শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০১:১৫ এএম

নীল জলেই নিমজ্জিত ফাইল!

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০১:১৫ এএম

ছবি-রূপালী বাংলাদেশ (গ্রাফিক্স)

ছবি-রূপালী বাংলাদেশ (গ্রাফিক্স)

ঢাকঢোল পিটিয়ে বিগত আওয়ামী সরকার সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে (অফশোর) তৈরি করেছিল উৎপাদন অংশীদার চুক্তি (প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট-পিএসসি)। তখন ঢালাওভাবে বলা হয়েছিল, প্রায় ১৭টি বড় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোম্পানি কিনেছে পিএসসি। এর ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আহ্বান করা হয় দরপত্র। কিন্তু ওই পিএসসির আওতায় কোনো বিদেশি কোম্পানিই আগ্রহ দেখায়নি অনুসন্ধান কার্যক্রমে। দরপত্র জমা দেয়নি একটি কোম্পানিও।

এর জন্য নতুন করে পিএসসি তৈরি করার কথা থাকলেও বাক্সবন্দি হয়ে গেছে সব ফাইল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতে এই কার্যক্রমে প্রচ- আগ্রহ দেখালেও এখন যেন সব ঝিমিয়ে পড়েছে। বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ দূরের কথা, দেশীয় বাপেক্সকেও অফশোরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য কোনো কার্যক্রমের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আদৌ শুরু হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছিল গ্যাস উত্তোলনকারী বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন স্থগিত করায় এখন আর সেভাবে কাজ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে গ্যাসের অনুসন্ধান জোরদার করতে অনশোর (স্থলভাগে) অনুসন্ধান কার্যক্রমের পিএসসি চূড়ান্ত করে বিদেশি কোম্পানিকে স্থলভাগের খালি থাকা ব্লকগুলোয় কাজ দিতে চায় পেট্রোবাংলা।

বিশেষ করে পার্বত্যাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে চায় সংস্থাটি। তাই স্থলভাগের জন্য প্রায় তিন দশক আগে করা পিএসসি সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে নতুন খসড়া। সেটি চূড়ান্ত করতে ডিসেম্বরের মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ শেষ করতে চায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।

আগামী মার্চের মধ্যে পিএসসি চূড়ান্ত হলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে পেট্রোবাংলা বড় আকারে গ্যাসের অনুসন্ধান চালাতে চায়। পার্বত্যাঞ্চলে গ্যাস ব্লক ২২বিতে প্রথম অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে অফশোরে কেন কোনো কার্যক্রম নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

বিগত সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছিল, সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে তৈরি করা হয়েছে ইতিহাসের সেরা পিএসসি। কিন্তু ফলাফল এসেছে শূন্য। বিশ্বের কোনো একটি কোম্পানিও আগ্রহ দেখায়নি দেশের সমুদ্রসীমায় অনুসন্ধানে। একটি কোম্পানিও জমা দেয়নি দরপত্র। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, গভীর সমুদ্র থেকে স্থলভাগ পর্যন্ত পাইপলাইনের হুইলিং চার্জ, ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ), ডাটার দাম বেশি ধরা, পাশাপাশি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

এসব জায়গায় কাজ না করে নতুন করে স্থলভাগে পিএসসি তৈরির কাজ কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে উল্লেখ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘কোনো দেশই ডাটার জন্য আলাদা মূল্য রাখে না।

আমরা আসলে ডাটার ব্যবসা করব, নাকি গ্যাস দরকার, সেটা আগে চিহ্নিত করা দরকার। ডাটার দাম এত রাখার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। ডাটা বিনা মূল্যে করে দিলেও কোনো ক্ষতি নেই। আমাদের তো গ্যাস দরকার। এর জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সব করতে হবে। বিগত অনশোর পিএসসিতে আমরা দেখেছি ডাটার জন্য আলাদা মূল্য ধরা হয়েছিল।

