বাড়িভাড়া ও ভাতা বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবি আদায়ে আজ শুক্রবার দুপুর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে বসছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। আন্দোলনের পঞ্চম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু হবে। অনশন করতে করতে আমরা এখানেই মৃত্যুবরণ করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা যাব না, আমাদের লাশ এখান থেকে যাবে।’
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এ বিষয়ে দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “অনেক রাজনৈতিক নেতা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে আশঙ্কার কথা বলেছেন। ‘সুযোগসন্ধানীরা’ এই সুযোগ নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। শিক্ষকদের দাবি ‘মেনে নিতে’ সেই সব রাজনৈতিক নেতা সরকারকে ‘চাপ’ দিচ্ছেন বলে ‘আশ্বস্ত করেছেন’। এ অবস্থায় আজকের জন্য (বৃহস্পতিবার) যমুনা অভিমুখী কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
একই সঙ্গে ‘অব্যাহত কর্মবিরতির’ মাধ্যমে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এই শিক্ষক নেতা। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি ছিল তাদের, তবে শিক্ষক নেতারা সচিবালয়ে বৈঠক করতে যাওয়ায় সেটি বিলম্বিত হয়। সচিবালয়ে বৈঠক শেষে বেলা সোয়া ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফিরে দেলাওয়ার হোসেন আজিজী প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টা এর সমাধান করতে পারবেন না। আজকের আলোচনার পরে যদি মনে চায় সমাধান করেন।’
আর বৈঠক শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেছেন, বাড়িভাড়া ৫ শতাংশের বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়। শিক্ষকেরা রাজি হলে ১ নভেম্বর থেকেই এই ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধি বাস্তবায়ন সম্ভব। সরকার শিক্ষকদের এমন কোনো আশ্বাস দিতে চায় না, যা পরবর্তীকালে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে গত রোববার থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সেদিন সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হলেও দুপুরে পুলিশের অনুরোধে তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে চলে যান। ওই দিন দুপুরে শিক্ষকদের একটি অংশের ওপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে, জলকামানের পানি ছিটিয়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়। শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে সোমবার থেকে সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে তারা পদযাত্রা নিয়ে শহিদ মিনার থেকে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তবে হাইকোর্টের মাজার ফটকের সামনে পুলিশ পদযাত্রা আটকে দেয়। রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের পর সরে গিয়ে বাকি রাত শহিদ মিনারে অবস্থান করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে সরকার দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি না করলে এরপর ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী। ওই দিন প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর শাহবাগ মোড় ছেড়ে বিকেল ৫টার পর ফের শহিদ মিনারে অবস্থান নেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।