ে ভোরে মাছ আহরণ ঘাটে ভিড়ে। সেখান থেকে কৌশলে মাদক খালাস করে কারবারিরা।
পাচারের পর মিয়ানমারে এসব রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীর ভাগ্যে কী জুটছে তা আর জানা যাচ্ছে না। সেখানে নিয়ে দ্বিতীয় দফা মুক্তিপণ দাবি করে ফিরে আসা অনেকের অভিযোগ। মিয়ানমার থেকে গভীর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া প্রবেশ করে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
সম্প্রতি দালালের জিম্মি দশা থেকে থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা উপজেলার সাবরাং ইউপির ২নং ওয়ার্ডের ছৈয়দ আলমের ছেলে মোহাম্মদ জুসেফ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাকে একটি মানব পাচারকারী দালাল সিন্ডিকেট জোর পূর্বক মালয়েশিয়া পাচার উদ্দেশে টেকনাফ সাবরাং থেকে নিয়ে যায় পরে ৩ লাখ টাকায় দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে অনেক কষ্টে পনের দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে আমাকে ফিরিয়ে আনা হয়।
কোস্টগার্ডের অভিযানে আটক হওয়া তরুণী হামিদা বেগম জানান, আমার মা বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী এক রোহিঙ্গা ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে বিয়ে দেন। আমি সাগর পথে তার কাছে যাওয়ার জন্য রওনা দেই। তিন দিন পাহাড়ে বন্দি থাকার পর ধরা পড়ি।
টেকনাফ কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার সিয়াম উল হক বলেন, মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়াগামী মানবপাচারকারী ফিশিং ট্রলার মিয়ানমার গিয়ে আসার সময় মাদক নিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের কাছে খবর আছে। এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান। তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য পেলে অভিযান পরিচালক করা হবে।
টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) জায়েদ নুর বলেন, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত মাদক কারবারি ও দালালদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। স্থানীয় মানব পাচারকারী দালালদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। এই চক্রকে ধরতে সহসাই আমরা অভিযান পরিচালনা করব।
পাচারের টার্গেট যখন রোহিঙ্গারা
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্যমতে, ২০১৮ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মোট এক হাজার ৪৫৪ জন পাচার ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনের শিকার ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫০২ জন পুরুষ, ৫৫ জন কিশোর, ৭৮৯ জন নারী ও ১০৮ জন কিশোরী। শনাক্ত ৪১০ জন বিদেশে পাচার হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ৫৩০ জনকে জীবিকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৮০ জন পুরুষ এবং ৩৫০ জন নারী উপকারভোগী অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
এ ছাড়া কক্সবাজারে মানবপাচার আইনে ৪৬০টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ২৫১টি, ২০২০ সালে ১৫টি, ২০২১ সালে ১২টি, ২০২২ সালে ১৬টি, ২০২৩ সালে ১৯টি, ২০২৪ সালে ১৮টি ও চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৬টি। কেবল ২০২৪ সালে পাচারের শিকার ৬৫৭ জন রোহিঙ্গার হদিস নেই। তারা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, সেই তথ্যও নেই।
পণ্যের বদলেও আসছে মাদক
কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা দিয়ে মিয়ানমারে সম্প্রতি বেড়েছে পণ্যের চোরাচালান। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নাফ নদ, খালপথ ও গোপন ট্রেইলে এসব পণ্য পাচারের ঘটনা ঘটছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আটা, সিমেন্ট, সার, ওষুধ, গৃহস্থালি পণ্য, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম। পাচারকারীরা এসব পণ্য রাতের অন্ধকারে ট্রলার, নৌকা কিংবা হেঁটে সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সীমান্তে দায়িত্বরত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব পণ্য পাচার করছে চোরাকারবারিরা। উল্টো পথে মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ ও বিদেশি অস্ত্র।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি রাতেই ছোট-বড় অনেক ট্রলার নাফ নদ পার হয়ে মিয়ানমারে যায়। প্রতিটি ট্রলারে গড়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার পণ্য থাকে। শুধু এক রাতেই যদি ১০টি ট্রলারও পার হয়, তাতেই কোটি টাকার বেশি পণ্য চলে যায় মিয়ানমারে। টেকনাফ সীমান্ত এমন একটি এলাকা যেখানে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জনমানবহীন পাহাড়ি এলাকা ও নদীপথের ছড়াছড়ি যা পাচারকারীদের জন্য আদর্শ সুযোগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউপির কাটাখালী, উলুবনিয়া, খারাইঙ্গাঘোনা, হোয়াইক্যং বাজারপাড়া, লম্বাবিল, তেচ্ছিব্রিজ, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলা ইউপির মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, চৌধুরীপাড়া, লেদা, জাদীমুরা ও বরইতলী এলাকার চোরাইপথে প্রচুর পণ্য পাচার হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট শাকিব মেহবুব জানান, অবৈধ চোরাচালান রোধে কোস্টগার্ড নাফ নদসহ দায়িত্বপূর্ণ উপকূলীয় এলাকায় ২৪ ঘণ্টা টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গত ১ জুন থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারে পাচারকালে ৩০৪ দশমিক ৮৬ গ্রাম স্বর্ণ, ৫১৫ বস্তা ইউরিয়া সার, ১ হাজার ২৮০ বস্তা বাংলাদেশি সিমেন্ট, ১১৫ টন প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়। এ সময় ১৫টি বোট জব্দ করা হয়। এ সংক্রান্ত ১৪টি মামলায় ১০২ জন পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
আরাকান আর্মির সংযোগ
মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি সশস্ত্র সহিংস ঘটনার মাধ্যমে রাখাইন (আরাকান) রাজ্যকে জান্তাশাসিত মিয়ানমার থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।এরপর থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে করে রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি পড়েছে অর্থকষ্টে। নিত্য পণ্যসামগ্রী মিয়ানামার থেকে না পাওয়ায় বাংলাদেশের চোরকারবারিদের সঙ্গে তারা হাত মিলিয়েছে। তাদের নিত্যপণ্যের জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশের চোরাচালানিরা। যার বদলে ওইপার থেকে আসছে মাদক।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। বিজিবি কক্সবাজারের রামু সেক্টর সদর দপ্তরের সেক্টর কমান্ডার (উপমহাপরিচালক) কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক চোরাচালানে সহযোগিতা করছে দেশটির রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক চোরাচালান বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিচ্ছে দেশটির রাখাইন রাজ্যের দখলদার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এসব মাদকের প্রায় ৮০ ভাগই এখন সমুদ্রপথে দেশের ভেতরে ঢুকছে বলে তিনি জানান।