এ ছাড়া আরও কয়েকটি বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো দরপত্র আবেদনে আগ্রহ দেখায়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি। এবার অফশোরের ক্ষেত্রেও যদি একই ঘটনা ঘটে, তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ভাবমূর্তি কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে এটি নিয়ে কাজ করলেও শেষ সময়ে এসে কোনো কথাই বলছে না। কেউ জানে না এটির সাম্প্রতিক কোনো তথ্য। নতুন সরকারের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে তারা। দায়সারা কাজ করার তাগিদ হয়তো তাদের নেই।

অফশোরের পিএসসির বিষয়ে জানা গিয়েছিল, ওই পিএসসিতে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছিল ব্রেন্ট ক্রুডের ১০ শতাংশ দরের সমান, যা আগের পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫ দশমিক ৬ ডলার ও ৭ দশমিক ২৫ ডলার স্থির দর ছিল। দামের পাশাপাশি বাংলাদেশের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়।

মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বাড়তে থাকে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে। কিন্তু এটি আকর্ষণীয় হওয়ার পরও কেন ওই পিএসসিতে কোনো কোম্পানি আগ্রহী হয়ে ওঠেনি জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে তেল-গ্যাসের বাজারে একটা অস্থির সময় যাচ্ছে।

এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের আমদানিতে বড় অঙ্কের অর্থ চলে যাচ্ছে সরকারের কোষাগার থেকে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা দেশীয় অনুসন্ধানে গুরুত্ব দিচ্ছি। জলভাগে অনুসন্ধানের জন্য বিগত সরকারের আমলে তৈরি হওয়া পিএসসিতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

কোনো কোম্পানিই দরপত্র জমা দেয়নি। তাই আমরা এটি নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেছিলাম। পেট্রোবাংলা ইতিমধ্যে আগের পিএসসি সংশোধন করে একটা খসড়া তৈরি করছে। কিন্তু চূড়ান্ত কিছু এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে আমরা একটা চূড়ান্ত পিএসসি পাব, যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ডাটার দাম সমন্বয় করা হতে পারে। তবে এটাও ঠিক, আমাদের হাতে সময় খুব কম। এত অল্প সময়ে এত বড় কর্মযজ্ঞ হয়তো শুরু করতে পারব, কিন্তু শেষ করা তো সম্ভব হবে না।

স্থলভাগে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দেশের বিদ্যমান সিলেট, নরসিংদী, নোয়াখালী, ভোলা ছাড়া অন্য কোন কোন এলাকায় গুরুত্ব দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে খোঁজ নিলে জানা যায়, স্থলভাগে বা অনশোরে বান্দরবানের থানচি, রুমা, আলীকদম ও কক্সবাজারের চকোরিয়া, আনোয়ারা ও কাপ্তাইয়ের কিছু অঞ্চল রয়েছে।

এসব অঞ্চলে গ্যাস পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আপনারা জানেন, ওই এলাকার অপর পাশে অর্থাৎ, ভারত অংশে বিপুল পরিমাণ গ্যাস পাওয়া গেছে। আমরা এর আগে অনুসন্ধান চালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সক্ষমতা না থাকায় সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই পেট্রোবাংলা বিদেশি তেল-গ্যাস কোম্পানিকে আনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, স্থলভাগে গ্যাসের অনুসন্ধান জোরালো করতেই পিএসসি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে সেটি চূড়ান্ত করা হবে। পেট্রোবাংলার লক্ষ্য মূলত অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে গ্যাস সন্ধানে জোর তৎপরতা চালানো। সেই লক্ষ্য থেকেই পার্বত্য অঞ্চলের ব্লক ২২বিতে প্রথম কাজ করা হবে। যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে মার্চে।

এ কাজের অগ্রগতি বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ হবে। আর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে শুরু হবে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়া। তবে অফশোরের পিএসসি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। হলে অবশ্যই আপনাদের জানানো হবে।

১৯৯৭ সালের পর আর স্থলভাগে গ্যাসের উৎপাদন বণ্টন চুক্তির হালনাগাদ করা হয়নি। বিদ্যমান পিএসসিতে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করার মতো তেমন কোনো লোভনীয় প্রস্তাব ছিল না। এ কারণে খসড়া প্রস্তাবে বেশ কিছু সংশোধন এনেছে পেট্রোবাংলা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!