টানা ২১ বছর পর এসে এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সবচেয়ে খারাপ ফলের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এবার গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর প্রায় ৪১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। গত বছরের তুলনায় এ বছর এক ধাক্কায় পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। শুধু পাসের হার নয়, পাল্লা দিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বিপুল পরিমাণে কমেছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, তার আগের বছর পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৫২১ জন; কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৬৩ হাজার ২১৯ জনে। এবারের থেকে কম পাসের হার ছিল ২০০৪ সালে। ওই বছর এইচএসসিতে পাস করেছিলেন ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। ২০০৫ সালে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। এরপর এইচএসসিতে পাসের হার আর কখনো এর চেয়ে নিচে নামেনি। সেই হিসাবে গত ২১ বছরের মধ্যে এবারই পাসের হার সবচেয়ে কম।
গতকাল বৃহস্পতিবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। দুপুরে রাজধানীর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাস করল না, এটা তো কাক্সিক্ষত নয়। এই বিষয়টিতে আমরা একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি। তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, গলদ আছে, অবশ্যই গলদ আছে। সেই গলদের জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে। সেই দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, সেই দায়িত্ব বোর্ডের, সেই দায়িত্ব সবার।’
ফল নিয়ে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিলÑ পাসের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদ-। ফল ভালো দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। আজ আমি সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।’
চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪ এবং ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী। এবার এসএসসিতে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৪২ জনের মধ্যে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ১৬৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৩ হাজার ২১৯ জন। আলিমে ৮২ হাজার ৮০৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬২ হাজার ৬০৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ২৬৮ জন। কারিগরিতে ১ লাখ ৫ হাজার ৬১০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৬ হাজার ১৮৫ জন।
পাসে শীর্ষে মাদ্রাসা, নিচে কুমিল্লা বোর্ড
৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে কুমিল্লা বোর্ডে, ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা আর পিছিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।
ফলের তথ্য বলছে, ঢাকা বোর্ডে ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৫০ দশমিক ২০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ পাস করছে।
এবারও এগিয়ে মেয়েরা
সার্বিক ফল খারাপের মধ্যে এবারও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। এবার মেয়েদের পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ছেলেদের ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যেও এগিয়ে মেয়েরা। জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৬৯ হাজার ৯৭ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪, আর ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন।
২০২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাই ফেল
চলতি বছর দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৫। আর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। এবার মোট ৩৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৮৮।
বিদেশে কেন্দ্র ৮টি, পাসের হার ৯৫.৮৮
এ বছর দেশের বাইরে আটটি কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ২৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ২৭৯ জন। ফেল করেছেন ১২ জন। সেই হিসাবে গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৮। বিদেশের দুটি কেন্দ্রে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।